BRAKING NEWS

হাফলং পুরপর্ষদের নির্দেশে বিপাকে বহিঃজেলার সবজি বিক্রেতারা জেলাশাসকের সরকারি আবাসনের সামনে সবজির বোঝাই গাড়ি নিয়ে ধরনা

হাফলং (অসম), ২৫ মার্চ (হি.স.) : হাফলং পুর পর্ষদ কর্তৃপক্ষের তুঘলকি কাণ্ডে বিপদে পড়েছেন বহিঃজেলার সবজি বিক্রেতারা। শনিবার হাফলঙে সাপ্তাহিক হাটবার ছিল। এই সাপ্তাহিক হাটবারে যাঁরা গত দু-দশক ধরে বহিঃজেলা হোজাই, লংকা, যমুনামুখ, লামডিং থেকে এসে হাফলঙে সবজি বিক্রি করছেন, আজ তাঁদের হাফলঙে সবজি বিক্রি করতে দেননি হাফলং পুর পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। যার দরুন এই সব সবজি বিক্রেতারা বাইরে থেকে এসে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বাধ্য হয়ে শনিবার সকালে সবজি বিক্রেতারা ডিমা হাসাওয়ের জেলাশাসকের সরকারি আবাসনের সামনে সবজির বোঝাই গাড়ি নিয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাতে থাকেন। এতে অবশ্য কোনও কাজ হয়নি। বহিঃজেলার সবজি বিক্রেতারা আজ বাজারে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে পারেননি। হাফলং পুর পর্ষদ বহিঃজেলার সবজি বিক্রেতাদের আগে থেকে কোনও নোটিশ না দিয়েই আচমকা হাফলং লালফিল্ডের গেটে এক নোটিশ ঝুলিয়ে জানানো হয়েছে, আজ শনিবার সাপ্তাহিক হাটবারে হাফলং লালফিল্ডে বহিঃজেলার কোনও সবজি বিক্রেতা বসতে পারবেন না। যদি বহিঃজেলার কোনও সবজি বিক্রেতা লালফিল্ডে প্রবেশ করে সবজি বিক্রি করেন তা-হলে তাদের দু-হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে। এতে বিপদে পড়েছেন বহিঃজেলার সবজি বিক্রেতারা।
তাঁদের অভিযোগ, শনিবার সাপ্তাহিক হাটবারে সবজি বিক্রি করতে দেওয়া হবে না বলে আগে থেকে কিছুই জানায়নি হাফলং পুর পর্ষদ। কিন্তু শনিবার ওই সকল ব্যবসায়ী প্রায় কুড়িটি ট্রাক বোঝাই করে সবজি হাফলঙে নিয়ে আসার পর এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাঁদের। তাঁরা জানান, প্রতিটি গাড়িতে এক লক্ষ টাকার শাক-সবজি রয়েছে। হাফলঙের সাপ্তাহিক হাটে সবজি এনে বিক্রি করার জন্য উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের পক্ষ থেকে দেওয়া দাওট্যাক্স পাস রয়েছে তাঁদের কাছে। তাছাড়া প্রতি শনিবার সাপ্তাহিক হাটে আসার পর ওই সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কর আদায় করে হাফলং পুরপর্ষদ। তার পরও তাঁদের শনিবার সাপ্তাহিক হাটে সবজি বিক্রি করতে দেয়নি হাফলং পুরপর্ষদ।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শনিবার হাফলং সাপ্তাহিক হাটবারে যদি তাঁদের সবজি বিক্রি করতে দেওয়া না হত তা-হলে গত শনিবার তাঁদের তা জানিয়ে দিলে তাঁরা আজ হাটে আসতেন না। গাড়ি থেকে সবজি নামাতে না পেরে এত টাকার সবজি এখন নষ্ট হওয়ার পথে।
জনৈক সবজি বিক্রেতা জানিয়েছেন, এত দূর থেকে কষ্ট করে এসে গত দু দশকের বেশি সময় ধরে হাফলং এসে সবজি বিক্রি করে পরিবার প্রতিপালন করছেন তাঁরা। এই সবজি বিক্রি করে বন্ধন ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ করছেন অনেকে। আবার ঋণ ধার করে সবজি কিনে হাফলং সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করে কোনওমতে পরিবার চালাচ্ছেন। এমতাবস্থায় তাঁরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই তাঁরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী নন্দিতা গার্লোসা, উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা, জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ হাফলং পুরপর্ষদ কর্তৃপক্ষ এক নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিল, শনিবার হাফলঙের সাপ্তাহিক হাটবারে লালফিল্ডে ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে স্থানীয় শাক-সবজি নিয়ে এসে লালফিল্ডে বসে তাঁদের শাক-সবজি বিক্রি করতে পারবেন। বহিঃজেলা থেকে আগত শাক-সবজি বিক্রেতারা লালফিল্ডের বিপরীত অবস্থিত অটোস্ট্যান্ডে বসে সবজি বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু শনিবার ওই অটোস্ট্যান্ডের অটো চালকরা তাঁদের স্ট্যান্ড খালি করতে রাজি না হওয়ায় বহিঃজেলা থেকে আগত শাক-সবজি বিক্রেতাদের আজ সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এদিকে বহিঃজেলার সবজি বিক্রেতারা শনিবার হাফলঙে সবজি বিক্রি করতে না পারায় হাফলং শহরে শাক-সবজির দাম অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাফলঙের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চড়া দামে আজ সবজি বিক্রি করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *