BRAKING NEWS

রাজ্যে বন্যা মোকাবিলায় সেনা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ জুন৷৷ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীও যাতে বাড়ানো হয়, কেন্দ্রের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় সেনা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন৷ পাশাপাশি তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রাজ্যে দুর্যোহ মোকাবিলা বাহিনীর সংখ্যা বাঁড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন৷ এদিকে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জিব রঞ্জন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় কেবিনেট সচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সচিবের সাথে আলোচনা করেছেন৷ জানা গেছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ভারতীয় সেনাপ্রধানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে৷ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে৷ পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্যও কেন্দ্রের সাহায্য চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ কেন্দ্রের তরফেও সব রকম সহায়তার আশ্বাস মিলেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি সঞ্জয় মিশ্রা৷

এদিকে, বৃহস্পতিবার দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বৃষ্টিপাত হলেও গত কয়েকদিনের তুলনায় এদিন বৃষ্টিপাত অনেকটাই কম হয়েছে৷ ফলে, নদীগুলিতে জলস্তর নামতে শুরু করেছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন প্লাবিত এলাকায় জল কমতে শুরু করেছে৷ জানা গেছে, হাওড়া, কাটাখাল, গোমতী, খোয়াই, ধলাই, মনু, মুহুরী, ফেনি, জুরি এবং কাকড়ি নদীর জলস্তর বুধবারের তুলনায় কিছুটা কমেছে৷

গত কয়েকদিনের বন্যায় এখন পর্যন্ত সারা রাজ্যে ১৯৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ তাতে মোট ১৯০৬২ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে ঊনকোটি জেলায়৷ সেখানে ৯০টি ত্রাণ শিবিরে ১৩৬০৯টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া খোয়াই জেলায় ৩৪টি ত্রাণ শিবিরে ১৭৯৫টি পরিবার, ধলাই জেলায় ২৩টি ত্রাণ শিবিরে ৭৮৪টি পরিবার, দক্ষিণ জেলায় ১৮টি ত্রাণ শিবিরে ৮১০টি পরিবার, উত্তর জেলায় ১৭টি ত্রাণ শিবিরে ১৫৮৪টি পরিবার, পশ্চিম জেলায় ৬টি ত্রাণ শিবিরে ৩৮২টি পরিবার এবং গোমতী জেলায় ৮টি ত্রাণ শিবিরে ৯৮টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷

এদিকে, ভারি বর্ষণের ফলে সারা রাজ্যে প্রচুর বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত ১৮০টি বাড়ি আংশিক, ৭৩টি মারাত্মক ভাবে এবং ৭টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের দিক দিয়ে ধলাই জেলায় ভারি বর্ষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে৷ ধলাই জেলায় ১১০টি বাড়ি আংশিক, ৬৯টি বাড়ি মারাত্মক ভাবে এবং ১টি বাড়ি সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তাছাড়া, গোমতী জেলায় ২৩টি বাড়ি আংশিক, ২টি বাড়ি মারাত্মক ভাবে এবং ৬টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ গত ৫ জুন ঘূর্ণিঝড়ে ধলাই জেলায় ৪২টি বাড়ি আংশিক ভাবে এবং ২টি বাড়ি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷

বৃহস্পতিবার রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ রাজস্ব, স্বাস্থ্য এবং কৃষি ও পূর্ত দপ্তর বন্যায় ক্ষয় ক্ষতি নিয়ে মন্ত্রিসভায় প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছে৷ মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে আইনমন্ত্রী রতল লাল নাথ জানিয়েছেন, সম্প্রতিক কালে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করেনি৷ এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় অধীক বৃষ্টি হচ্ছে৷ ফলে, নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় নদীর জলস্তর নামতে শুরু করেছে৷ আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং উদ্ধার কার্যে এনডিআরএফের দুটি টিম শিলচর থেকে এসেছে৷ গাজিয়াবাদ থেকেও ১২৫জন এনডিআরএফ জওয়ান ৪৫টি বোট নিয়ে রাজ্যে এদিন রাতের মধ্যে বিমানযোগে রাজ্যে এসে পৌঁছাবেন৷ তাদের রাতেই উদ্ধারকার্যে ঊনকোটি জেলায় পৌছানো হবে৷ ভারতীয় বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্ঢার ইতিমধ্যে ঊনকোটি জেলার রাধানগরে এনডিআরএফের জওয়ানদের নিয়ে পৌঁছে গেছে৷  কুমারঘাটে একটি হেলিকপ্ঢার উদ্ধার কার্যের জন্য দাঁড় করে রাখা হয়েছে৷ পাশাপাশি অসম রাইফেলস, বিএসএফ এবং টিএসআরের জওয়ানরাও উদ্ধার কার্যে নেমেছেন৷ কৈলাসহরে বাঁধের যে অংশটুকু গতকাল ভেঙে ছিল পূর্ত দপ্তর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সারাইয়ের কাজ চলছে৷ এদিকে স্বাস্থ্য দপ্তরের থেকেও মেডিক্যাল টিম বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে৷ স্বাস্থ্য দপ্তর একজন চিকিৎসক, একজন জিডিএ, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন এমপিডব্লুউকে নিয়ে মোট ৮০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছে৷ বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে শুধু ঊনকোটি জেলার জন্য আরোও দশটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে৷ প্রত্যেক টিমের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং চিকিৎসা পরিষেবার সামগ্রী মজুত রয়েছে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন৷

এদিকে, বন্যায় রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ পূর্ত দপ্তর ওই রাস্তাগুলি সারাইয়ের উদ্যোগ নেবে৷ আইনমন্ত্রী আরোও জানিয়েছেন, রাজ্যে বর্তমানে ৭৩ দিনের চাল মজুত রয়েছে৷ গম মজুত রয়েছে ৩৮ দিনের৷ এছাড়া পেট্রোল ৮২৯ কেএল এবং ডিজেল ২৩২৯ কেএল মজুত রয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন আজ ধর্মনগর থেকে ডিজেল ২৪টি, পেট্রোল ১৭টি এবং কেরোসিন ১৬টি ট্যাংকার বাহি গাড়ি রওনা দিয়েছে৷ আইনমন্ত্রীর কথায়, ঊনকোটি জেলাতে চাহিদা অনুযায়ী চাল কিছুটা কম রয়েছে৷ কুমারঘাট গুদামে ২৫৪৫ মেট্রিকটন, কাঞ্চনবাড়ি গুদামে ৪০ মেট্রিকটন, ডোলুগাও গুদামে ৮২৭ মেট্রিকটন এবং গৌরনগর গুদামে ৫৭৭ মেট্রিকটন চাল মজুত রয়েছে৷ জরুরি ভিত্তিতে ধর্মনগর থেকে ঊনকোটি জেলার বিভিন্ন গোদামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ মেট্রিকটন চাল পাঠানো হয়েছে৷

এদিকে, ৮টি জেলায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে জমা পড়েছে৷ সে মোতাবেক ৮টি জেলায় ৫৩৪৭ হেক্টর কৃষি জমিতে ফসল নষ্ট হয়েছে৷ কৃষি মন্ত্রীর কথায়, ফসলে ক্ষতির পরিমাণ আরোও বাড়বে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *