BRAKING NEWS

তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের ভারত বনধে উত্তাল দেশের একাধিক রাজ্য, মৃত ৯

নয়াদিল্লি, ২ এপ্রিল (হি.স.): তফশিলি জাতি ও উপজাতি সংরক্ষণ আইন লঘু করা নিয়ে দলিত বিক্ষোভে উত্তাল দেশের একাধিক রাজ্য | মধ্যপ্রদেশে মৃত আটজন | রাজস্থানে এখনও পর্যন্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে| সোমবার দিনভর বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, পাঞ্জাব, দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাঠি, রড, তলোয়ার, ব্যাট হাতে চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ গুলি চালালে মধ্য প্রদেশের মোরেনা এবং গোয়ালিয়রে মৃত্যু হয়েছে মোট আটজনের। পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে মোট দুহাজার জনকে আটক করা হয়েছে। একথা জানান মধ্য প্রদেশের আইজি আইনশৃঙ্খলা মকরন্দ ডেউস্কর।
তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি সংরক্ষণ আইন শিথিল করার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয় ভারত বনধ | মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, বিহার, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড ও পঞ্জাব সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে হিংসাত্মক আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বহু বিক্ষোভকারী| সবচেয়ে বেশি গন্ডগোলের খবর পাওয়া গিয়েছে মধ্যপ্রদেশ থেকে| বিক্ষোভ সামাল দিতে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিওরে কার্ফু জারি করা হয় এবং সাগরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়| বিক্ষোভ চলাকালীন গোয়ালিওরে গুলির শব্দও শোনা গিয়েছে| মোরেনাতে রেললাইন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষোভকারীরা| আইজি আইন ও শৃঙ্খলা এম দেউস্কার জানিয়েছেন, গোয়ালিওর এবং মোরেনাতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে| মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১৯ জন, তাঁদের মধ্যে দু’জনের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক| প্রশাসন সূত্রের খবর, গোয়ালিওর জেলায় মঙ্গলবার সকাল ছ’টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে| ট্রেন এবং সড়ক অবরোধে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবহন পরিষেবা। টায়ার জ্বালিয়ে, দোকানপাট ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বহু গাড়িও। মেরঠে তিনটি বাসে আগুন লাগানো হয়। রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, পাঞ্জাবে ইন্টারনেট, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর, বোতল ছুড়লে পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জখম দু’পক্ষেরই অনেকে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে জখম হন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে অশান্তি ছড়িয়েছে রাজস্থানেও| রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে ভাঙচুর চালানো হয় শপিং মলে| এছাড়াও জয়পুরে রেললাইন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষোভকারীরা| রাজস্থানের ভরতপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা| রাজস্থান থেকে এখনও পর্যন্ত একজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে| রাজস্থানে আটক ৩০ জন।
পঞ্জাবের পাটিয়ালায় রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়, ফলে আটকে পড়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন| গোলমালের আশঙ্কায় পঞ্জাবে সিবিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ পঞ্জাবের সমস্ত স্কুল-কলেজ, ব্যাংক এবং যানবাহন পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবাও ৷
এদিকে উত্তরপ্রদেশের মিরঠের হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে সোমবার বহুজন সমাজ পার্টির নেতা এবং প্রাক্তন বিধায়ক যোগেশ বর্মাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে| এদিন জেলার এসএসপি জানিয়েছেন, হিংসা ছড়ান এবং হিংসায় উস্কানির দেওয়ার অভিযোগে ২০০ জনের বেশি জন মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে| মিরঠের এসএসপির বক্তব্য, যোগেশ বর্মার জন্যই এদিন মিরঠে হিংসা ছড়িয়েছে| মঞ্জিল সোনি এদিন জানিয়েছেন, যোগেশ সহ দু’শ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে|
দেশ জুড়ে দলিত ও আদিবাসী সংগঠনের ডাকা ভারত বনধের প্রভাব বিহারেও পড়ল| যদিও বড়সর কোনও উত্তেজনার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে বিহার সরকার সোমবার সকাল থেকে নাগরিক সুরক্ষার জন্য জায়গায় জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করেছিল| কিন্তু তা স্বত্বেও বিহার জুড়ে উত্তেজনা ছড়াল বনধ সমর্থকেরা| এদিন সকাল থেকেই ভোজপুর জেলায় সিপিআই(এমএল), ভীম সেনা সহ বেশ কিছু সংগঠনের সমর্থকেরা ট্রেন বনধ করে নাগরিক পরিষেবা ব্যহত করে দিয়েছে| এছাড়াও, এদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বনধ সমর্থনকারীরা গুরুয়া এলাকায় বনধ-এর পাশাপাশি রাস্তা অবরোধ করে রাখে| যার ফলে নিত্য যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে| প্রায় ১২ টা বাসের যাত্রীরা বনধের জেরে রাস্তার মধ্যে ফেঁসে যায়| বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বনধের চেহারা বড় আকার নেই| নানা জায়গা থেকে বনধের উত্তেজনার খবর আসতে থাকে| এদিকে গয়া-রজুলি রাস্তায়ও অবরোধ করে দেয় বনধ সমর্থনকারীরা|
এদিনের বনধের পশ্চিমবঙ্গে তেমন কোন প্রভাব না পড়লেও এবিষয়ে সরব হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | এদিকে ভারত বনধ-এর প্রভাব অসমের অধিকাংশ অঞ্চলেই পড়েনি। গুয়াহাটি রয়েছে তার স্বাভাবিক ছন্দে। তবে কয়েকটি অঞ্চলে ভারত বনধ-এর বিক্ষিপ্ত প্রভাব পড়়েছে বলে জানা গেছে। গোলাঘাট, তিনসুকিয়ায় ভারত বনধ-এর সৰ্বাত্মক প্ৰভাব পড়েছে। হিন্দিস্কুল রোডে টায়ারে আগুন ধরিয়ে বনধ সমর্থকরা সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাতজন পিকেটারকে গ্রফতার করেছে গোলাঘাট পুলিশ। উজান অসমের তিনসুকিয়ায়ও ভারত বনধ-এর সৰ্বাত্মক প্ৰভাব পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তিনসুকিয়ায় বনধ-কে সর্বাত্মক করতে তফশিলি জাতি ছাত্ৰ সংস্থা কোমর কষে ময়দানে নেমেছে। তফশিলি জাতি ও উপজাতি নিৰ্যাতন বিরোধী আইন সংশোধনীর দাবিতে তাঁরাও রাজপথে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন বনধ সমৰ্থকরা। বনধ-এর প্রভাবে আজ সকাল থেকে ব্যাহত হয়ে পড়েছে যানবাহন চলাচল।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছিল, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতিদের উপর অত্যাচার বন্ধের আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হচ্ছে| তাই এখন থেকে আর নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোনও সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না | তফশিলি জাতি ও উপজাতির উপর অত্যাচারের কোনও মামলা দায়ের করার আগে সেই ঘটনা ডিএসপি পর্যায়ের কোনও আধিকারিককে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে| এছাড়া এই ঘটনায় অভিযুক্ত কোনও সরকারি আধিকারিককে গ্রেফতারের আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে| শীর্ষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২ এপ্রিল ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল পিস্যান্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি, সিটু, জাতি অন্ত সংঘর্ষ সমিতি, রাষ্ট্রীয় সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সহ বিভিন্ন সংগঠন|
এদিকে এই মামলায় আজ ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে কেন্দ্র সরকার | এবিষয়ে তফসিলি জাতি এবং ‌উপজাতি সুরক্ষা আইন নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির প্রয়োজন নেই বলে সোমবার জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *