ভারতের মেরঠে স্থাপিত হলো প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘অশ্বরোগমুক্ত অঞ্চল’

মেরঠ, ৪ জুলাই : ভারতের পশুস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে উত্তরপ্রদেশের মেরঠ ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত রিমাউন্ট ভেটেরিনারি কর্পস (আরভিসি) সেন্টার ও কলেজে দেশের প্রথম ‘অশ্বরোগমুক্ত অঞ্চল’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ৩ জুলাই বিশ্ব পশুস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউওএএইচ) এই স্বীকৃতি প্রদান করেছে।

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কঠোর বায়োসিকিউরিটি প্রোটোকল, পশুচিকিৎসা নজরদারি ও নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ভারতের খেলাধুলার ঘোড়াগুলি এখন বিদেশে যাত্রা ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে সক্ষম হবে। এর ফলে ভারতের অশ্বক্রীড়া ও ঘোড়া সম্পর্কিত বিভিন্ন খাত যেমন খেলা, প্রজনন এবং উচ্চমূল্যের অশ্ববাণিজ্য নতুন মাত্রা পাবে।

এই অঞ্চলে যে রোগসমূহ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়েছে সেগুলি হল ইকুইন ইনফেকশিয়াস অ্যানিমিয়া, ইকুইন ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইকুইন পিরোপ্লাজমোসিস, গ্ল্যান্ডারস এবং সুররা। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত ২০১৪ সাল থেকে আফ্রিকান হর্স সিকনেস মুক্ত।

এই সাফল্য অর্জনের পিছনে রয়েছে পশুপালন ও দুগ্ধ বিভাগ (কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ মন্ত্রক), প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ রিমাউন্ট ভেটেরিনারি সার্ভিসেস অধিদপ্তর, ইকুয়েস্ট্রিয়ান ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া(ইএফআই) এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্য পশুপালন বিভাগের ঘনিষ্ঠ সমন্বয়।

ডব্লিউওএএইচ-এর স্থলজ প্রাণী স্বাস্থ্য কোড অনুযায়ী ‘কম্পার্টমেন্টালাইজেশন’-এর ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পশু-উপপ্রজাতিকে স্বাস্থ্যগতভাবে পৃথক রাখা ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়।

ইডিএফসি-র পরিচালনা সম্পূর্ণরূপে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর অনুযায়ী হচ্ছে। তাতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ও নির্মূলের নির্দেশিকা, কীটনাশক ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, কঠোর শারীরিক নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি, পশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও টানা নজরদারি ব্যবস্থা।

এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ভারতের বিজ্ঞানভিত্তিক পশুস্বাস্থ্য নীতিকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করেছে এবং নিরাপদ বাণিজ্য ও অশ্বক্রীড়ার মতো নবীন খাতগুলিতে ভারতের অবস্থানকে মজবুত বানিয়েছে। পাশাপাশি, এই একই ‘কম্পার্টমেন্টালাইজেশন’ পদ্ধতি এখন মুরগির খামার খাতে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অত্যন্ত রোগজীবাণুযুক্ত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা(এইচপিএআই) মুক্ত অঞ্চল গঠনের মাধ্যমে পোলট্রি পণ্যের নিরাপদ রপ্তানি সম্ভব হবে।

ভারতের এই উদ্যোগ একটি বিস্তৃত জাতীয় কৌশলের অংশ। তার লক্ষ্য হলো জৈব-নিরাপত্তা জোরদার, রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পশুস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন করা। এটি নিঃসন্দেহে ভারতের একটি বড় মাইলফলক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার নেতৃত্বের প্রতিফলন।

Leave a Reply