বারুইপুর, ৮ আগস্ট (হি. স.) : মাস পাঁচেক আগে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে এদেশে এসেছিলেন বহু রোহিঙ্গা মুসলমান। সেখান থেকে দিল্লী, হরিয়ানা ঘুরে তাদের মধ্যে প্রায় শ’তিনেক রোহিঙ্গা এসে পৌঁছেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরে। বারুইপুর থানার অন্তর্গত হাড়দহ গ্রামে জনৈক হোসেন গাজী নামে এক ব্যক্তি এইসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেন। এই গ্রামেই গড়ে তোলেন আশ্রয় শিবির। টিন দিয়ে তৈরি প্রায় কুড়িটি ঘরে আশ্রয় নেন এই সমস্ত রোহিঙ্গারা। কিছুদিন থাকার পর অনেক রোহিঙ্গারা এখান থেকে অন্যত্র চলে গেলেও এখনও কয়েকটি পরিবার এখানে রয়েছেন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ও সম্প্রতি অসাম সরকারের তৈরি করা নগরপঞ্জীকরণের ফলে সেখানে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেই ঘটনায় আতঙ্কিত এ রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।
গত পাঁচ মাসে অনেক রোহিঙ্গা পরিবারই এখান থেকে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। কেউ গিয়েছেন জম্বুতে, তো কেউ গিয়েছেন বাংলাদেশে। তবে বেশীরভাগ রোহিঙ্গারাই বাংলাদেশে গিয়েছেন বলে দাবী এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হোসেন গাজীর। বর্তমানে চার পাঁচটি রোহিঙ্গা পরিবারের কুড়ি বাইশজন সদস্য রয়েছেন এই আশ্রয় শিবিরে। নিজেদের দেশ মায়ানমারে যেভাবে তাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে, নিজেদের মানুষদের খুন করা হয়েছে সেই স্মৃতির কথা মনে পড়লেই শিউরে উঠছেন তারা। তারা চান একটু শান্তি। আসামের নগরপঞ্জীকরণের ফলে সারা আসাম জুড়ে যে অস্থিরতা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে তাতে আতঙ্কিত এই আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরা। নিজেদের দেশের অবস্থা স্থিতিশীল হলে সেখানে ফিরে যেতে চান তারা। আর যদি তা না হয় তাহলে এখানেই শান্তিতে থাকতে চান তারা। বারুইপুরের হাড়দহ গ্রামে আশ্রয় নেওয়া এক রোহিঙ্গা শরণার্থী মাসুম আখতার বলেন, “ আমাদের মায়ানমার থেকে তারিয়ে দিয়েছে। ওখানে আমাদের বাড়ি, ঘর, জমি জায়গা সবই ছিল। আমাদের পরিবারের লোকেদের খুন করা হয়েছে। প্রান ভয়ে আমরা এখানে চলে এসেছি। আমরা একটু শান্তিতে থাকতে চাই। আর যদি আমাদের দেশে শান্তি ফেরে তাহলে সেখানেই ফিরতে চাই। না হলে এখানেই শান্তিতে স্বামী সন্তান নিয়ে থাকতে চাই”। এ বিষয়ে এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কর্ণধার হোসেন গাজী বলেন, “ রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছেন। হটাত করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তাদের এখান থেকে উৎখাত করতে যে পন্থা নিয়েছেন আমরা তার বিরোধিতা করছি। অন্যদিকে, আসাম থেকে যেভাবে বাঙালি,মুসলমানদের উৎখাত করার পদ্ধতি শুরু হয়েছে তাঁর ও বিরোধিতা করছি আমরা। আমাদের পাশে এই রাজ্য সরকার আছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ”।