BRAKING NEWS

মন্ত্রিসভায় স্থান না পেয়ে ক্ষোভ, ১৪ দলের শরিকরা এখন বিরোধী দলে বসতে ইচ্ছুক

ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি (হি.স.): শাসক আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের দুই শরিক-বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকায় এই দুই দলই অবতীর্ণ হতে চায়। মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়ার পর দল দু’টির শীর্ষ নেতাদের কথায় এমনই আভাস পাওয়া গিয়েছে। তাদের মতে, মন্ত্রিসভায় রাখা না রাখার বিষয়টি একান্তই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। প্রধানমন্ত্রী যদি চান, বিরোধী দলের আসনেই বসবেন, পাশাপাশি সংসদে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন তারা।


সূত্রের খবর, সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়া, সরকারের বাইরে থেকে বিরোধী দল হিসেবে সংসদের ভিতরে ও বাইরে কার্যকর ভূমিকা রাখার বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেবেন শরিক দলগুলি। তবে আপাতত নিজেদের ঘর গোছানোকেই প্রাধান্য দিচ্ছে তারা। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রস্তুতির দিকেও মনোযোগ দেবে দলগুলি। ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আগামি মে মাসে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সম্মেলন থেকে পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল ও পথচলা ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আগের মেয়াদে সরকারে থেকেও সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করেছি। বিশেষ করে অর্থ পাচার, ব্যাঙ্কিং খাতের নৈরাজ্য, শেয়ার কেলেঙ্কারি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ-সহ নানা ইস্যুতে সংসদে এবং সংসদের বাইরে কথা বলেছি। এবার যেহেতু সরকারে নেই, সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকারের ভুলত্রুটিগুলি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরব।

রাশেদ খান বলেন, আওয়ামি লিগের সঙ্গে মিলে আমরা অতীতে জোটগতভাবে আন্দোলন, নির্বাচন ও পরে সরকার গঠন করেছি। এবারও একসঙ্গে নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পর সরকারে জোটের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগ সভাপতি শেখ হাসিনা শরিকদের তার মন্ত্রিসভায় রাখবেন কী রাখবেন না, সেটির পুরো এখতিয়ার তার। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তিনি চাইলে আমরা বিরোধী দলেই থাকব, সংসদে কার্যকর ভূমিকা পালন করব।জানা গিয়েছে, মন্ত্রিসভায় জায়গা না পাওয়ার পর আওয়ামি লিগের শরিক এ দুদলই পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে নিজ নিজ দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি আগামি ২০ জানুয়ারি তাদের পলিট ব্যুরোর সভা আহ্বান করেছে। ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, আমরা সংসদে ও সংসদের বাইরে কার্যকর ভূমিকা পালন করব। পাশাপাশি দল সংগঠিত করার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে আরও বেশি মনোযোগী হব। এ ছাড়া সামনে উপজেলা নির্বাচন, তাই এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আমরা এখন গুরুত সহকারে নিচ্ছি।


৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৮৮ আসনে জয়ী হয়। এর মধ্যে আওয়ামি লিগ এককভাবে পায় ২৫৭ আসন। আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলির মধ্যে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, জাসদ ২, বাংলাদেশ জাসদ ১, তরিকত ফেডারেশন ১, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি আসনে জয়ী হয়। জোটগতভাবে নির্বাচন করে সরকার গঠন করলেও এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় শরিকদের কাউকে রাখেননি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করে আওয়ামি লিগ। এ সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে আনোয়ার হোসেন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) থেকে আ স ম আবদুর রবকে মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়। এর পর ২০০৮ সাল থেকে গত তিনটি নির্বাচনেই জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও গত দুই সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিকদের রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। তবে এবার সে ধারাবাহিকতায় ব্যত্যয় ঘটান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামি লিগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় শরিক দলগুলির অনেকেই নিজেদের পরবর্তী করণীয় এবং লক্ষ্য ঠিক করে সামনের দিকে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *