BRAKING NEWS

বামেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুনে ঘি ঢেলে স্বপ্ণ ফেরি করলেন প্রধানমন্ত্রী

সোনামুড়া থেকে ফিরে সন্দীপ বিশ্বাস, ৮ ফেব্রুয়ারী৷৷ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে বামেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুনে ঘি

বৃহস্পতিবার সোনামুড়াায় বিজেপির নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ছবি নিজস্ব৷

ঢেলে দিয়ে স্বপ্ণ ফেরি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ অধিকার আদায়ে অটল থাকতে হবে, তবেই সম্ভব পরিবর্তন, বুঝিয়েছেন তিনি৷ সাথে ভরসা দিয়েছেন, টানা ২৫ বছরের বামফ্রন্টের শাসনে রাজ্যবাসী অধিকার  ন্যুনতম আদায় করতে না পারলেও, শুধু একবার সরকার পরিবর্তনে উন্নয়নমুখী হবে ত্রিপুরা৷ কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশন লাগু করা সহ বেকারদের প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ সাথে যোগ করেন, বাড়ানো হবে শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরীও৷ শুধু তাই নয়, চিটফান্ড কান্ডে যাঁরা সাধারণ মানুষের অর্থ লুটেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তাঁদের গারদে পাঠানো হবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন তিনি৷ এদিকে, আইপিএফটি সভাপতি এন সি দেববর্মা বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর ত্রিপুরা গড়ে তুলতে আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ৷

বৃহস্পতিবার সোনামুড়ায় নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ভাষণে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন উন্নয়নকে৷ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যের তা বুঝাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, যোগাযোগের মাধ্যমে পরিবর্তন মূলমন্ত্র বিজেপি’র৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় মানিক নয়, হীরা’র প্রয়োজন৷  তর্জমা করলে হীরা’র মানে হল এইচ-হাইওয়েজ, আই-আইওয়েজ, আর-রোডওয়েজ এবং এ-এয়ারওয়েজ৷ এই চারটি মাধ্যমে রাজ্যের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত করা সম্ভব৷ ত্রিপুরার নামের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মোদি জানান, তিনটি টি শব্দ নিয়ে তিনি রাজ্যে এসেছেন৷ ট্রেড, ট্যুরিজম এবং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে কাজ করা হবে৷

এদিন তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, রাজ্যের মানুষ ভুল করে মানিক পরে নিয়েছেন৷ যতক্ষণ পর্যন্ত এই মানিক খুলে ফেলা না হবে ততক্ষণ রাজ্যের ভাগ্য পরিবর্তন হবেনা৷ তাঁর কথায়, মানিক থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় এসেছে৷ এখন রাজ্যবাসীর প্রয়োজন হীরা৷ তাঁর কথায়, পূর্বোত্তরের উন্নয়ন না হলে দেশের ভাগ্য বদলাবে না৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরার ভাগ্য বদলালে দেশের ভাগ্যও বদলাবে৷

এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদী ত্রিপুরাসুন্দরী দেবীর ভূমিকে প্রণাম জানান৷ সাথে বলেন, ত্রিপুরার ইতিহাস গৌরবময়৷ তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরার মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ দেশের সাথে ত্রিপুরা যুক্ত হওয়ার পরেও রাজাদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু, দুর্ভাগ্যের বিষয় হল বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর অকালে পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছেন৷ আর তখনই সুযোগ সন্ধানিরা সক্রিয় হয়ে উঠে৷

প্রধানমন্ত্রী এদিন নাম উল্লেখ না করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের উদ্দেশ্যে তীব্র কটাক্ষ করেন৷ তাঁর কথায়, তিনি উপর দিয়ে খুবই স্বচ্ছ, সাদা সিধে লোক, সাদা পোষাক পড়েন৷ উপর দিয়ে দেখা যায় খুব ভালো মানুষ৷ কিন্তু ভিতরটা খুবই কালো, অন্ধকারে ঢাকা৷ সেজন্যই রাজ্যকেও অন্ধকারের যুগে নিয়ে রেখেছেন৷ তাই এখন এই রাজ্যকে অন্ধকারের যুগ থেকে বের করে উন্নয়নের যুগে নিয়ে যেতে হবে৷ এদিন তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, রাজ্যে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ কমিউনিস্টরা যেখানেই ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানেই গণতন্ত্রকে লাঠি দিয়ে চালানোর চেষ্টা করে৷ পশ্চিমবঙ্গে তাই হয়েছে৷ এখন ত্রিপুরা এবং কেরালায় এই পথেই হাঁটছেন কমিউনিস্টরা৷ তাঁর মতে, কমিউনিস্ট শাসনে বিরোধীদের ন্যুনতম অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়৷ এমনকি, বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়৷ তাঁর দাবি, এধরণের পরিস্থিতি মানুষকে এক অসীম যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে৷ রাজ্যের মানুষ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে লড়াইয়ে নেমেছেন৷ আর তাদের সাথে দাঁড়িয়েছে বিজেপি৷

এদিন প্রধানমন্ত্রী চিটফান্ড কাণ্ডে যারা গরিবের টাকা লুটেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তাদের জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ রোজভ্যালিতে গরিবের টাকা কারা লুটেছেন সেই প্রশ্ণ তুলে তিনি জানতে চান  লুটেরাদের সাঁজা দেওয়া উচিত কিনা৷ তিনি বলেন, যারা গরিবের টাকা লুটেছেন তাদের এখন সাঁজা দেওয়ার সময় এসেছে৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ গরিবের টাকা লুঠতে সাহস না করে৷

রাজ্যের শ্রমিকদের সারা দেশের সাথে মিলিয়ে ন্যুনতম মজুরী নির্ধারন করার প্রয়োজন কিনা তাও এদিন জানতে চান প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, কমিউনিস্টরা শ্রমিক দরদি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে ন্যুনতম মজুরী বৃদ্ধির দাবি করে থাকেন৷ কিন্তু, বাস্তবে তারা নিজেরাই শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরী বৃদ্ধির কোন পদক্ষেপ নেয়নি৷ টানা ২৫ বছর ধরে কমিউনিস্টরা এই রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছেন৷ অথচ তারা, মানুষের অধিকার প্রদান করেনি৷ এদিকে, সপ্তম বেতন কমিশন নিয়েও রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের পর থেকে এই রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন সংশোধন হয়নি৷ সপ্তম বেতন কমিশন এ রাজ্যে কেন লাগু হচ্ছেনা, সেই প্রশ্ণ তুলেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, রাজ্য সরকারের বঞ্চনা সত্বেও কর্মচারীরা ভয়ে এবং চাপের মুখে নিরব থাকেন৷ কারণ, মুখ খুললেই চাকরী হারানোর ভয়ে তটস্থ তাঁরা৷ তিনি আশ্বাস দেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলেই শিক্ষক কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশন লাগু করা হবে৷ সাথে যোগ করেন, শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরী সারা দেশের সাথে সাযুজ্য রেখে নির্ধারণ করা হবে৷

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজ্যের বিবিধতা রক্ষায় সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ কারণ, এদিনের সমাবেশে ভাষণে আইপিএফটির সভাপতি এনসি দেববর্মা ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর ত্রিপুরা গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, পাহাড় সমতল একাকার হয়ে রাজ্যের উন্নয়নে কাজ করবে৷ জাতি উপজাতি ঐক্যবদ্ধভাবে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *