BRAKING NEWS

মৃতদেহ নিয়ে নাটক সিপিএমের, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সতর্ক ত্রিপুরা পুলিশ, রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত চার

আগরতলা, ১ ডিসেম্বর (হি. স.) : ত্রিপুরায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় আজ মৃতদেহ নিয়ে একপ্রস্ত নাটক মঞ্চস্ত হয়েছে। বুধবার চড়িলামে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘর্ষে সিপিএম কর্মী শহিদ মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আজ তাঁর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ মৃতের পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছে অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সিপিএম আজ পুলিশ সদর কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসের ভিত্তিতে সিপিএম আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।

এদিকে, কড়া পুলিশী পাহারায় শহিদ মিয়ার মৃতদেহ বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মেনে তাঁর সত্কার করা হয়েছে। এদিকে, গতকাল রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে দুইজন বিজেপি কর্মী, একজন সিপিএম ও একজন কংগ্রেস কর্মী রয়েছেন।

আজ সকালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে শহিদ মিয়ার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে, এমনটাই আশা করে তাঁর ভাই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জি বি হাসপাতালের মর্গের সামনে ভীড় জমিয়েছিলেন। কিন্তু, সরাসরি তাঁদের হাতে মৃতদেহ তুলে দিতে চাইছিলেন না। পুলিশের বক্তব্য, ওই মৃতদেহ পুলিশী পাহারায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাতেই বিপত্তি দেখা দেয়। এরই সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক রতন দাসের নেতৃত্বে সিপিএম কর্মীরা জি বি হাসপাতালের মর্গের সামনে পৌছে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেন। মৃতদেহ পরিবারের হাতে কেন তুলে দেওয়া হবে না, এই প্রশ্নে রীতিমতো তুলকালাম অবস্থা ঘটিয়ে ফেলেন।

দীর্ঘ সময় পুলিশের এ-বিষয়ে বাকবিতণ্ডায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। একসময় পুলিশ বল প্রয়োগ করেই মৃতদেহ সেখান নিয়ে মৃতের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তাতে, মৃতের ভাই খুরশীদ মিয়া চটে লাল হয়ে যান এবং মৃতদেহ গ্রহণ ও সত্কার করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এদিকে, পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজ এবং মারধরের অভিযোগ এনে সিপিএম পুলিশ সদর কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের শান্ত করার জন্য এআইজিপি কিষান কুমার ঘটনার তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাথে চড়িলামের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুলিশের আশ্বাস পেয়ে সিপিএম আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।

এ-বিষয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, গতকাল বিজেপি আশ্রিত দুর্বৃত্তদের হামলায় দলীয় কর্মী শহিদ মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আজ তাঁর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার বদলে পুলিশ জুলুম করেছে। অন্যায় ভাবে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশ সত্কার কাজে বাধা দিয়েছে। তিনি বলেন, সিপিএম কর্মীর মৃতদেহে দলীয় নেতা কর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানানোর মনস্ত করেছিলেন। কিন্তু, পুলিশী হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বরং মৃতদেহ আনতে গিয়ে মৃতের ভাই আক্রান্ত হয়েছেন। তাই, আজ পুলিশ সদর কার্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে।

সদর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অজয় দাস এ-বিষয়ে বলেন, জি বি হাসপাতালে মর্গের সামনে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ওয়াকিবহাল নন। তাই ওই ঘটনার তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, মৃতদেহ নিয়ম মেনেই পরিবারের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে পুলিশ। কিন্তু, তাঁদের দাবি মেনে মৃতদেহ তুলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। যথারীতি পুলিশ নিয়ম মেনেই মৃতদেহ তাঁর বাড়িতে পৌছে দিয়েছে।

এদিকে, মৃতদেহ পুলিশ নিয়ে বাড়িতে পৌছে গেলেও পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর শহিদ মিয়ার পরিবারের সদস্য আসেন এবং পুলিশ তাঁদের হাতে মৃতদেহ তুলে দেন। এরপর ধর্মীয় নিয়ম মেনে মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে।গতকাল চড়িলামে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় সিপিএমের দায়ের করা মামলায় পুলিশ দুই বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। শহিদ মিয়া খুনের মামলায় পুলিশ বিজেপি কর্মী শুভম দেবনাথ(২৫) এবং দিলীপ কুমার ভৌমিক(৫৪)-কে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে বিজেপির দায়ের করা মামলায় পুলিশ কংগ্রেস কর্মী ভবতোষ দত্ত(৫৮) এবং সিপিএম কর্মী গৌতম দাস(৫৬)-কে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকালের ঘটনায় সিপিএম ২৮ জন বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা করেছে। অন্যদিকে বিজেপি ৬ জন সিপিএম এবং ৯ জন কংগ্রেস মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *