BRAKING NEWS

ক্রমশ কড়া হচ্ছে নজরদারি, কমিশনের রোষে তৃণমূল-বিজেপি উভয় দল

কলকাতা, ১৩ এপ্রিল (হি.স.): নির্বাচন যত শেষের দিকে এগোচ্ছে রাজ্যে উত্তাপ ততই বাড়ছে ভোটকে কেন্দ্র করে। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজনৈতিক নেতাদের সংলাপের ঝাঁঝ। আর এই ঝাঁঝের চোটেই কখনও কখনও বিতর্কিত মন্তব্য করে বসছেন একাধিক দলের নেতা-নেত্রীরা। যার জেরে আর রাখঢাক নয়, কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে বদ্ধপরিকর কমিশন। একাধিক নেতা-নেত্রীদের তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে শোকজ করছে কমিশন। গত সোমবার থেকেই ‘অতিরিক্ত সক্রিয়’ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আচরণ বিধিভঙ্গের অভিযোগে প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তারপর শীতলকুচি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কমিশন। শোকজ করা হয়েছে দিলীপ-শুভেন্দুকেও। এবার সেই তালিকায় নাম জড়াল বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। যদিও এই শোকজের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছুই জানাননি অনুব্রত।

শীতলকুচির ঘটনায় মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আজ বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার ভোটের প্রচারে  ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা  জারি করে নির্বাচন কমিশন।আজ ১২ টা থেকে ১৫ এপ্রিল বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

কোচবিহারের শীতলকুচি নিয়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্যের জের, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে নোটিস দিল নির্বাচন কমিশন। বুধবার সকাল দশটার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দিলীপকে। চতুর্থ দফার ভোটের দিন, শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ যুবকের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। ওই ঘটনাকে গত রবিবার ‘গণহত্যা’র সঙ্গে তুলনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পরবর্তী দিন, রবিবার দিলীপ বলেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করার দিন চলে গিয়েছে। ভয় উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। ১৭ তারিখ সকালেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিন। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না। আমরা আছি। আর যদি বাড়াবাড়ি করে, শীতলকুচিতে দেখেছেন কী হয়েছে। জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’ কোচবিহারের শীতলকুচির ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির বিতর্কিত মন্তব্যের জেরেই মঙ্গলবার তাঁকে নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রসঙ্গত, দিলীপের মন্তব্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।

এদিকে, গত ২৯ মার্চের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে সতর্ক করে দিল নির্বাচন কমশিন। শুভেন্দুর জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৯ মার্চের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দুকে জবাব দিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন, শুভেন্দু জবাব দেন ৯ এপ্রিল। শুভেন্দুর জবাবে মোটেও সন্তুষ্ট হয়নি নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু থাকাকালীন জনসমক্ষে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করা থেকে তিনি যেন বিরত থাকেন।

নন্দীগ্রামে প্রচারের সময়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেগম বলে সম্মোধন করেছিলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর এই ধরনের মন্তব্য নিয়েই বিতর্কের ঝড় ওঠে। এবিষয়ে গত ৮ এপ্রিল নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে নোটিশ পাঠায় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের পাঠানো নোটিশে জবাবও দেন শুভেন্দু। শুভেন্দু তাঁর লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার অভিপ্রায় তাঁর নেই। তাঁর কোনও মন্তব্যে কেউ কোনও আঘাত পান সেটা তিনি চান না। একইসঙ্গে ভোট নেওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িকতা আশ্রয় তিনি নেননি।তিনি ও তাঁর দল গণতন্ত্র ও নির্বাচন কমিশনের মত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর শ্রদ্ধাশীল। চিঠিতে শুভেন্দু দাবি করেছেন, তিনি কোনও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। কিন্তু শুভেন্দুর সেই চিঠি সন্তুষ্ট করতে পারেনি নির্বাচন কমিশনকে। কমিশন জানিয়েছে, শুভেন্দু নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ভবিষ্যতে যেন তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

এবার বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন শোকজ করল বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আজ রাত ১১ টার মধ্যে কমিশনের শোকজের ভিত্তিতে জবাব দিতে বলা হয়েছে সূত্রের খবর।

মূলত অনুব্রত’র ‘খেলা হবে, ভয়ঙ্কর খেলা হবে’ এই কথাতেই আপত্তি তুলে আগেই বীরভূমের নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে চিঠি দেয় জেলা বিজেপি। তাদের দাবি, মিছিল কিংবা মিটিং-এ বারবার ‘খেলা হবে, ভয়ঙ্কর খেলা হবে, ব্যাট বল নিয়ে খেলা হবে। এই খেলায় আম্পায়ার নির্বাচন কমিশন ও আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।’ এই মন্তব্য বারবার জেলাজুড়ে করছেন তৃণমূল নেতা। আদপে এটা কোনও খেলা নয়, প্রচ্ছন হুমকি দিচ্ছেন অনুব্রত, এই মর্মে কমিশনে চিঠি দেয় বিজেপি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তৃণমূল নেতাকে আজ শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। বীরভূম জেলা বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, জনসভা থেকেই বারবার হুমকি দিচ্ছেন অনুব্রত। শেষ দফায় বীরভূমে নির্বাচন, এইভাবে ভয় দেখালে ভোটারদের মনে ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়াতে পারে। তাই অবিলম্বে অনুব্রতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *