BRAKING NEWS

নির্বাচন দপ্তরের কর্মদক্ষতা প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াল, ত্রিপুরায় ভোটের প্রকৃত হার নিয়ে ধোঁয়াশা, ছয় কেন্দ্রের ছয় বুথে পুনঃভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ ফেব্রুয়ারি৷৷ ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের ছয়টি বুথে পুনঃভোট শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে৷ এদিন কোন

৫৪ কদমতলা কুর্তী বিধানসভা কেন্দ্রের ৯ নং বুথে পুনঃভোটে ভোটারদের দীর্ঘ লইন৷ সোমবার তোলা নিজস্ব ছবি৷

গোলযোগও হয়নি৷ ভোট পড়েছে গড়ে ৯০.৫৮ শতাংশ৷ কিন্তু, আশ্চর্য্যজনক ঘটনা হল, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে গড় ভোটের হার পুণরায় পরিবর্তন হয়েছে৷ এবারের নির্বাচনে ভোটের হারে নয়া সংযোজন  ৯১.৫৩ শতাংশ৷ এই নিয়ে তৃতীয় দফায় ভোটের হার বদল হল৷ ফলে, ভোটের প্রকৃত হার নিয়ে ফের ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে৷ সাথে, নির্বাচন দপ্তরের কর্মদক্ষতাও প্রশ্ণের মুখে গিয়ে ঠেকেছে৷

সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরুণীকান্তি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আজ ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের ছয়টি বুথে পুনরায় ভোট নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যের ঐতিহ্য অনুযায়ী ভোটাররা সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন৷ সব বয়সের ভোটার সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত শৃঙ্খলভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন৷ কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি৷ ফলে, শতাংশের হিসেবে এদিন প্রাপ্ত ভোটের হার ৯০.৫৮ শতাংশ৷ ১৮ ফেব্রুয়ারী ভোটের তুলনায় ০.৪০ শতাংশ কম৷ ওইদিন এই ছয়টি বুথে ভোট পড়েছিল ৯০.৯৮ শতাংশ৷ এই বুথগুলিতে আজ ভোটার ছিল ৫৫৮২ জন৷ এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫০৫৬ জন৷

তাঁর কথায়, এই ছয়টি বুথের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ৪০ সাব্রুম বিধানসভা কেন্দ্রের ৪৮ নং বুথে৷ সেখানে ভোট পড়েছে ৯৫.৫৫ শতাংশ৷ সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ৪১ অম্পিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ৩৭ নং বুথে৷ সেখানে ভোট পড়েছে ৮৪.৩৮ শতাংশ৷ এছাড়া, ২২ সোনামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ২৬ নং বুথে ভোট পড়েছে ৯৪.২৬ শতাংশ৷ ২৩ ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৮ নং বুথে ভোট পড়েছে ৯১.১৯ শতাংশ৷ ২৮ তেলিয়ামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ৪৫ নং বুথে ভোট পড়েছে ৯১.১৫ শতাংশ এবং ৫৪ কদমতলা-কূর্তি বিধানসভা কেন্দ্রের ৯ নং বুথে ভোট পড়েছে ৮৫.৬৬ শতাংশ৷

তাঁর বক্তব্য, আজকের ভোট নিয়ে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে ভোট পড়ল ৯১.৫৩ শতাংশ৷ পোস্টাল ব্যালটের যোগ করলে এই সংখ্যা সামান্য হেরফের হতে পারে৷

১৮ ফেব্রুয়ারী রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরুণীকান্তি জানিয়েছিলেন, ভোটের হার ৭৮.৫৬ শতাংশ৷ তবে, এই হার আংশিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি ছিল তাঁর৷ যথারীতি, ১৯ ফেব্রুয়ারী পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক ভোটের হার ঘোষণা দেন ৮৯.৯৬ শতাংশ৷ সাথে তিনি যোগ করেন, পোস্টাল ব্যালট এবং সার্ভিস ভোটার ও চড়িলামের ভোট বাদ দিয়ে এটাই হচ্ছে ভোটের চূড়ান্ত হার৷ সেক্ষেত্রে সামান্য হেরফের হতে পারে বলে তিনি দাবি করেছিলেন৷ কিন্তু, আট দিনের মাথায় ফের বদলে যায় ভোটের হার৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের কথায়, পোস্টাল ব্যালট ও সার্ভিস ভোটার বাদ দিয়ে ভোটের হার ৯১.৫৩ শতাংশ৷ অথচ, ছয়টি বুথে পুনঃভোটে ভোটের হার কমেছে ০.৪০ শতাংশ৷ পূর্ব ঘোষিত ভোটের হারে ১.৫৭ এখন কিভাবে বাড়ল, সেই প্রশ্ণের জবাবে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের বক্তব্য, আনুমানিক ভোটের হার সেদিন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল৷ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এখন চূড়ান্ত ভোটের হার প্রকাশ করা হয়েছে৷ ভোটার হার বদল নিয়ে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক সাফাই দিলেও, দফায় দফায় ভোটের হারে পরিবর্তন নির্বাচন দপ্তরের কর্মদক্ষতাকে প্রশ্ণের মুখে দাঁড় করেছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের৷

এদিকে, মঙ্গলবার পোস্টাল ব্যালট এক্সচেঞ্জ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক৷ তাঁর কথায়,  আগামীকাল সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রের পোস্টাল ব্যালট আগরতলায় আনা হবে৷ এরপর সংশ্লিষ্ট বিধানসভার রিটার্নিং অফিসারদের কাছে সেই কেন্দ্রের পোস্টাল ব্যালটগুলি তুলে দেওয়া হবে৷ তিনি জানান, প্রত্যেক পোস্টাল ব্যালটে বার কোড থাকবে৷ বার কোড স্ক্যানিংয়ের জন্য আগামীকাল থেকে পুণরায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ গণনার দিন বার কোড স্ক্যানিংয়ের ক্ষেত্রে যাতে কোন ধরনের জটিলতা দেখা না দেয়, সেজন্যই পুণরায় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আগামী তিনদিন ২০টি গণনাকেন্দ্রে যাঁরা গণনার কাজে নিযুক্ত ভোটকর্মীদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷

এদিন শ্রীরাম তরুণীকান্তি জানিয়েছেন, চড়িলাম বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য এখন পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন৷ আজ ছিল এই বিধানসভা কেন্দ্রের নতুন সংশোধীত সূচী অনুযায়ী প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের অন্তিম দিন৷

তিনি জানান, ভোট গণনা পর্ব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ ভোট গ্রহণের মত সমস্ত গণনা কেন্দ্রেও থাকবে ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা৷ সমস্ত গণনা কেন্দ্রের জন্যই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ এদিন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া ভোট গ্রহণ পর্ব সম্পন্ন হওয়ায় ভোটার, নিরাপত্তা বাহিনী, সমস্ত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *