দুর্গাপুর, ২৮ আগস্ট (হি. স.) গত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যজুড়ে হিংসার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন পড়েছে। ঘরবাড়ি জ্বালানো থেকে মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তদন্তে রাজ্যের তাবড় রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের তলব করে জেরা শুরু হয়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত দলীয়কর্মী ও হিন্দুদের মঙ্গল কামনায় দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে রূদ্রাভিষেক করে ফিরলেন দুর্গাপুরের এক বিজেপিকর্মী।
সুব্রত ঘোষ। দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা। নয়ের দশক থেকে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। এবং সক্রিয় বিজেপিকর্মী। বিজেপি করার অপরাধে একাধিকবার অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। দফায় দফায় তাঁর খ্যাতনামা পানের দোকান ভাঙচুর। এমনকি তার গাড়িতে হামলা হয়েছে। তবুও দমেননি। গত ২০১৭ সালে দুর্গাপুর পুরভোটে দলের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বার জয়ী হয়। ওই বছর ফলাফলের দিন রাত থেকে রাজ্যজুড়ে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা ঘটে। দুর্গাপুর শহর ছাড়াও পান্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, লাউদোহা, কাঁকসা, আউশগ্রাম, ডায়মন্ডহারবার সহ বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হয় বিজেপিকর্মীরা। ঘরবাড়ি ভাঙচুর, জ্বালিয়ে দেওয়াসহ মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ হিংসায় বেশী আক্রান্তের শিকার হয় হিন্দুরা। আতঙ্কে গ্রামছাড়া হতে হয়েছিল বহু পরিবারকে। শেষ পর্যন্ত, হিংসার ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা অবনতির ওপর আদালতে মামলা দায়ের হয়। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ব্যার্থতার অভিযোগ ওঠে। মাস তিনেক পর আদালতের নির্দেশে ঘরছাড়া বিজেপিকর্মীরা ধীরে ধীরে বাড়ি ফেরা শুরু করে। কিন্তু তারপরও সুরক্ষার অভাব বোধ করে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার সিবিআই। সেই মতো তদন্তে শাসকদলের তাবড় নেতাদের জেরা শুরু হয়। হিংসার ঘটনার আতঙ্কের রেশ এখনও বহু বিজেপিকর্মীদের চোখে। দুর্গাপুর ছাড়াও আশপাশের এলাকায় আক্রান্ত দলীয়কর্মীদের পাশে ছুটে গেছেন বিজেপিকর্মী সুব্রত ঘোষ। তার মধ্যে গত ১৪ জুলাই রাজ্যের আক্রান্ত দলীয়কর্মী তথা হিন্দুদের মঙ্গল কামনায় দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ পরিভ্রমণে বের হন সুব্রতবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাপস লোহার নামে আরও এক সহকর্মী। দুর্গাপুর থেকে ট্রেনে রওনা দেন তারা। প্রথমে যান বৈদ্যনাথ ধাম তার পর কাশী বিশ্বনাথ ধাম। সেখানে মঙ্গল কামনায় পূজা দেন এবং সন্ধ্যায় মঙ্গল আরতিতে অংশ নেন। আরতির সময় ডমরু বাজানোর সুযোগ পান তিনি। তারপর সেখান থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকাজুর্ন মন্দিরে এবং তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে যান। সেখানেও রূদ্রাভিষেক করেন। তারপর তিনি মহারাষ্ট্রের ভিমাশঙ্কর, ত্রম্বকেশ্বর গ্রীশ্নেশ্বর যান। সেখান থেকে মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর ও উজ্বয়নীর মহাকালেশ্বর মন্দিরে যান এবং পুজা দেন। তারপর সেখান থেকে গুজরাটের সোমেশ্বর নাগেশ্বর মন্দিরে পূজা দেন। সব শেষে কেদারনাথ মন্দিরে যান।
দুর্গাপুরে সুব্রতবাবু তাঁর অভিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্যর কথা জানালেন। তিনি জানান,” পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসায় যেভাবে বিজেপিকর্মী ও হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা দেখেছি। তাতে আতঙ্কিত। গণতন্ত্রকে মাটিতে কবর দেওয়া হয়েছিল। তাই আক্রান্ত বিজেপিকর্মী ও হিন্দুদের মঙ্গল কামনায় দ্বাদশ জ্যোতিরলিঙ্গ ভ্রমণে গিয়েছিলাম। গোটা শ্রাবণ মাস সহ ৩৭ দিনের সফর ছিল। নব প্রজন্মের মধ্যে হিন্দুত্ববোধ জাগ্রত করা বার্তা ছিল এই ভ্রমণে।” তিনি আরও বলেন,” দ্বাদশ জ্যোতিরলিঙ্গ দর্শনের পাশাপাশি রূদ্রাভিষেক করেছি। যেভাবে আমার উদ্দেশ্য শুনে সেখানের মানুষ সম্বর্ধনা দিয়েছে তাতে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে। এই পরিভ্রমণে সেখানে আগত পূন্যার্থীদের আতিথেয়তায় আপ্লুত।”