BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষের রোজগার সৃষ্টি হয়েছে, এক বছরের খতিয়ান মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ৯ মার্চ (হি.স.): ত্রিপুরার বিজেপি ও আইপিএফটি জোট সরকার নির্বাচনের আগে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা করেছে। জোট সরকারের এক বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে শনিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে খতিয়ান দিতে গিয়ে এ তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি-র প্রদেশ সভাপতি বিপ্লবকুমার দেব।

সাংবাদিকের উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত এক বছরে তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল নেশাবিরোধী অভিযান। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে রাজ্যে নেশা কারবারিদের এক বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। এর সঙ্গে বহু রাঘবোয়াল জড়িত ছিল। এক বছরে নতুন সরকারের কাছে এটি একটি বড় সাফল্যও, কারণ এই অভিযান শুরু করার পর বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের নেশাদ্রব্য বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গ্রেফতারের পাশাপাশি এনপিডিএস-এর উপযুক্ত ধারায় মামলা চলছে ৭২৯ জনের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ২৫০ জন মহূর্তে জেল হাজতে রয়েছেন। তাছাড়া ৩৫০ জনের নামে এফআইআর হয়েছে।

নেশা কারবারের সঙ্গে ছিল মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ। নেশা বিরোধী অভিযান শুরু করার পর মহিলা সংক্রান্ত অপরাধও প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, মহিলাদের জন্য ত্রিপুরা সরকার নানান প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চালু হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প আগামীতে চালু হবে।

এ প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলার যাতে আরও উন্নতি হয় সে ব্যাপারে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, গত বিধানসভা নির্বাচন-পূর্ব বিজেপি-র প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশন অনুসারে বেতন দেওয়া হবে। সরকার গঠনের পর প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে সপ্তম বেতন কমিশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে কর্মচারীদের তা দেওয়াও হয়েছে। তাছাড়া আরও একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, সব ধরনের সামাজিক ভাতা ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ টাকা করা হবে। বর্তমানে ভাতা ১০০০ টাকা করা হয়েছে আগামী দিনে তা ২,০০০ টাকা করা হবে।

নির্বাচনের আগে বিজেপির অভিযোগ ছিল, বাম আমলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বহু সরকারি কর্মচারী। এবার তাঁর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তরে বিপ্লবকুমার দেব বলেন, এমজিএনরেগা প্রকল্পের কাজে দুন্নীতির দায়ে সাতজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। ঊনকোটি জেলার অন্তর্গত দুজন এসডিএম-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ধলাই জেলায় চার সরকারি কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই সরকার আসার পর রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে যেখানে ১০ শতাংশের নীচে ছিল রাজস্ব, এখন তা বেড়ে প্রায় ২৬ শতাংশ হয়েছে। ত্রিপুরার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটের বাইরে গিয়ে দুই দফায় ৭৫০ কোটি টাকা করে এবং পরে আরও ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এই প্রথম কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার সমমনোভাবাপন্ন, তাই রাজ্যের উন্নয়ন হচ্ছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী দেব। এক বছরের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যুইন আনারসকে রাজ্য ফল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। তাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। এছাড়া, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি)-এর অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলিকে অধিক শক্তিশালী করার লক্ষ্যেও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। যাতে আর্থিক ক্ষেত্রে এডিসি এলাকার উন্নতি হয়। তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্যে পরিণত করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী দেব বলেন, পর্যটনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের উন্নয়নে যা যা করা প্রয়োজন সব করবে ত্রিপুরার বর্তমান সরকার। তাছাড়া যুবকদের স্মার্টফোন দেওয়ার কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। অন্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের সভাপতি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ, এই দুউ দায়িত্বের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দায়ত্ব পালন করা অনেক কঠিন ব্যাপার। কেননা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের ৩৭ লক্ষ মানুষের কথা ভাবতে হয়। অপরদিকে সভাপতি হিসেবে দলের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *