BRAKING NEWS

রাফায়েল ইস্যুতে লোকসভায় কংগ্রেসকে কড়া জবাব প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, কংগ্রেসের আমলে কমেছে এয়ারক্রাফটের সংখ্যা, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি রাহুলের

নয়াদিল্লি, ৪ জানুয়ারি (হি.স.) : রাফায়েল ইস্যুতে লোকসভায় কংগ্রেসকে কড়া জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। গত কয়েক মাস ধরেই চলছে বিতর্ক। সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে কংগ্রেসের প্রকাশ করা একটি টেপ। এবার বিতর্কের হাল ধরলেন সীতারামন নিজে। কংগ্রেস এয়ার ফোর্সের কথা চিন্তা করেনি বলেই উল্লেখ করলেন তিনি।শুক্রবার রাফাল ইস্যুতে ফের উত্তাল লোকসভা। আর এ নিয়ে সংসদে বিজেপি-কংগ্রেসের চাপানউতোর। শুক্রবার অগুস্তা হেলিকপ্টার চুক্তি নিয়ে লোকসভায় কংগ্রেসকে তোপ দাগলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এদিন লোকসভায় রাফাল চুক্তি নিয়ে বিতর্কের মাঝে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, \”হ্যাল-এর জন্য কুমিরের কান্না কাঁদছে কংগ্রেস। হ্যালকে কংগ্রেস সরকার মাত্র ৫৩ লক্ষ মকুব করেছিল। আমরা এক লক্ষ কোটির চুক্তি করেছি।\”এদিন তিনি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, “২০০৪ থেকে ২০১৫-র মধ্যে চিন ৪০০টি এয়ারক্রাফট যুক্ত করেছে বিমানবাহিনীতে। পাকিস্তানও দ্বিগুণ করেছে তাদের এয়ারক্রাফটের সংখ্যা। আর ভারতের ২০০২-তে ছিল ৪২ স্কোয়াড্রন বিমান, ২০০৭-এ সেটা কমে হয় ৩৬ স্কোয়াড্রন আর ২০১৪-তে সেটা আরও কমে হয়েছে ৩২ স্কোয়াড্রন।”

এছাড়া, রাহুল গান্ধী বারবার দাবি করেছেন কংগ্রেসের করা ১২৮টি রাফায়েলের চুক্তি পরিবর্তন করে এনডিএ মাত্র ৩৬টি রাফায়েলের চুক্তি করেছে। এই প্রসঙ্গে সীতারামণ বলে, “আসলে কংগ্রেস প্রস্তুত অবস্থায় মাত্র ১৮টি রাফায়েল কিনত। বর্তমান সরকার প্রস্তুত অবস্থা ৩৬টি রাফায়েল কিনছে।” কংগ্রেস আদতে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
রাফাল জেট নিয়ে লোকসভায় এদিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, \”বিপক্ষ দলের প্রবীণ সদস্যরা আমার উত্তর শুনতেই চাইছেন না, এটি খুবই দুঃখজনক। ক্ষমতায় যে-ই থাকুক না কেন দেশবাসীর জানা দরকার যে, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জামগুলি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে এর আগে যুদ্ধ হয়েছে। সময়মত প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য। আমাদের জরুরি অবস্থা বুঝতে হবে। চিন এবং পাকিস্তান ইতিমধ্যেই বড়সড় বহর তৈরি করেছে। ইউপিএ সরকার মাত্র ১৮টি ফ্লাইওয়ে যুদ্ধবিমান চেয়েছিল। ইউপিএ একটি অচল অবস্থা সৃষ্টি করেছে।\” আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া যাবে প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমান, জানালেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি আরও জানান, ১৪ মাসের মধ্যে এই আলাপ-আলোচনা শেষ হয়েছে এবং আগামী ২০২২ সালে ৩৬ টি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এদিন আরও বলেন, \”কংগ্রেস নিজেদের প্রতিরক্ষা করে চলেছে। আমরা জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে চুক্তি করেছি। কংগ্রেস কখনই যুদ্ধবিমান কিনতে চায়নি। রাহুল গান্ধী বেঙ্গালুরুতে হ্যাল-এর কাছে একটি সভায় বলেছিলেন, ‘রাফাল আপনাদের অধিকার। আপনাদের এই যুদ্ধবিমান প্রস্তুত করা উচিত’।\” শুক্রবার সংসদে কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খারগে বলেন, রাফাল চুক্তি নিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টে যে হলফনামা দিয়েছে তা মিথ্যে।

দেশের মানুষ ও সুপ্রিম কোর্টকে ধোঁকা দিয়েছে মোদী সরকার। তাই আমরা চাইছি বিষয়টি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে উঠুক।এই প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, \”আমি খাড়গেজী-কে বলতে চাই, প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তদন্তকারী স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য কে ছিলেন ? এই কমিটির একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি হ্যাল-এর ওপর রুষ্ট কারণ, তিন দশক পরেও হ্যাল প্রয়োজনীয় যুদ্ধবিমান তৈরি করতে পারেনি’। জরুরি অবস্থায় সবসময় দুটি স্কোয়াড্রন থাকে। ১৯৮২ সালে পাকিস্তান যখন এফ-১৬এস কেনে, সেই সময় ভারত সরকার তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে এমআইজি-২৩এমএফ -এর দুটি স্কোয়াড্রন কেনে। পরবর্তীকালে, ১৯৮৫ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে মাইরেজ ২০০০-র দুটি স্কোয়াড্রন এবং ১৯৮৭ সালে এমআইজি-২৯ -র দুটি স্কোয়াড্রন কেনে ভারত। কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, কংগ্রেস ভারতের প্ৰতিৰক্ষা বিষয়ে কোনও বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করবে না। অথচ নিজেরাই আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ফ্রান্সের সঙ্গে সেই আলোচনা করেছেন।\” শুক্রবার লোকসভায় বিজেপি-কংগ্রেস চাপানউতোরের মাঝে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, \”পার্লামেন্টে গত বছর ২০ জুলাই রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমি এই গোপনীয়তা চুক্তি সম্পর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু তিনি তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। তিনি আমাকেও বলেছিলেন, জনসাধারণের কাছে তার কোন সমস্যা নেই’ !। কে বিশ্বাসযোগ্য? আমি এই ব্যাপারে প্রমান চাই।\”


প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই কংগ্রেস নেতা সুরজেওয়ালা দাবি করেন, কিছুদিন আগেই গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্কর রাফায়েল বলেছেন, কেউ কিছু করতে পারবে না, সব ফাইল তাঁর কাছে রয়েছে৷ কংগ্রেস নেতা সুরজেওয়ালা গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিত রাণের একটি কথাবার্তার অডিও প্রকাশ্যে আনেন৷ সেখানেই পারিক্করকে ওই মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। সুরজেওয়ালা প্রশ্ন তোলেন, মনোহর পারিক্করের কাছে এমন কোন রহস্যজনক রাফায়েল ফাইল রয়েছে? তবে গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলেননি তিনি৷ তিনি অবশ্য একথা জানিয়ে দেন, ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল ফ্রান্সে রাফায়েল চুক্তির ঘোষণা হয়েছিল৷এদিকে, রাফাল ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুললেন রাহুল গান্ধী। যুদ্ধ বিমান কেনাকে কেন্দ্র করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি টুইটে লেখেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপদে ফেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিকস্তরে দেনায় ডুবে থাকা অনিল অম্বানিকে প্রধানমন্ত্রী রাফালের বরাত পাইয়ে দিয়েছেন।


অন্যদিকে শুক্রবার সাংবাদিকদের সামনেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হন রাহুল। তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী সংসদের বিতর্ক থেকে পালিয়েছেন। রাফাল চুক্তিতে কেন বিমানের সংখ্যা কমিয়ে ৩৬ করা হল। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার কি বায়ুসেনার সঙ্গে কথা বলেছিল! দাঁসোর ই-মেইল থেকে জানা যাচ্ছে, সরকার দাঁসোকে সাফ জানিয়ে দেয় রাফাল বরাত একমাত্র অনিল অম্বানির কোম্পানিকেই দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনিল অম্বানিকে ৩০০০০ কোটি টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *