BRAKING NEWS

নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত বিএনপি-র : বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীোনও নির্বাচন নয়

ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি (হি.স.): বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীন আর কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। ফলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাঁকে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। বুধবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সব নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, বর্তমান সংসদে যোগদানের ব্যাপারে কী আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অংশ নেন।জানা গিয়েছে, বৈঠকে দলের চেয়ারপার্সন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জাতীয় সংসদের পুননির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি প্রণয়ন, ভবিষ্যতে ভোটাভুটির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি গঠন,আগামি মার্চে মেয়াদ শেষে দলের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন এবং নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের লাভ-ক্ষতির মূল্যায়ন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনও কর্মসূচি নেই। নেতারা বলেছেন, তাঁর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি না দিলে নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হবেন। তাঁদের ধরে রাখা কঠিন হবে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য শুরু হয়েছে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাবন্দী হন। আগামি ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতির পর বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনও নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায় না। কারণ, সব নির্বাচনের ফলাফলই পূর্বনির্ধারিত এবং ইসির ভূমিকাও একই থাকবে। তাই শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বৈধতা দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না। এই মনোভাবের কথা বিএনপি শিগগির ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দু’বার বৈঠকে বসেছেন। দু’বারই নতুন করে দল পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। জানা গিয়েছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দু’জন জ্যেষ্ঠ সদস্য নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা বলতে চান, যে আশা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল,তা পূরণ করতে শীর্ষ নেতৃত্ব সমর্থ হননি। নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিনের চিত্রও ঐক্যফ্রন্ট ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। এ ছাড়া সাত দফা দাবির ন্যূনতম পূরণ না হওয়ার পরও নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন একজন নেতা। ওই নেতা বলেন, বলা হল আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কথা অনুযায়ী কাজ হয়নি। আন্দোলন গড়ে তোলা হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়,সামনের দিনগুলোতে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ঐক্যফ্রন্ট কী ভূমিকা রাখে, তা দেখবেন তাঁরা।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বর্তমান ভোটবিহীন সরকারকে পরাজিত করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের সেতুবন্ধ আরও দৃঢ় করার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তিনি গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, একটি কথা আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা যে কথাই মনে করুন না কেন ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ২০ দলীয় জোট যখন গঠন করা হয়, তখন একই কথা ছিল। ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠন হয়, তখনো একই প্রশ্ন এসেছে। ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের মধ্যে যে সেতুবন্ধ, সেটার অবশ্যই ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন ছিল এবং প্রয়োজন আছে। এখন আরও বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।

আগামি মার্চ মাসে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির সম্মেলন হয়। জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন করে গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ের মতো এবার ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করার প্রস্তাব আসে। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলেছেন, গত কয়েক বছরের আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অনেক যোগ্য নেতা বেরিয়ে এসেছেন। সে অনুযায়ী তাঁদের সাংগঠনিক পদে আনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *