BRAKING NEWS

আপডেট…উচ্চ মাধ্যমিকের সিক রুমে মেয়েকে পরীক্ষায় সহায় শিক্ষক-বাবার, বরখাস্ত দুই শিক্ষক

শিলচর (অসম), ১৪ মার্চ (হি.স.) : চলতি শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়তে চাইছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় কাছাড় জেলার গণিরগ্রাম যাত্রাপুর রাজনগর হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে গণহারে নকল সরবরাহের অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি প্রথম দিনের পরীক্ষা বাতিল করেছে অসম মধ্যশিক্ষা পর্ষদ (সেবা) কর্তৃপক্ষ। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে সংবাদ শিরোনাম দখল করেছে কাছাড় জেলার বাঁশকান্দি নেনা মিয়াঁ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। সিক রুমে নিজের মেয়েকে পরীক্ষায় অবৈধভাবে সহায়তা করা এবং ঘটনাকে মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং করার অভিযোগে যথাক্রমে আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁ এবং বিকাশ পুরকায়স্থকে বরখাস্ত করেছে কাছাড় জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে ছাত্রীর ঐচ্ছিক বাংলার পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত ঐচ্ছিক ভাষার পরীক্ষার দিনের একটি ভিডিও ফুটেজ আজ মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেতে দেখা গেছে অনেককে। মোবাইল ফোনে তোলা ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রধানকে ট্যাগ করে ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন অনেকে।

ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের সিক রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে এক ছাত্রী। আর তার উত্তর লিখে দিতে সাহায্য করছেন সেখানে কর্তব্যরত একজন শিক্ষক। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে কর্তব্যরত রয়েছেন শিক্ষক আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁ। জানা গেছে, নিজের মেয়ে মেহবুবা হক বড়ভুইয়াঁকে অসুস্থ দেখিয়ে সিক রুমে বসিয়ে ঐচ্ছিক বাংলার বিষয়ে উত্তরের যোগান দিচ্ছেন শিক্ষক-বাবা।

বিষয়কে কেন্দ্র করে আজ মঙ্গলবার শোরগোল পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, গত বছর ওই পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল হয়েছিল। এবারও ইনিস্পেক্টিং টিম ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমোদন দেয়নি। গত বছর ফলাফল ছয় শতাংশে নেমে এসেছিল। শিক্ষকের মতো সম্মানীয় পদ থেকে আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন মহল। গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনও শিক্ষকের নিকটাত্মীয় যদি পরীক্ষার্থী থাকেন (সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে বা অন্য কোনও কেন্দ্রে), তা-হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও ধরণের দায়িত্বে রাখা যাবে না। তা-হলে ওই শিক্ষক কী করে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ পেলেন? এই প্রশ্নও তুলেছেন বহুজন।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাঁশকান্দির নেনা মিয়াঁ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ। ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়ে তিনি এর দোষ চাপিয়েছেন স্কুলের অন্য এক শিক্ষক বিকাশ পুরকায়স্থের ঘাড়ে। অধ্যক্ষ বলেন, সিক রুমে যে ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে, কয়েকদিন আগে তার একটি অপারেশন হয়। পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিক রুমে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় ছাত্রীর বাবা শিক্ষক আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁ সিক রুমে গেলে চক্রান্ত করে সেই সব ভিডিও নিজের মোবাইলে রেকর্ড করেন শিক্ষক বিকাশ পুরকায়স্থ। সোমবার ঠিক মতো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও পুরনো আক্রোশ মেটাতে আজ সাংবাদিকদের মোবাইলে সেই ভিডিও পাঠিয়ে দেন বিকাশ পুরকায়স্থ।

জোর গলায় তিনি আরও বলেন, আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁকে সব পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার ডিউটিতে বিদ্যমান কোনও শিক্ষক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু সেখানে লুকিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন বিকাশ পুরকায়স্থ। যার দরুন তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে আজ মঙ্গলবার রাতে স্পষ্টীকরণ দিয়েছে কাছাড় জেলা প্রশাসন। স্পষ্টীকরণে বলা হয়েছে, গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। অভিযুক্ত দুই শিক্ষক যথাক্রমে আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁ এবং বিকাশ পুরকায়স্থকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আনোয়ারউল হক বড়ভুইয়াঁকে বেআইনিভাবে নিজের মেয়েকে পরীক্ষায় সহায়তা করা এবং বিকাশ পুরকায়স্থকে নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অভিযোগে বরখাস্ত করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি ছাত্রীর ঐচ্ছিক বাংলার পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।

কাছাড় জেলা প্রশাসনের স্পষ্টীকরণে আরও বলা হয়েছে, বেআইনিভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ বড়ভুইয়াঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ডিউটি দিতে নেনা মিয়াঁ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন। অথচ ওই কেন্দ্রে তাঁর মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। গতকাল ঘটনার পর কেন রিপোর্ট করেননি বলে কেন্দ্রের ইনচার্জকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন বিদ্যালয়সমূহের পরিদর্শক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *