BRAKING NEWS

মঙ্গলবার অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক,স্কুল থেকে রিপোর্ট চাইল আই সি এস ই বোর্ড

কলকাতা,৪ ডিসেম্বর,( হি.স.): জি ডি বিড়লা স্কুল খোলার দাবিতে এবার নামল পড়ুয়ারাও ৷ স্কুল ইউনিফর্ম পরেই স্কুল খোলার দাবিতে সোচ্চার তারা৷ কিন্তু, আপাতত স্কুল না খোলার ব্যাপারে অনড় জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে স্কুল খোলা হবে না । সোমবার এ কথা জানিয়ে দিল জি ডি বিড়লা স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের এই সিদ্ধান্তের ফলে সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়ারা । অব্শ্য, চাপের মুখে অভিভাবকদের দাবি মানল স্কুল । ঠিক হয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বৈঠক হবে অভিভাবক ফোরামের সঙ্গে । বৈঠকে থাকবেন স্কুলের ৫ প্রতিনিধি । থাকবেন স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরাও ছাড়াও পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিনিধিরা । এদিকে, যাদবপুর থানায় প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে জি ডি বিড়লা স্কুলের প্রিন্সিপালকে খুব দ্রুত লালবাজারে ডাকা হচ্ছে । অন্যদিকে,এই ঘটনায় অবশেষে নড়েচড়ে বসল আই সি এস ই বোর্ড । স্কুলের থেকে রিপোর্ট চাইল বোর্ড । আই সি এস ই বোর্ড সচিব জেরি অ্যারাথুন সোমবার বলেন, ‘এতদিন বাইরে ছিলাম । এদিন আমরা রিপোর্ট চাইছি স্কুলের থেকে । ঘটনাটি দেখেছি সংবাদমাধ্যমে । রিপোর্ট দেখে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব । জানালেন তিনি ।জি ডি বিড়লা স্কুলে শিশু ছাত্রীকে অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই অভিভাবকদের একাংশ দাবি তুলেছিলেন, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে হবে। এর পরই রবিবার স্কুল এবং শিক্ষিকাদের নিরাপত্তার যুক্তি দিয়ে স্কুল বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়েছে জি ডি বিড়লা কর্তৃপক্ষ। যদিও পরে স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের চাপের ফলেই স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে । সেখানে অভিভাবকরা ছাড়াও পুলিশ আধাকারিক, শিক্ষা দফতরের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এদিন স্কুলের তরফে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে, সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই অভিভাবকদের নোটিশ দিয়ে স্কুল খোলার কথা জানিয়ে দেওয়া হবে ।হঠাৎ করে এভাবে স্কুল বনধের সিদ্ধান্তের ফলে সমস্যার পড়েছে পড়ুয়ারা। স্কুল বন্ধ করা কোনও সমস্যার সমাধান নয় বলে মনে করছেন ছাত্রদের বাবা-মা রাও ৷ সোমবার থেকে শুরু পরীক্ষা ৷ এখন বিভিন্ন শ্রেণিতে পরীক্ষা চলছে । পাশাপাশি, আগামী ২২ তারিখ থেকে শুরু হবে প্রি-বোর্ডের পরীক্ষা ।তাই স্কুল খোলার দাবি আরও জোরালো হয়েছে পড়ুয়াদের ৷ এ দিন সকালেও স্কুলে আসতে দেখা গিয়েছে বহু পড়ুয়াকে। এ দিন স্কুলে আসেন বি জে পি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বি জে পি নেত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। তাঁদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। পরে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজনীতি করতে এখানে আসিনি। স্কুলের সামনে বসে থাকব’। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের আড়াল করা ও তথ্য গোপনের দায়ে স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে ‘পকসো’ বা ‘প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ আইনে অভিযোগ দায়ের করেছে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন । পৃথক এফ আই আর করেছেন শিশুটির বাবাও । ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ । অন্যদিকে, এদিন সকাল থেকেই বেহালার এম পি বিড়লা স্কুলের সামনে সাড়ে তিন বছরের এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহ কাণ্ডে অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। মাস তিনেক আগে বেহালার এমপি বিড়লা স্কুলে ওই ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহ করা হয়। সেই ঘটনায় অভিযোগ পেলেও পুলিশ বা স্কুল, কেউই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ। সপ্তাহের প্রথম দিন ফের উত্তেজনা দেখা দেয় জি ডি বিড়লা স্কুলের সামনে । পরীক্ষার মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়া ও অভিভাবকরা । বিক্ষোভ চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন নির্যাতিতার বাবা । সোমবার সকালে নিয়ম মেনে স্কুলে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, গেটে ঝুলছে তালা । পাশে সাঁটা নোটিসে লেখা, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল । যদিও স্কুল বন্ধ হওয়ার খবর তাঁদের জানা ছিল না বলে দাবি ছাত্রছাত্রীদের । স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে পাল্টা চাপের কৌশল হিসাবেই নিচ্ছেন অভিভাবকরা । তাঁদের দাবি, আন্দোলন ভেঙে দিয়ে বিষয়কে লঘু করতে চাইছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এদিন স্কুলের যেমন ছিল অভিভাবকদের ভিড়, তেমনই ছিল যে কোনও অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে চোখে পড়ার মত পুলিশি বন্দোবস্ত । খবর পেয়ে স্কুলের পৌঁছন শিশু অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী । স্কুল কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। পরীক্ষা চলাকালীন কেন স্কুল এভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে? এ ধরনের অসহযোগিতা আশা করা যায় না’। নির্যাতিত শিশুর বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন ৷ তিনিও স্কুল খোলা রাখারই পক্ষে ৷ তাঁর মতে, ‘ স্কুল চালু রাখতে হবে ৷ সব নিয়ম মেনে স্কুল চালু হোক ৷ বহু পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে ৷ স্কুল বন্ধ রেখে কোনও সমাধান হয় না ৷ প্রিন্সিপালের ব্যবহারে এরকম গন্ডগোল শুরু হয়েছে ৷ উনি সমবেদনা জানাতে পারতেন ৷ অপরাধীরা শাস্তি পাবেই ৷ প্রয়োজনে পরিচালন সমিতি বদলাতে হবে ৷ পরিচালন সমিতিতে অভিভাবকদেরও রাখতে হবে ৷ দরকারে আইনি ব্যবস্থা নেব আমরা’ ৷ অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি । জানান, স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এদিন থেকে ইলেভেনের পরীক্ষা ছিল। অথচ, সেই দায়িত্ব অস্বীকার করে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হল। ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল আন্তরিকতার সঙ্গে গোটা বিষয়টি দেখা। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে স্কুল চালু রাখা। অথচ তা করা হল না। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। জানাবেন শিক্ষামন্ত্রীকেও। অনন্যাদেবীর সঙ্গে ছিলেন কমিশনের সদস্য সৌমিত্র রায়ও । তিনি বলেন, ‘পড়ুয়ারা চাইছে স্কুল খুলুক। তারা পড়তে চায়। স্কুলে আসতে চায় । তাদের দাবির দিকটি খেয়াল রাখা সরকারের কাজ। তাদের লেখাপড়া নিশ্চিত করবে সরকার’। রবিবার সকালে স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিভাবক ফোরামের তরফ থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়। প্রতিবাদে রানিকুঠির মোড় অবরোধ করেন অভিভাবকরা । তারপর মিছিল করা হয় । পাঁচদফা দাবি অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, স্কুলে সি সি টিভি বসাতে হবে, প্রিন্সিপ্যালকে গ্রেফতার করতে হবে, স্কুলে পুরুষকর্মী রাখা যাবে না, স্কুল চালু করতে হবে ও টয়লেটের আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া সামনে আসেনি স্কুল কর্তৃপক্ষের। আজও স্কুলের বাইরে বড়সড় বিক্ষোভ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । বিক্ষোভের কথা মাথায় রেখে সকাল থেকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভিড়। প্রসঙ্গত, প্রিন্সিপ্যাল শর্মিষ্ঠা নাথের বিরুদ্ধে গতকাল যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।সোমবার স্কুলে অনেকের পরীক্ষা ছিল । পরীক্ষা না হওয়ায় পড়ুয়ারা হতাশ । অভিভাবকদের বক্তব্য পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত মানা যায় না। কেউ চায় না পড়ুয়াদের ক্ষতি হোক । কেউ স্কুলের বিরুদ্ধে নয়। সবাই স্কুলের পরিকাঠামো, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি । এর ফলে ফর্ম ফিলাপের কাজ ব্যাহত হচ্ছে । এদিন স্কুলে অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা ছিল । যা নিয়ে অনেকের উৎসাহ থাকলেও স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তে পড়ুয়ারা মনমরা হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি প্রিন্সিপালের পদত্যাগ এবং গ্রেপ্তারের দাবিতে এদিনও অনড় অভিভাবকরা । তাদের সাফ কথা শুরুতেই এই ঘটনার নিন্দা করলে বিষয়টি এতদূর গড়াত না । অভিভাবকদের গত শুক্রবার পাঁচটি দাবির বিষয় স্কুলকে জানানো হয়েছিল । তখন ওরা জানিয়েছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে । কিন্তু মুখে ভাল কথা বলা হলেও এপর্যন্ত কোনও ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । তবে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা ।এদিকে, দু-দিনের পুলিশ হেপাজত শেষে দুই অভিযুক্তকে এদিন আলিপুর আদালতে তোলা হয় । আলিপুর জাজেস কোর্টের দ্বিতীয় দায়রা আদালতে পকসো আইনে রুজু এই মামলা এদিন উঠবে । শনিবার যাদবপুর থানার থেকে এই মামলা লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগ নিয়েছে ।সূত্রের খবর, নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য লালবাজার আবেদন জানাবে । অভিযুক্তদের জেরা করে জানতে চাওয়া হবে ঠিক কী ঘটেছিল, কী পরিস্থিতি ছিল । স্কুলের কেউ কি বিষয়টি জানত । পাশাপাশি নির্যাতিতা শিশু এবং তার বাবা-মার জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাবে লালবাজার । নির্যাতিতা শিশুর পোশাক ইতিমধ্যে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে । এই নিয়ে ফরেনসিক তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে । স্কুলের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে শনিবার যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন একটি মামলা প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে রুজু করেছে । প্রথমে থেকেই নির্যাতিতার বাবা-মা বলে আসছিলেন প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কথা । পাশাপাশি তাদের অভিযোগ অনেক কিছু জেনেও চুপ রয়েছেন প্রিন্সিপাল। তিনি ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আইনজীবী মহল মনে করছে অভিযোগের যা গতিপ্রকৃতি তাতে বোঝা যাচ্ছে পকসো আইনের বিশেষ ধারায় পড়তে চলেছেন জি ডি বিড়লার প্রিন্সপাল।পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ২০১ এবং ১২০ বি ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। এধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। যে ধারায় প্রমাণ লোপাট এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিভাবকরা ব্ল্রেছেন, ৪৮ ঘণ্টা দেখব। তার মধ্যে প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তার করা না হলে আন্দোলন জোরদার হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *