নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ ফেব্রুয়ারী৷৷ রোজগার মানেই কি শুধু সরকারী চাকুরী? এই প্রশ্ণ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের দাবি, স্বনির্ভরতাই হচ্ছে রোজগারের প্রকৃত অর্থ৷ তাঁর কথায়, বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের কর্মহীন বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ করার জন্য কাজ করে চলেছে৷ সরকার বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে এবং ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে৷ বুধবার বিধানসভায় বিধায়ক রঞ্জিত দাসের উল্লেখপর্বে জরুরী জনস্বার্থে আনা একটি নোটিসের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা জানিয়েছেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আগে বুঝতে হবে রোজগারের সংজ্ঞা কী৷ সাথে জানতে চেয়েছেন, রোজগার মানেই কী শুধু সরকারি চাকুরী? তাঁর কথায়, স্বনির্ভরতাই হচ্ছে রোজগারের প্রকৃত অর্থ৷ সেটা কোন ব্যবসাও হতে পারে আবার চাকুরীও৷ তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, এক সময় বুঝানো হত রোজগার মানেই হচ্ছে শুধু সরকারি চাকুরী৷ কিন্তু, বাস্তব সত্য হল বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান শুধুমাত্র সরকারি দপ্তরগুলিতে চাকুরী দিয়ে করা সম্ভব নয়৷
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখে মেগা ফুডপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে৷ কৃষক সহ সব অংশের বেকাররা এতে উপকৃত হবেন৷ চলতি বছরে ৮২০টি নতুন অতি ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারী শিল্পের নথিভূক্তকরন করা হয়েছে৷ এতে প্রায় চার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তিনি জানান, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৪৬৯৮ জন গ্রামীণ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৫৩৪ জন সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান পেতে সক্ষম হয়েছে৷ তিনি বলেন, ২৯তম ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলা ২০১৯-র সাফল্য প্রমাণ করে রাজ্যের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ৷ গত বছর এই মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা যেখানে ছিল ৯৫ জন সেখানে এ বছর অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯২ জন৷ গতবছর যেখানে ৬০ লক্ষ টাকার মত পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়েছিল সেখানে এ বছর বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার সামগ্রী৷ এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যাচ্ছে স্বরোজগারের দিকে ত্রিপুরা ঝুকছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের লক্ষ্যে একটি নতুন নিয়োগনীতি তৈরী করেছে৷ সরকারি সমস্ত নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে৷ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজন পোষণ ও দুর্নীতি দূর করতেই তৈরী হয়েছে এই নতুন নিয়োগনীতি৷ এতে রাজ্যের সমস্ত যুবক-যুবতীরা লাভবান হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন৷ সাথে যোগ করেন, ইতিমধ্যে টিচার্স রিক্রটমেন্ট বোর্ড টিচার্স এলিজিবিলিটি টেষ্টের মাধ্যমে ৯৮৩ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করেছে৷
অন্যান্য দপ্তরগুলিও প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগ করার লক্ষ্যে কাজ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ২০১৮-১৯ বছরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যে ২টি নতুন ইণ্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন গড়ার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর সাথে সঙ্গতি রেখে রাজ্য সরকার ২টি নতুন আই আর ব্যাটেলিয়ন গঠনে রিক্রটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য ২০১৪টি পদ সৃষ্টি করেছে৷ নিয়োগ প্রক্রিয়া শীঘই শুরু হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একদিকে যেমন স্ব-রোজগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি সরকারি চাকুরীও দেওয়া হবে৷ তাঁর বক্তব্য, ভিশন ডকুমেন্ট ৫ বছরের জন্য তৈরী হয়েছে এটা মনে রাখা উচিৎ৷ মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, রোজগার মানে শুধু সরকারি চাকুরী নয়, এই মানসিকতাই গড়ে তুলতে হবে৷ অর্থের সংস্থান হলে সরকারি চাকুরীরও ব্যবস্থা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, পর্যটন হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রোজগারের ব্যবস্থা করা যায়৷ তাই রাজ্য সরকার বিশেষত ধর্মীয় পর্যটন, হেরিটেজ ট্যুরিজম, ইকো-ট্যুরিজম ইত্যাদির বিকাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে৷ সাথে যোগ করেন, পর্যটনের প্রসারের দিকে লক্ষ্য রেখে রাস্তার দু’ধারে ফুল, ফল ইত্যাদির গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এই গাছগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি পরিবারকে মাসে ২০০ টাকা করে দেওয়া হবে৷ এতে একদিকে যেমন এই পরিবারগুলির রোজগারের ব্যবস্থা হবে তেমনি অন্যদিকে পর্যটকরাও আকৃষ্ট হবেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, উত্তর পূর্বাঞ্চলের আই টি হাব হিসাবে ত্রিপুরাকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এর মাধ্যমেও রাজ্যে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুুযোগ সৃষ্টি হবে৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত ত্রিপুরাকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার দিকে লক্ষ্য রেখে নেয়া হচ্ছে৷