আগরতলা, ৮ মে : কর্মী স্বল্পতায় ভুগছে কৈলাসহরের ৭৪বছরের পুরনো রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এস.টি হোস্টেল। পড়াশোনা বাদ দিয়ে রান্নাঘরে রাধুনীর সঙ্গ দিচ্ছে ছাত্ররা।
কৈলাসহরের রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শহরের বিভিন্ন পুরোনো স্কুল গুলোর মধ্যে একটি। ১৯৫০ সালে প্রথম স্থাপিত হয় এই স্কুল। শহরের মধ্যে অবস্থিত অনেকেই এখান থেকে পড়াশোনা করে আজ ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও আরো বড় বড় পদে আছেন। গুটি গুটি পায়ে স্কুলের ৭৪ বৎসর পেরিয়ে গেলেও বর্তমানে স্কুলের এস.টি হোস্টেলের অবস্থা খুবই খারাপ। স্কুল সহ রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোস্টেল দীর্ঘদিন ধরে কর্মী স্বল্পতায় জর্জরিত। এনিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অসীম ভট্টাচার্য জেলা শিক্ষা আধিকারিককে চিঠি দিলেও এখনো চিঠির পরিপ্রেক্ষিত কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে অন্তত স্কুল কর্তৃপক্ষের জানা নেই। ৯০ এর দশকে প্রথম স্থাপিত হয়েছিলো রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এস.টি হোস্টেল। তারপর থেকে তিন জন কর্মী হোস্টেলের ছাত্রদের রান্না ছাড়াও দেখশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় আট মাস আগে হোস্টেলের এক কর্মী গঙ্গাজয় রিয়াং মারা যান। তার পর আরো কয়েকমাস যেতে না যেতেই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অবসর গ্রহণ করেন হোস্টেলের আরেক কর্মচারী হিমাংশু রায়। তিন জনের মধ্যে দুজন চলে যাওয়ায় দায়িত্ব পড়ে রাধুনী জগদীশ দেববর্মার ওপর। জগদীশ বাবু অসুস্থ হলেও ছাত্রদের কথা চিন্তা করে ছুটি নিতে পারছেননা। আর এই অবস্থায় পড়াশোনা ছেড়ে এবার রাধুনী জগদীশ বাবুকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন খোদ ছাত্ররা।
শূন্য পদ পুরনের জন্য জেলা শিক্ষা আধিকারিককে জানালেও কেন এখন পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে কোনো হেলদোল নেই তা নিয়ে চলছে শহরে গুঞ্জন।বুধবার এই বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অসীম ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হোস্টেলের তিনজন কর্মীর মধ্যে একজন কর্মচারী গঙ্গাজয় রিয়াং মারা গেছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এক কর্মচারী হিমাংশু রায় অবসরে চলে যান। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বারবার এসব বিষয়ে শূন্যপদ পূরণের জন্য চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত দপ্তর এই বিষয়ে কোনো সদর্থক ভূমিকা পালন করেনি। মাত্র একজন কর্মচারী দিয়েই হোস্টেল পরিচালনা চলছে। একজন কর্মচারী দিয়ে কোনভাবেই একটি হোস্টেল পরিচালনা সম্ভব নয়
আট মে বুধবার সকালে রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এস.টি হোস্টেলে গেলে দেখা যায় একজন কর্মচারী নিজেই সমস্ত ছাত্রদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন। তাছাড়া এই হোস্টেলে হোস্টেল সুপার থাকার জন্য কোন ঘর নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই হোস্টেলের রান্নাঘরে জল ঢুকে পড়ছে। তাছাড়া রয়েছে হোস্টেলে পানীয় জলের সমস্যা। হোস্টেলে মোট ছাত্র সংখ্যা ২৪ জন। রাধুনী জগদীশ দেববর্মা একাই রান্নার কাজ সামলাচ্ছেন। তিনিও বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় এই আধুনিক যুগে আজও রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসটি হোস্টেলে মাটির চুলায় রান্না হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে রান্নাঘরের অবস্থাও খুবই খারাপ। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছাত্ররা যেকোনো দিন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে
একদিকে সরকার উন্নয়নের বুলি মুখে নিয়ে বাজার গরম করছে কিন্তু বাস্তবে তা পুরো অন্যরকম। যদি ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হয় তাহলে এর দায় কে নেবে সেটা এখন বড় প্রশ্ন। অভিভাবকরা আশাবাদী যে যেহেতু শিক্ষা দপ্তর মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাছে রেখেছেন তাই এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী অতিসত্বর ছাত্রদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ডাবল ইঞ্জিনের সরকারে সুশাসনের এহেন ব্যবস্থা দেখে শহরের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এর একটা বিহিত চাইছেন।