BRAKING NEWS

নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত দুই উপত্যকার কংগ্রেস, রাহুলের হস্তক্ষেপ দাবি

গুয়াহাটি, ১৪ মে ( হি. স. ) : ভারতীয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে নিজেদের কর্মফলের জেরে দ্বিচারিতার দোষে আক্রান্ত কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব প্রচণ্ড চাপে পড়েছে। এমতাবস্থায় দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁর শরণাপন্ন হয়েছেন কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা।
মূলত, রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন গত ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের ক্যাবিনেট বৈঠকে প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মের বলি হয়ে যে বা যাঁরা ভারতে আসবেন তাঁদের নিরাপদ আশ্রয় বা নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গগৈ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই বরাক উপত্যকার তিন জেলা কংগ্রেস নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলেন পক্ষাবলম্বন করে তাঁদের স্থিতি স্পষ্ট করেছে। এর ঠিক বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে প্রদেশ তথা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কংগ্রেস নেতৃত্ব। এখন তাঁরা বলছেন, ৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে যে অসম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তার ভিত্তিতে নাগরকিত্ব বিল সংশোধন করতে হবে।
রাজ্যের তদানীন্তন মন্ত্রী তথা বরাক কংগ্রেসের নেতা গৌতম রায় যৌথ সংসদীয় কমিটির সাম্প্রতিক বরাক সফরের সময় গত ৮ মে ক্যাবিনেট বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের বোমা ফাটিয়েছিলেন। তিনি সেদিন এমন বলেছিলেন, প্রদেশ নেতৃত্বের বিপক্ষে গিয়ে তাঁরা বিলের পক্ষে মতামত তুলে ধরলেও তাঁকে শো-কজ নোটিশ দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারোর। তা বলে একপ্রকার তিনি প্রদেশ নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন। এ ঘটনার পর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। পরের দিন তিনি গুয়াহাটিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গৌতম রায়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিলেন, বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন তিনি। এর পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দুদিন আগে জনতা ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদীয় পরিক্রমা মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিও একই অভিযোগ তুলে ২০১৪ সালে বিলের পক্ষে সায় আছে বলে তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের তথ্য ফাঁস করেছিলেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে বিপক্ষ মতামত নিতে গত ৭ মে তিনদিনের জন্য অসম সফরে এসেছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি। গুয়াহাটিতে আয়োজিত শুনানির সময় এই বিলের চূড়ান্ত বিরোধিতা করেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। সে অনুসারে বরাক কংগ্রসকে এর বিরুদ্ধাচরণ করতে নির্দেশিকা দিয়েছিলেন প্রদেশ নেতৃত্ব। কিন্তু বাঙালি অধ্যুষিত বরাক কংগ্রেস সেই পথে হাঁটেনি। তাঁরা এর পক্ষে মতামত তুলে ধরলেও বলেছিলেন, ৭১ নয়, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকাকে বিদেশি বিতরণের ভিত্তিবর্ষ ধরে নাগরিকত্ব বিলের সংশোধন করা হোক। একইভাবে এর দুদিন পর হোজাইয়ে কংগ্রেসের আরেক বাঙালি নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ডা. অর্ধেন্দুকুমার দে-ও বরাক কংগ্রেসের সুরে আওয়াজ তুলে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন।
নিখিল ভারত মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা শিলচরের সাংসদ তথা যৌথ কমিটির অন্যতম সদস্য সুস্মিতা দেবও সরাসরি প্রদেশ কংগ্রেসে বিরুদ্ধে গিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যাতে পাস হয় সে ব্যাপারে তাঁর যুক্তি তুলে ধরেছেন। ঠিক সেভাবে বিলের পক্ষে মতামত তুলে ধরেছেন বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, প্রাক্তনমন্ত্রী সিদ্দেক আহমদ-সহ বরাকের তিন জেলা কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেসের এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দল। ক্ষমতার লোভে এমন চরম মিথ্যাচার ও ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ায় কংগ্রেসকে এ মুহূর্তে কাঠগড়ায় দাঁড় করেছেন রাজ্যের মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে কংগ্রেস আমলে ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত এবং বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সিনিয়র কংগ্রেস নেতৃত্ব দুই মেরুতে অবস্থান করায় বিপাকে পড়ে শেষ পর্যন্ত নিরুপায় প্রদেশ নেতৃত্ব রাহুল গান্ধীর হস্তক্ষেপ দাবি করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। চিঠিতে নাকি বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে দুই উপত্যকার কংগ্রেস দ্বিধাবিভক্ত। তাই এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে সর্বভারতীয় সভাপতিকে কিছু একটা করতে আবেদন জানিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি। এই চিঠি পেয়ে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝে রাহুল এ সম্পর্কে দায়িত্ব দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা অশোক গেহলট এবং সিপি জোশির ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *