BRAKING NEWS

পুরভোটে প্রত্যাশা / দখলদারির কাঁটাই কি আমাদের ভবিতব্য? : নিরঞ্জন রায়

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর (হি .স.) : “আমার ৮৫ বছরের জীবনের প্রথমাংশ কেটেছে পূর্ববঙ্গে। জীবনের সিংহভাগ কলকাতায় কাটালাম। নগরীর অনেক উন্নয়ন দেখলাম। বহু উড়ালপুল, প্রশস্ত বাইপাস, মেট্রো রেল, দ্বিতীয় হুগলি সেতু— সবই চোখের সামনে তৈরি হতে দেখেছি। এত উন্নয়নের মাঝে হারিয়ে গেছে নাগরিকদের চলাচলের জন্য ফুটপাত আর দোতলা বাস! বুঝলাম যে পরিবহন সংস্থা দোতলা বাস রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়েছে, কিন্তু ফুটপাত গেল কোথায়? দখলদারির কাঁটাই কি আমাদের ভবিতব্য?“

পুরভোটে প্রত্যাশা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ও ভাবনার কথা জানালেন জগদ্বন্ধু স্কুলের (প্রভাত) প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন রায়। তাঁর কথায়, “এক সময় দেখেছি ফুটপাতে প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে পসরা সাজিয়ে হকাররা বসতো আর পুলিশের হল্লা গাড়ি দেখা মাত্র জিনিস পত্র গুটিয়ে নিয়ে পালাতো। অনেক সময়ে আবার পুলিশ মালপত্র সমেত তাদের ধরে নিয়ে যেত। কয়েক দিন পর আবার একই জায়গায় তাদের দেখা গেছে। কিন্তু এখন আর পুলিশের উৎপাত নেই। একটা সমঝোতা হয়ে গেছে। ফুটপাত চিরতরে হকারদের দখলে চলে গেছে! সেখানে নির্মিত হয়েছে হকারদের স্টল। আর স্টলের পেটের তলায় চলে গেছে ফুটপাত! এভাবেই কলকাতার সমস্ত ফুটপাত দখলদারির কাঁটায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। হয়তো রাজনৈতিক চাপে সরকার এই দখলদারিত্ব মেনে নিয়েছে। যেমন একই কারণে কলকাতার উপকন্ঠে সরকারের জমির উপরে গড়ে উঠা বাংলাদেশ থেকে আগত বাস্তুচ্যুত মানুষের দখলদারিত্ব মেনে নিতে হয়েছে।
ফুটপাত দখলদারির কারণে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে নেমে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। তাতে পথ দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া কলকাতার পথের সৌন্দর্যায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। একটু উপর থেকে তাকালে মনে হয় যেন রাস্তার দুপাশে প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া বস্তির সারি, যা দৃষ্টি দূষণের কারণ। এই সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে আছে লক্ষাধিক হকারদের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন। তাই তাদের জীবন ধারণের উপযোগী বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর জন্য চাই সরকারের বা পৌরসভার আন্তরিক প্রচেষ্টা।

সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে— (১) বিশ্ব ব্যাংক বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্টে ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় ভূগর্ভস্থ কয়েকটি হকার্স মার্কেট তৈরি করে সেখানে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে উপরের ফুটপাত সম্পুর্নরূপে দখলমুক্ত করা।

(২) কলকাতার পুরাতন মার্কেট গুলি সংস্কার করে সেখানে বহুতল বিশিষ্ট মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে হকারদের স্থানান্তর।
(৩) কলকাতার উপকন্ঠে সরকারের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হকার্স মার্কেট তৈরি সেখানে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। সরকারের বা পৌরসভার সদ্বিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে কলকাতার ফুটপাত সম্পুর্নরূপে দখলমুক্ত করা যাবে বলে মনে করি।আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিষয়টি হলো উপরিউক্ত পরিকল্পনার সাথে হকারদের যুক্ত করে এর প্রয়োজনীয়তা তাঁদেরকে বোঝাতে হবে। নচেৎ পরিকল্পনা টির যথার্থ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

কলকাতার জনস্ফিতী নগরীর সৌন্দর্যায়নের পথে চরম বাধা সৃষ্টি করছে। ফুটপাতের আনাচে কানাচে, উড়ালপুলের নিচে গ্রাম বাংলা থেকে আগত হত দরিদ্র গরীব মানুষেরা আশ্রয় নেয় ও সংসার পেতে বসে। এরকম ফুটপাতবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কলকাতার জনস্ফিতী কমাতে হবে।
কলকাতা পৌরসভার নির্বাচন আসন্ন প্রায়। যাঁরা পুরপিতা নির্বাচিত হবেন তাদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে কয়েকটি আবেদন-নিবেদন রাখছি, যা নাগরিক পরিষেবার মধ্যে অন্যতম। প্রথমে নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ ও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে। জলই জীবন। উত্তর কলকাতার জল অপেক্ষাকৃত ভালো হলেও দক্ষিণ কলকাতার জলের মান খুবই খারাপ, পানের অযোগ্য। সুতরাং পানীয় জল সরবরাহের উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

দ্বিতীয়টি হল জল নিকাশি ব্যবস্হার উপযোগী পরিকল্পনা নিতে হবে। বর্ষাকালে কলকাতার জল ছবি আমাদের অজানা নয়। কিছু নিচু জায়গায় কয়েক দিন পর্যন্ত জল জমে থাকে। তাই নোংরা জমা জল যাতে দ্রুত নিকাশ করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয় বিষয়টি হলো উন্নত জনস্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অতিমারি করোনা, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থেকে নাগরিকদের রক্ষা জন্য আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই যে সুষ্ঠু নগরায়ণ, জনস্ফিতী রোধ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কলকাতাই হবে আসল তিলোত্তমা সুন্দরী কলকাতা।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *