জৈব কৃষি নিয়ে কর্মশালা বাসন্তীতে

বাসন্তী, ২০ নভেম্বর (হি. স.) সুস্থায়ী জৈব চাষ পদ্ধতির প্রচলন ও পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ সুস্থ জীবন নির্ধারণ নিয়ে একটি বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হল রবিবার। বাসন্তীর জয়গোপালপুর গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় এদিনের এই কর্মশালায় সুন্দরবন এলাকার প্রায় ৬০০ কৃষক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন সংসদ পূর্ণেন্দু বসু, ডেনমার্কের আইজিএফ সংস্থার চেয়ারম্যান গনেশ মণ্ডল, জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল, পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র পর্ষদের চেয়ারম্যান হিমাদ্রিশেখর দেবনাথ, কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও গবেষক কৃষ্ণেন্দু আচার্য সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য হল সুন্দরবনের দরিদ্র কৃষকদের জীবিকার সুস্থায়ী উন্নয়ন ঘটানো এবং পরিবেশ রক্ষা করা। আর সেই কারণে রাসায়নিক চাষ বাদ দিয়ে কিভাবে জৈব চাষের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে তা নিয়েই মূল আলোচনা হয় এদিন। সুন্দরবনের বাসন্তী, গোসাবা ও সন্দেশখালি ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৮০০ চাষি ইতিমধ্যেই এই জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন। ভালো ফসলও পাচ্ছেন তাঁরা।
দিনের পর দিন রাসায়নিক পদ্ধতিতে চাষের ফলে জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়েছে। সাথে সেই রাসায়নিকের প্রভাব পড়েছে জীব বৈচিত্রের উপর। যার জেরে আজ অনেক পোকামাকড়, পাখি বা অন্যান্য জীব আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে। যার প্রভাব গোটা জীব বৈচিত্রের উপর পড়েছে। আর সেই কারণে বর্তমানে জৈব পদ্ধতিতে চাষের জন্য সরব হয়েছেন পরিবেশবিদরা। সুন্দরবন এলাকায়ও জৈব পদ্ধতিতে যাতে চাষ করা হয় সেই কারণে ইতিমধ্যেই ডেনমার্কের সেচ্ছাসেবী সংস্থা আইজিএফের সহযোগিতায় জয়গোপালপুর গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র উদ্যোগী হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনের তিনটি ব্লকে এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়েছে। রাসায়নিক সার ত্যাগ করে শুধুমাত্র জৈব পদ্ধতিতে চাষ করেই লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এই পদ্ধতিতে চাষ আরও কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবং এই চাষে উৎসাহ দিতেই এদিনের এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। পূর্নেন্দু বসু বলেন, “মানুষ শুধুমাত্র তার নিজের লাভ লোকসানের কথা ভাবলে হবে না, প্রকৃতির সাথে ভারসাম্য রেখে চলতে হবে। তাই জৈব চাষে জোর দিতে হবে।”

এই কর্মশালার উদ্যোক্তা তথা জয়গোপালপুর গ্রামবিকাশ কেন্দ্রের সম্পাদক বিশ্বজিৎ মহাকুড় বলেন, “ আমরা চেষ্টা করছি প্রকৃতিকে রক্ষা করে কিভাবে চাষ করা যায়। ইতিমধ্যেই আমাদের কৃষকরা সফল হয়েছেন। দৃষ্টান্তমূলক উৎপাদন করে তাক লাগিয়েছেন। ফলে প্রকৃতিকে বাঁচাতে তথা নিজেদের স্বার্থেই এই জৈব চাষে জোর দিতে হবে। তবেই সুন্দর পৃথিবী আমরা ফিরে পাবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *