ঢাকা, ৩ মার্চ (হি. স.) : বাঙালির প্রাণের বইমেলার পর্দা পড়ার কথা ছিল শনিবার রাত ন’টায়। কিন্তু রাত দশটায়ও পাঠক-লেখকদের পদচারণায় মুখর ছিল সোহরাওয়ার্দি উদ্যান ও বাংলা একাডেমি। বইয়ের স্টল বন্ধ হচ্ছে, নিরাপত্তা কর্মীরা তাগাদা দিচ্ছে, কিন্তু যাই যাই করেও যাওয়া হচ্ছে না। ঠিক এগারো মাস বাকি আগামি একুশের বইমেলার। বিদায়ের সুরে সবাইকে বিষণ্ন করে তুলেছে। এক পাঠক মুহূর্তটিকে বর্ণনা করলেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, \”যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।\”
মেলার রীতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রকাশকদের দাবির প্রেক্ষিতে মেলার সময় দু’দিন বাড়ানো হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর বার্তা আসে, মেলার মেয়াদ বাড়ে দু-দিন। তাই শনিবার ছিল মেলার শেষ দিন। এবারের মেলার মাঝামাঝি সময়ে ও শেষ দিকের প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও বই বিক্রি বিগত কয়েক বছরের সাফল্যের সব রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমি ও বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি মিলিয়ে এবার ৮০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি বিক্রি করেছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকার বই।
আর প্রকাশকরা বিক্রি করেছেন ৭৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার বই। গতবার বাংলা একাডেমি বিক্রি করেছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বই। গতবারের তুলনায় বাংলা একাডেমি ৫০ লাখ টাকার বই বেশি বিক্রি করেছে।অন্যদিকে, গতবারের তুলনায় এবারের মেলায় প্রকাশকরা ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার বই বেশি বিক্রি করেছেন। গতকালের বিক্রি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। প্রকাশকদের হিসেবে গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি বেড়েছে শতকরা ১০ ভাগ। বই মেলার অতীত ইতিহাস থেকে জানা গেছে এর আগে আরও তিনবার বই মেলার সময় বাড়ানো বা কমানো হয়েছে।
এর মধ্যে ১৯৯১ সালে মেলা হয় ২৩ দিন। ১৯৯৫ সালে মেলার সময় বাড়ে সাত দিন। ১৯৯৬ সালে বাড়ানো হয় ছয় দিন। ১৯৯১ সালে ঈদের কারণে মেলার সময় কমানো হয়। তবে ৯৫ এবং ৯৬ সালে রাজনৈতিক কারণে সময় বাড়ানো হয়। এবারের মেলায় নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৮৩৪টি। বাংলা একাডেমির মতে, এর মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৫১টি। এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই, ১ হাজার ৬০৮। গল্পের বই ৭৫৭। উপন্যাস ৬৯৮। প্রবন্ধ ২৭২। ছড়া ও শিশুতোষ বই বেড়িয়েছে ২৯৮টি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১১০। তবে প্রকাশকরা জানান, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে উপন্যাস।