BRAKING NEWS

পঞ্চায়েত মামলা : হাইকোর্টে ধাক্কা খেল নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার, নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ

কলকাতা, ২০ এপ্রিল (হি.স.): শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের সিঙ্গল বেঞ্চে জোর ধাক্কা খেল নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকার । কমিশনের ১০ তারিখের বিজ্ঞপ্তি হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেল । কমিশনের পূর্ব ঘোষিত নির্ঘণ্ট খারিজ করে দিলেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার । নতুন করে মনোনয়ন জমার দিন ঘোষণা করতে নির্দেশ দিলেন তিনি । একইসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের নতুন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতেও নির্দেশ দিলেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার । মনোনয়নের নতুন দিন ঘোষণার জন্য কমিশনকে নির্দেশ। রায়ের কপি হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন । হাইকোর্টের এই রায়কে নিজেদের নৈতিক জয় হিসেবে দেখছে বিজেপি সহ বিরোধীরা । এখন যথেষ্ঠ চাপে শাসকদল ।
হাইকোর্টের রায়ের পর এটা স্পষ্ট কোনওভাবেই পয়লা মে শুরু হচ্ছে না পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ অর্থাৎ,ভোট গ্রহণ হচ্ছে না ১, ৩, ৫ মে । পিছোছে পঞ্চায়েত ভোট ৷ এদিন ৩৫ পাতার রায় পড়ে শোনান বিচারপতি । মনোনয়ন পর্বে বিরোধীদের তোলা হিংসার অভিযোগকে মান্যতা দেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার । কমিশনের ১০ এপ্রিলের নির্দেশ খারিজ করে দেয় সিঙ্গল বেঞ্চ । ৯ এপ্রিল রাতে মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়িয়েও, ১০ এপ্রিল সকালে তা ফের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন । এদিন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার নির্দেশ দেন, ইচ্ছুক প্রতিনিধিদের ভোটে লড়ার সুযোগ করে দিতে হবে । সেই কারণে বাড়াতে হবে মনোনয়ন জমার সময়সীমা । তবে সেইসঙ্গে আদালত সুস্পষ্ট করে এটাও জানিয়েছে যে, ইতিমধ্যেই যেসব বৈধ মনোনয়ন জমা পড়েছে ও যে মনোনয়নপত্রগুলির পরীক্ষাপর্ব সমাপ্ত হয়েছে, সেগুলি মোটেই বাতিল করা হচ্ছে না । যতদিন সেই অতিরিক্ত একদিন মনোনয়ন পেশের সুযোগ না দেওয়া হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে না রাজ্য নির্বাচন কমিশন ।
মনোনয়পর্বে হিংসা, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়েও কমিশনের পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া সহ একাধিক ইস্যুতে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা । হাইকোর্টের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয় বিজেপি । তবে ১১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত মামলা ফিরিয়ে দেয় হাইকোর্টেই । বিরোধীদের সব অভিযোগ ও কমিশনের যুক্তি শুনে পঞ্চায়েত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত ।
এরপরই ১২ এপ্রিল পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের সিঙ্গল বেঞ্চ । সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩(ও) ধারাকে তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া একবার শুরু হয়ে গেলেও দেশের কোনও আদালত তাতে আর হস্তক্ষেপ করতে পারে না । তাই ডিভিশন বেঞ্চের কাছে অবিলম্বে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজের আর্জি জানান তিনি ।
তবে ডিভিশন বেঞ্চ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি খারিজ করে ১৬ এপ্রিল ফের সিঙ্গল বেঞ্চে ফেরত পাঠায় পঞ্চায়েত মামলা । একইসঙ্গে সিঙ্গল বেঞ্চকে নির্দেশ দেয়, প্রয়োজনে রোজ শুনানি করে দ্রুত পঞ্চায়েত মামলার নিষ্পত্তি করতে । তারপর থেকে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা তিনদিন রোজ সিঙ্গল বেঞ্চে পঞ্চায়েত মামলার শুনানি হয় । বামেরা আদালতে বলে, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে না । বিজেপির তরফে মনোনয়নের দিন বাড়ানোর দাবিও করা হয় আদালতে । বৃহস্পতিবার শুনানি পর্বের শেষে শুক্রবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার বিকেল সাড়ে ৪টেয় রায় ঘোষণা করেন । তবে, ভোটের নতুন দিন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট কিছু বলেনি । ফলে পুরোটাই এখন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোর্টে । স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচনের দিনক্ষণে পরিবর্তন আনতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে । এখন মামলার রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য নির্বাচন কমিশন উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আইনি জটিলতা আরও বাড়তে পারে বলেই কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবিদের ধারনা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *