কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর (হি. স.) : নারী মানেই অর্ধেক আকাশ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে রাজনীতিতেও। বাংলার ভোট রাজনীতিতে বহুদিন ধরে চলে আসা পুরুষ ‘আধিপত্যে’ ভাগ বসিয়েছে মহিলারা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই মহিলাদের প্রার্থী তালিকায় গুরুত্ব দিয়েছেন। ভোট বৈতরণি পার হতে পুরুষ প্রার্থীর তুলনায় মহিলাদের উপর এবার বেশি ভরসা রাখছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কলকাতা পুরভোটের দলগুলির প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর এই তত্ত্বই সামনে এসেছে। তথ্য বলছে, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় মহিলার সংখ্যা ৬৪। যেখানে সংরক্ষণ বিন্যাসে এবার কলকাতায় মহিলা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪৮। অর্থাৎ অন্তত ১৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে বলা যায়, জায়গা ছিনিয়ে নিয়েছেন মহিলারা। তৃণমূলের বক্তব্য, “সাংবিধানিক রাজনীতিতেও মহিলাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে বরাবর তৃণমূলই গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে যোগ্য পুরুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন।”
বামফ্রন্টের ক্ষেত্রে গতবারও মহিলাপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৪০-এর কাছাকাছি। এবার সেখানে ১২৮টির মধ্যে তাঁরা ৫৭ জন মহিলাকে টিকিট দিয়েছেন। এত বিপুল বদল আগে চোখে পড়েনি। কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্পাদক কল্লোল মজুমদার স্পষ্টই বলেছেন, “পার্টির নির্দেশ ছিল ৩২ শতাংশের উপরে মহিলা রাখতেই হবে। ওয়ার্ড ধরে ধরে কাজের বিচারে ও মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের বিচারে মহিলাদের রাখতেই হয়েছে।”
শুধুমাত্র মহিলাদের নিজেদের সংরক্ষিত ক্ষেত্রে বেঁধে না রাখার বড় কারণ এটাও। প্রতিবারই সংরক্ষণ বিধির গেরোয় এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। পরের ভোটে সেই সংখ্যার একটি নির্দিষ্ট অংশ না বদলালেও বদলে যায় অনেকটা। রাজনীতিক মহলের বক্তব্য, প্রতি ভোটে সংরক্ষণ নীতি বা ওয়ার্ডের সংখ্যা বদলেও যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, একবার কোনও মহিলা সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জিতলেও পরে সেই ওয়ার্ড সাধারণ হলেও জয়ী মহিলাকে সরানো যায় না। কাজের সাফল্য ভালই। ভোটারদের চাপ ও ওয়ার্ড জেতার বাধ্যবাধকতা থেকেই রাজনৈতিক দল এমন সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়াও মহিলারা রাজনীতিতে অংশ নেওয়ায় কাজের নিরিখে ও দায়বদ্ধতায় পুরুষদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে।
কিছুটা পিছিয়ে কংগ্রেস, ১২৫টির মধ্যে ৩৬ জন মহিলাকে টিকিট দিয়েছে। বিজেপির মহিলা প্রার্থী গতবার ছিল ৫৩। এবার এই সংখ্যা বেড়েছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে রাজনীতিতে। অনেক জায়গায় বিতর্কিত মুখ এড়াতে গ্রহণযোগ্য মহিলাকে প্রার্থী করা হচ্ছে।” মহিলা মুখের ক্ষেত্রে যে গ্রহণযোগ্যতা বেশি সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই নেতাদের কারও। গতবার পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত থাকায় তৃণমূলের জিতেছিলেন পুষ্পালী সিনহা। এবার সাধারণ হলেও সেখানে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। ডা. শান্তনু সেনের স্ত্রী ডা. কাকলি সেন প্রার্থী সেখানে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ড গতবার মহিলা সংরক্ষিত থাকলেও এবার সাধারণ। কিন্তু সেখানে গতবারের জয়ী মৌসুমি দেকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
একই কথা বলা যায় ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে মহিলা সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হন বর্তমান পুর প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য ইন্দ্রাণী সাহা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিনের প্রাক্তন কাউন্সিলর রাধেশ্যাম সাহার কন্যাকেই ওয়ার্ড সাধারণ হলেও সরায়নি তৃণমূল। বরং পাশের ৫২ নম্বরে মহিলা প্রার্থী এসেছেন সংরক্ষণের কারণে। ৮৮ নম্বর গতবার মহিলা ছিল। কাউন্সিলর হন মালা রায়। এবার ওয়ার্ডটি ‘জেনারেল’ হলেও স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সাংসদ মালা রায়কে সরানো হয়নি। বামফ্রন্টের মধুছন্দা দেব, করুণা সেনগুপ্ত, মৌসুমি ঘোষ বা রত্না রায় মজুমদার এবং বিজেপির মীনা দেবী পুরোহিত, সুনীতা ঝাওয়ারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।