BRAKING NEWS

পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোটে হোঁচট, ২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা বামফ্রন্টের,পৃথক প্রার্থী দিতে চায় কংগ্রেসের একাংশ

কলকাতা, ১৫ মার্চ (হি.স.) : পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা রেখেই ২৫ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল রাজ্য বামফ্রন্ট। যদিও বিমানবাবুর বক্তব্য, তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী ভোট যাতে ভাগাভাগি না হয়, সেটা রুখতেই ওই আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দল। বেশ কয়েকদিন ধরেই টানাপড়েন চলছে। আসন সমঝোতা নিয়েসিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের আলোচনা চলছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতেও এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে বামেদের সঙ্গে জোট মানতে রাজি নয় কংগ্রেসের একাংশ| শুক্রবার বাম তালিকা প্রকাশের পর একথা জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের পরিষদীয় প্রধান আব্দুল মান্নান| তাঁরা জানান, ২-১ দিনের মধ্যেই কংগ্রেস প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ হবে| সব আসনেই প্রার্থী দেবে কংগ্রেস| প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র অবশ্য এখনও জোটের দরজা খুলে রাখতে চাইছেন|

গত কয়েক মাস ধরেই নানা মহলে প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠছিল বাম-কংগ্রেস এবং তৃণমূল-কংগ্রেস জোট নিয়ে| ২৫ জানুয়ারি গৌরব গগৈ, সোমেন মিত্র-সহ আরও অনেকে বৈঠকে বসেন| শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ জানিয়ে দেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট নয়৷ রাজ্যে কোনও ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস জোটবদ্ধ হবে না৷ বিধান ভবনের বৈঠকের শেষে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সমস্তরকম সম্ভাবনা খারিজ করেন কংগ্রেস নেতারা৷

এর পর বামেদের সঙ্গে জোট হবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ মাসের গোড়ায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে চিঠি লেখেন প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্র। চিঠিতে সোমেন জানান, বিজেপিকে রুখতে এবং তৃণমূলকে রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট করা জরুরি। পাশাপাশি রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসন যে কর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে সেটাও জানান সোমেন। এই দুটি আসন এখন সিপিএমের দখলে। তাই ওই দুটি কংগ্রেসকে দিতে আপত্তি আছে তাদের। এর ঠিক একদিন আগে লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা করতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন সাংসদ অধীর চৌধুরি। দিল্লিতে তাঁদের দু’জনের মধ্যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

গত ১০ মার্চ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর হস্তক্ষেপে জোটের জট কাটে | ঠিক হয়, বামেদের শর্ত মেনে লোকসভায় জোট করেই লড়বে কংগ্রেস। গেল। কংগ্রেস শেষমেশ রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসন দুটির দাবি থেকে সরে আসতে সম্মত হল। দিল্লির ১০ জনপথ ও এক গোপালন ভবনের মিলিউ উদ্যোগেই রফা সূত্র মিলল। ওই সন্ধ্যায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেন। রায়গঞ্জে প্রার্থী মহম্মদ সেলিম আর মুর্শিদাবাদের টিকিট দেওয়া হয় বদরুদ্দোজা খানকে। উভয়েই দুই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন গত লোকসভায়। এর পরই সোমেন মিত্র তোপ দাগেন বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের উদ্দেশ্য। রাহুল গান্ধীর কাছেও নালিশ জানান। রাজ্যের অবশিষ্ট আসনগুলি নিয়ে সমঝোতার পথ প্রশস্ত করতে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্ব ১১ মার্চ নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনা শুরু করে। সিপিএমের তরফে রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নানদের মতো কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে ফোনে আলোচনা সারেন। কংগ্রেসের হাত থাকা চার আসন ছাড়াও উত্তর কলকাতা, ডায়মন্ড হারবার, বসিরহাট, জলপাইগুড়ি, পুরুলিয়া, দার্জিলিং, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি আসনে প্রার্থী দিতে চায় কংগ্রেস। সিপিএম কোনও কোনও আসনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই নামও কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ২৫ জনের তালিকা ঘোষণার পর সোমেনবাবু জানান, \”বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে| আমরা ২-১ দিনের মধ্যে রাজ্যের কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব| \”আব্দুল মান্নান সন্ধ্যায় ‘হিন্দুস্থান সমাচারকে বলেন, “বামেরা একের পর এক সমঝোতার ভিত নষ্ট করছে| আর, নাটক করে বা ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই| আমরা ৪২ টি আসনেই প্রার্থী দেব|”

এদিকে, এদিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল রাজ্য বামফ্রন্ট। ২৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বামেরা। বসিরহাট ও পুরুলিয়া আসন দুটি নিয়ে শরিকি টানাপোড়েনে আটকে গিয়েছিল বামেদের প্রার্থী ঘোষণা। এবার ২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল রাজ্য বামফ্রন্ট। রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ দুটি আসনই গতবার জিতেছিল সিপিএম। ওই আসনে জয়ীদের ফের প্রার্থী করা হয়েছে। ছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের জেতা চারটি আসন।

দার্জিলিঙে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ প্রার্থী দাঁড় করানো হবে। বাকি ১২টি আসন নিয়ে কংগ্রেসের আলোচনা হবে জানিয়েছে বামেরা। শরিকদের ৯টি আসনে ভাগ বসায়নি সিপিএম। পুরুলিয়া ও বসিরহাট নিয়েও শরিকদের আবদার মেনে নিয়েছে আলিমুদ্দিন।
আজ এক প্রেস বিবৃতিতেতে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে বিজেপি- তৃনমূল বিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয় সেই লক্ষ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আগে যা আলোচনা হয়েছে তার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, পুরুলিয়া বসিরহাট আসন দু’টিতে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে চায়। গত ১৩ মার্চ বামফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে। শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠকের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে পুরুলিয়া আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং বসিরহাট আসনে সিপিআই প্রার্থী দিলেও কংগ্রেস যদি মনে করে এই দুটি আসনে জয়ের জন্য প্রার্থী দেবে তবে তারা তা দিতে পারে।

বিমান বসু জানান, এর আগেই বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কংগ্রেসের জেতা চারটি আসনে বামফ্রন্ট কোন প্রার্থী দেবে না। কংগ্রেসও অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বামফ্রন্টের জেতা দুটি আসনে প্রার্থী দেবে না। সেই অনুযায়ী রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসনে প্রার্থীদের নাম বামফ্রন্ট আগেই ঘোষণা করেছে। এদিনের বৈঠকে এই দুটি কেন্দ্র সহ ২৫টি আসনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ১৭টি আসনের কয়েকটিতে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, কয়েকটিতে বামফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বামফ্রন্টের বাকি আসনগুলির প্রার্থীদের নাম দু-তিনদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। এমনও হতে পারে দু-একটি আসনে উভয়পক্ষের সর্বসম্মত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আজ জানান বিমান বসু। বিমান বসু জানান, বামফ্রন্টের বাকি আসনগুলির প্রার্থীদের নাম দু-তিনদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে।
দমদম থেকে বাম প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য | দক্ষিণ কলকাতা থেকে প্রার্থী হলেন সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায় | বসিরহাট থেকে দাঁড়ালেন সিপিআইয়ের পল্লব সেনগুপ্ত | বনগাঁ থেকে দাঁড়ালেন সিপিএমের একবারের সাংসদ অলকেশ দাস | দুর্গাপুর থেকে দাঁড়ালেন সিপিএমের যুব নেতা আভাস রায়চৌধুরী | রানাঘাট থেকে প্রার্থী হলেন নদীয়ার প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএম নেত্রী রমা বিশ্বাস | পুরুলিয়া থেকে দাঁড়ালেন ফরোয়ার্ড ব্লকের বীর সিং মাহাতো | বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে সিপিএম প্রার্থী হলেন ঈশ্বরচন্দ্র দাস | আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না হলেও মুখে মুখে বহুদিন থেকে ঘুরছিল এই প্রার্থীদের নাম | পাশাপাশি কংগ্রেসের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১৪টি আসন | সূত্রের খবর, বর্ধমানে একটি আসনে প্রার্থী দিতে চেয়েছিল কংগ্রেস | তবে বর্ধমানে তিনটি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম |

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকা বামেদের শক্তি যে ক্রমেই ক্ষয়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা | কিন্তু এরও অনেক আগে থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস তৈরির পর জাতীয় কংগ্রেসের জনসমর্থন একেবারে তলানিতে ঠেকেছে ৷ এই দুই শক্তি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা করেছিল ৷ তাতে লাভ না হলেও কিছুটা রক্ষে হয়েছিল | তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনেও সমঝোতা জোটের পথে হাঁটছে দুই শিবির ৷ কিন্তু ভোট ঘোষণা হয়ে গেলেও আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পারেননি দু’দলের নেতারা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *