BRAKING NEWS

অভিনন্দনের মানে পাল্টে দিয়েছে ভারত, পাকিস্তানকে খোঁচা দিয়ে জানালেন প্রধানমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘরে পাকিস্তান, দাবি অমিতের

নয়াদিল্লি, ২ মার্চ (হি.স.):অভিনন্দনের অর্থ পাল্টে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান-এর দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শনিবার এমনই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন মধ্যপ্রদেশের উমারিয়ায় দলীয় সভায় এমনই জানালেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘরে পাকিস্তান। কোনও দেশ পাকিস্তানকে সমর্থন করছে না। এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহে প্রকাশ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপও দাগেন তিনি। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। দেশবাসী নিরাপত্তা বাহিনীর পাশে রয়েছে। পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে লৌহপুরুষ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।


রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নির্মাণ প্রযুক্তি ভারত ২০১৯ সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভারত যা করে গোটা বিশ্ব তা দেখে। অবিধানে থাকা শব্দের অর্থ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে ভারত। ইংরেজিতে অভিনন্দনের অর্থ এতদিন পর্যন্ত ছিল ‘কনগ্রেচুলেশন’। কিন্তু, এর মানে এখন পাল্টে গিয়েছে। শুক্রবার প্রায় পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা পর রাত ৯টা ২০মিনিট নাগাদ আট্টারি-ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতের মাটিতে পা রাখে অভিনন্দন বর্তমান। গত বুধবার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ভেঙে পড়ে ভারতের মিগ ২১ বাইসন। যার পাইলট ছিলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। পাকিস্তানের সেনা তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে অভিনন্দকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অবশ্য জানিয়েছেন, ‘শান্তির বার্তা দিতেই ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।’


এদিন নির্মাণ শিল্পে বর্তমান পরিস্থিতির সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে যে ক’টি দেশে নগরোন্নয়ন দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে ভারত অন্যতম। চার দেওয়াল মানেই বাড়ি নয়। স্বপ্ন ও প্রত্যাশা যেখানে স্বার্থকতা খুঁজে পায় সেটিই প্রকৃত বাড়ি। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে সুরক্ষা এবং মর্যাদার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। গোটা দেশজুড়ে এখনও বহু মানুষের নিজস্ব বাড়ি না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমস্যার সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেক ভারতবাসীর নিজস্ব পাকা বাড়ি নিশ্চিত করাটা তাঁর স্বপ্ন। বর্তমান সরকারের আমলে ১.৩ কোটি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আগের সরকার স্রেফ ২৫ লক্ষ বাড়ি নির্মাণ করে ছিল।মধ্যপ্রদেশের উমারিয়ায় বিজেপির ‘বিজয় সঙ্কল্প বাইক র্যাালি’-তে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তান এখন একঘরে। কোনও দেশ পাকিস্তানের পাশে নেই। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জন্যই এমন কূটনৈতিক জয় সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার জন্য রাহুল গান্ধীর নিন্দায় সরব হয়ে অমিত শাহ বলেন, সমস্ত বিরোধী দলগুলি বায়ুসেনার এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২৬/১১ জঙ্গি হামলার পর রাহুল গান্ধীর সাহস হয়নি পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার। তেমন কোনও সাহসই রাহুল গান্ধীর ছিল না। এয়ারস্ট্রাইক যে হয়েছে তা পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এবং সে দেশের সংসদ স্বীকার করে নিয়েছে। যে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তারাও মেনে নিয়েছে। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধী এয়ারস্ট্রাইক যে হয়েছে তা মানছেন না। সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের দিকে আঙ্গুল তোলার জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত এই সকল রাজনীতিবিদদের। বিরোধীরা যা বলছে তা খুশি পাকিস্তান। ভোটব্যাঙ্কের জন্য এমন রাজনীতি করছে কংগ্রেস।


অমিত শাহ আরও বলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জিতিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করার জন্য দেশবাসী অঙ্গীকারবদ্ধ। এক কোটিরও বেশি বিজেপি কর্মী বাইকে করে দেশের ৩৮০০টি জায়গায় গিয়ে বিজেপিকে জেতানোর বার্তা দেবে। বিরোধীরা টাকা এবং জাতপাতের নামে নির্বাচন লড়তে নেমেছে। অন্যদিকে জন সম্পর্ক বা লোক সম্পর্কের মাধ্যমে নির্বাচনী লড়াই চালাচ্ছে বিজেপি। দেশের ৫০ কোটি গরিব মানুষের জীবনের উন্নয়নের কাজ করেছে বিজেপি। আর্থিক বৃদ্ধিতে বিশ্বে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে ভারত। পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়ে দেশ এখন সুরক্ষিত। অন্যদিকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নির্বাচনে লড়তে নেমেছে কংগ্রেস।


এদিন রাজ্যসভার বর্ষীয়ান সাংসদ গুলাম নবি আজাদ বলেন, সন্ত্রাস দমন এবং তা নির্মূল করার জন্য প্রথমদিন থেকে অনড় ছিল কংগ্রেস। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমস্ত দলগুলিকে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সন্ত্রাসবাদ দমনে দেশের সামরিক বাহিনী যে সিদ্ধান্ত নেবে তা সমর্থন করবে কংগ্রেস।জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে গুলাম নবি আজাদ বলেন, সন্ত্রাসবাদের জন্য গত ৩০ বছরে রাজ্যের বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে শিক্ষা এবং উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল রাজ্য। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়ে গেলে রাজ্যবাসী খুশি হবে। ফের রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি হবে। পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে এবং আর্থিক পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে।বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে গুলাম নবি আজাদ বলেন, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর কংগ্রেসের সমস্ত দলীয় বৈঠক, সভা বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিজেপি কোনও সভা বাতিল করেনি। যখন কংগ্রেস সহ বিরোধীরা শহিদদের স্মরণ করছে তখন শাসক দল বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে।শনিবার বিহারের মোতিহারির নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তি এবং দৃঢ় সঙ্কল্পের জন্য অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে লৌহপুরুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

পুলওয়ামা হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন শহিদদের রক্ত ব্যর্থ হবে না। ১৩ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গিঘাঁটিগুলি গুড়িয়ে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়া সত্বেও শুক্রবার দেশে ফিরে এসেছে উইনিং কম্যান্ডার। এর থেকেই শক্তিশালী সরকারের দৃঢ় সঙ্কল্পের পরিচয় পাওয়া যায়।নাম না করে কেন্দ্রে আগের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে যোগী আদিত্যনাথ বলেন, আগেও কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ছিল। কিন্তু সঙ্কল্প না থাকার জন্য জঙ্গি দমন অভিযানে ব্যর্থ হয় তারা। আগে পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের দেশের ভেতরে ঢুকে হামলা চালাত। কিন্তু এখন আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে গিয়ে নিকেশ করে চলে আসে। আগে চিনা বাহিনীও ভারতীয় সীমান্তে ঢুকে পড়ত। কিন্তু ডোকলাম থেকে প্রমাণিত হল যে ভারতীয় সেনাবাহিনীও প্রতিরোধ গড়তে পারে।পাশাপাশি কৃষিবান্ধব, গরিবদের অনুকূলে প্রকল্পগ্রহণ করার জন্য কেন্দ্রের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। পাশাপাশি দলিতরা যে উপকৃত হয়েছে তাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *