BRAKING NEWS

অনুনয়-বিনয়ের দিন শেষ, মাঠে নেমে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জকে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করবে বামেরা, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জেহাদ সিপিএমের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ফেব্রুয়ারি৷৷ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জেহাদ ঘোষণা করল সিপিএম৷ রাজ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ঘিরে নিরপেক্ষতার প্রশ্ণে কমিশনের ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর৷ তাঁর আশঙ্কা, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷ কারণ, প্রিসাইডিং অফিসাররা ইচ্ছাকৃতভাবে ভূল করেছেন কিনা সেই প্রশ্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ তাই, সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য অনুনয়-বিনয় এবং দরখাস্ত পাঠানোর বদলে এখন থেকে মাঠে নেমে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলার হুশিয়ারি দিয়েছেন বিজনবাবু৷

নির্বাচন কমিশন রাজ্যে ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের ছয়টি বুথে পুনঃনির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে৷ তাতে, তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সিপিএম৷ শুক্রবার সিপিএম রাজ্য কার্যালয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, পুনঃনির্বাচনের সম্পূর্ণ দায় নির্বাচন কমিশনের৷ যাঁরা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের অপদার্থতার জন্যই পুনঃনির্বাচন করতে হচ্ছে৷ এখানেই থেমে যাননি তিনি৷ নির্বাচনে নিযুক্ত আধিকারীকদের ভূমিকা নিয়েও বিজনবাবু প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাঁর কথায়, ভোটের দিন যা সমস্যা হয়েছে, তাতে প্রিসাইডিং অফিসারদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল কিনা এবং যদি প্রশিক্ষণ ঠিকভাবেই দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছেন কিনা সেই প্রশ্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, রাজ্য নির্বাচন দপ্তরের উদাসীনতা এবং অবহেলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ তাঁর মতে, এই গাফিলতির দায় নির্বাচন কমিশনকে, সাথে রাজ্য নির্বাচন দপ্তরকেই নিতে হবে৷

এদিন তিনি বলেন, ছয়টি বুথে পুনঃনির্বাচনের ঘোষণায় এখন অন্য কেন্দ্রের প্রার্থীরাও আশঙ্কার মধ্যেই দিন কাটাবেন৷ তাঁর কথায়, নির্বাচন ত্রুটিহীন ব্যবস্থাপনায় হয়েছে, তা কোনভাবেই বলা যাবে না৷ তাঁর সাফ কথা, এর পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷

এদিন তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, অসংখ্য অফিসার, পর্যবেক্ষক, বিশেষ পর্যবেক্ষক, মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক, সহকারী মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক, উপ মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকরা যাঁরা নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন অফিসে বসে কি কাজ করেছেন তার কৈফিয়ত রাজ্যবাসীকে দিতে হবে৷ কোনভাবেই কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না৷

এদিন বিজনবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, নির্বাচনে পরাজয়ের ভয় থেকে এমন কথা তিনি বলছেন না৷ কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, নির্বাচনের ব্যবস্থাপকদের অপরাধমূলক উদাসীনতার দায় এখন ভোটারদের বহন করতে হচ্ছে৷ বিজনবাবুর কথায়, পুনঃনির্বাচনকে ভয় পাচ্ছিনা৷ ভয় থেকে কোন কথা বলছি না৷ তাই, ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি৷ সাথে যোগ করেন, নির্বাচনের ব্যবস্থপকদের দূর্বলতা, ঘাটতি এবং অপরাধমূলক উদাসীনতার দায় এখন ভোটারদের বহন করতে হচ্ছে৷ তাঁর মতে, সমস্ত অবহেলার বিরুদ্ধে এখন ভোট হবে৷ তিনি দলীয়দের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, সকাল সকাল ভোট দিন এবং নিজেরাই ভোট কেন্দ্রের নজরদারী করুন৷ বাইরের কোন লোক যাতে ভিড়তে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ন নজর রাখুন৷

এদিন বিজনবাবু নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাঁর কথায়, যেখানে ভোটাররা আক্রান্ত হয়েছেন, ভোট কেন্দ্রে তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি, এমনকি পোলিং এজেন্টদের বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সেই টাকারজলা কেন্দ্রটির সম্পর্কে কোন বক্তব্য নেই কমিশনের৷ এই বিষয়টিকেই বিজন ধর কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ণ তুলার কারণ হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷  সাথে তিনি কমিশনের কাছে গণনার দিন নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি সুনিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, নির্বাচনোত্তর রাজ্যের যে পরিস্থিতি তাতে শান্তিপূর্ণ গণনা সম্ভব নয়৷ তাই সিপিএম জম্পুইজলায় গণনা কেন্দ্র সরানোর দাবি জানিয়েছিল৷ তাঁর দাবি, এবিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সাথে যোগ করেন, সারা রাজ্যে গণনা শান্তিপূর্ণ হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে জনগণ মাঠে নামবে৷

পুনঃনির্বাচন কিংবা ভিভিপ্যাটের স্লিপের সাথে ইভিএমের ভোট গণনা নিয়ে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সিপিএম খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে বিজন ধরের বক্তব্যে স্পষ্ট৷ তাঁর কথায়, রাজনৈতিক দলের মতামতকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের রিপোর্টের ভিত্তিতে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন৷ তাতে বিজনবাবু মনে করেন, বামফ্রন্টের জেতা আসনগুলিকে আশংকিত করা এবং বিরোধীদের মনোবল চাঙ্গা করে দেওয়াই উদ্দেশ্য৷ তাই তিনি হুশিয়ারী  দিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় জানানো হয়েছে, প্রচুর দরখাস্ত পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এসব এখন বাদ রাখা হবে৷ এসমস্ত কিছু বাদ রেখে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে৷ নির্বাচন পরিচালনায় যাঁদের গাফিলতি হয়েছে, তাঁদের বাছাই করে ব্যবস্থা নিতে হবে কমিশনের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *