BRAKING NEWS

প্রত্যন্ত এলাকায় বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা

আগরতলা, ৯ মে: প্রত্যন্ত এলাকায় বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, মে মাসেও দেখা নেই পাঠ্যবইয়ের। পঠনপাঠনে উৎসাহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, কালঘুমে দপ্তর । 

মডেল রাজ্যে সবকা সাথ সবকা বিকাশের আমলে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় স্কুলশিক্ষা ব্যাবস্থা দস্তুরমতো বিপর্য্যস্ত। অথচ ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই গুণগত শিক্ষার বুলি আওড়ে মানুষের কান রীতিমতো ঝালাপালা করেছেন মডেল রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ।

শিক্ষায় নাকি এখন সারা দেশকে পথ দেখাচ্ছে ত্রিপুরা। সুশাসনের রাজ্যে নাকি এখন নতুন বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এক মহা যুগান্তকারী পরিবর্তন নাকি ঘটে গেছে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের দৌলতে।এসবই রাজ্যের হাল আমলের শিক্ষামন্ত্রী মুখনিসৃত বাণী। কিন্তু এসব বড় বড় বুলি সবটাই আসলে ফাঁকা আওয়াজ, বাস্তবের সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই। 

অথচ সাফল্যের কল্পকাহিনী প্রচার করতে করতে সুশাসনের প্রথম পাঁচ বছরের শিক্ষার ভার সামলানো মন্ত্রী মহোদয় এক বছর আগে শিক্ষা থেকে একেবারে রাতারাতি বিদ্যুৎ– এ স্থানান্তরিত হয়ে গেলেন।

রাজ্যের স্কুল শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে বলে দাবী করা সত্ত্বেও শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ার একমাস পরেও দেখা  নেই পাঠ্যবইয়ের।কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের হাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পরেও পৌঁছেনি পাঠ্যবই। 

খোয়াই মহকুমার পদ্মবিল ব্লকের অন্তর্গত কোন স্কুলেই নাকি এখন পর্য্যন্ত কোন ধরনের পাঠ্যবই পৌঁছেনি বলে খবর পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা সহ অভিভাবকেরা এই মর্মে অভিযোগ করে জানান যে, পদ্মবিল ব্লক এলাকার কোন স্কুলের একজন শিক্ষার্থীও এখন পর্য্যন্ত একটি পাঠ্যবইও পায়নি।

কিন্তু সরকারের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের নীতি নির্দেশিকা অনুসারে এপ্রিল মাসের পয়লা তারিখে শিক্ষাবর্ষ শুরু দিনেই স্কুলে স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের হাতে নতুন মলাটের গন্ধ মাখানো নতুন নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার কথা।অথচ এপ্রিল মাস গিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে আরো দুই তিনদিন পরেও দেখা নেই পাঠ্যবইয়ের।

 ছাত্র ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা অভিযোগ করে বলছেন যে, কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করে চলেছে রাজ্যের সরকার।শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছেনা।পড়ুয়ারা এই অবস্থায় স্কুলমুখী হতে চাইছেনা।পাঠ্যবইয়ের অভাবে স্কুলগুলোতে লাটে উঠেছে পঠন পাঠন।

এ সম্পর্কে পদ্মবিল ব্লক সেক্টরের বিদ্যালয় পরিদর্শক তথা সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের পদ্মবিল ব্লক প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর শচীন্দ্র দেববর্মাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে, পাঠ্যবই এখন পর্য্যন্ত প্রায় অর্ধেকের মতো এসেছে। যা এসেছে তা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এটা সত্যি যে, পাঠ্যবইয়ের সবটা পরিমাণ এখনো আসেনি।পাঠ্যবই আসতে দেরী হচ্ছে এটা ঠিক।

আগরতলা থেকে পাঠ্যবই এখানে এসে পৌঁছাতে অনেকটাই দেরী হচ্ছে বলে নিজেও স্বীকার করেন বিদ্যালয় পরিদর্শক শচীন্দ্র দেববর্মা। ঠিক কী কারণে এই দেরী হচ্ছে তা তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।তবে আগামী  কয়েকদিনের মধ্যে পাঠ্যবই এসে পৌঁছাবে বলে এস সি ই আর টি থেকে নাকি জানানো হয়েছে বলে জানান।

বিদ্যালয় পরিদর্শক যদিও অর্ধেক পাঠ্যবই বিতরণের কথা বলছেন।কিন্তু পদ্মবিল ব্লকের অনেক স্কুলের একজন শিক্ষার্থীও এখন পর্য্যন্ত একটি পাঠ্যবইও পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।প্রশ্ন উঠেছে , তাহলে অর্ধেক পাঠ্যবই কাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো।

উল্লেখ্য যে, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের হাতে বিনে পয়সায় স্কুল শিক্ষা দপ্তর পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে।আর নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদেরকে  সরকার থেকে সরবরাহ করা পাঠ্যবই কিনে নিতে হয়।কিন্তু খোয়াই মহকুমার পদ্মবিল ব্লকের স্কুলগুলোর ছাত্র ছাত্রীদের হাতে এখনো পর্য্যন্ত পৌছায়নি তাদের পাঠ্যবই।

পদ্মবিল ব্লক সেক্টরের অধীনে ব্লকের বিভিন্ন ভিলেজে মোট ৪১টি বিদ্যালয় রয়েছে।এরমধ্যে রয়েছে প্রাথমিক স্তরের স্কুল সহ মাধ্যমিক ও দ্বাদশ মানের স্কুল। আর ৪১টি স্কুলের মোট ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা হবে দুই হাজার সাতশোর মতো। 

বিদ্যালয় পরিদর্শক জানান যে, তিনি শুধুমাত্র নন এ ডি সি এলাকার স্কুলগুলো দেখাশোনা করেন।অর্থাৎ রাজ্য সরকারের পরিচালিত স্কুল।আবার সরাসরি এ ডি সি পরিচালিত স্কুলগুলো দেখার জন্য রয়েছেন পৃথক বিদ্যালয় পরিদর্শক।তিনি এ ডি সি — র শিক্ষা বিভাগের বিদ্যালয় পরিদর্শক।পদ্মবিল ব্লকের এলাকায় এ ডি সি — র বিদ্যালয় পরিদর্শকের অধীনে রয়েছে আরো পঁয়তাল্লিশটি প্রাথমিক স্তরের স্কুল।অর্থাৎ জে বি স্কুল।এসব স্কুলেও পাঠ্যবই আসেনি বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *