BRAKING NEWS

শুরহোজেলিকে হটাতে কাজিরঙায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের

গুয়াহাটি, ০৯ জুলাই, (হি.স.) : প্রায় ১৩৮ দিনের মাথায় ফের নাগাল্যান্ড সরকারে নেতৃত্ব বদলের পরিবেশ রচনা হচ্ছে। এনপিএফ নেতৃত্বাধীন পড়শি রাজ্যের ক্ষমতাসীন ‘ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স অব নাগাল্যান্ড’ (ডিএএন বা ড্যান) জোটের পরিষদীয় নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী ৮১ বছরের ড. শুরহোজেলি লেইজেৎসু্কে গদিচ্যুত করতে দাবার শেষ চাল দিয়েছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী টিআর জেলিয়াং। জেলিয়াঙের চালে এবার একত্রিত হয়েছেন শুরহোজেলি শিবিরের বিধায়করা। তাঁরা এবার মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিএফ-এর সভাপতি লেইজেৎসু্র বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁদের নতুন নেতা হিসেবে চাইছেন জেলিয়াংকে। জেলিয়াং ডিএএন বা ড্যান-এর চেয়ারম্যানও।
তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জেলিয়াংকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং নয়া দলপতি নিয়ে আলোচনার নামে অসমের কাজিরঙার একটি রিসোর্টে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হয়ে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন বর্তমানের মুখ্যমন্ত্রী শুরহোজেলি লেইজেৎসু্। নাগাল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ)-এর সভাপতি শুরহোজেলির স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি টিআর জেলিয়াং তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন এবং পরের দিন ২০ তারিখ বিধান পরিষদীয় নেতা হিসেবে শুরহোজেলি লেইজেৎসু্কে নির্বাচিত করা হয়। এর একদিন পর ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রাজ্যের সপ্তদশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করান রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য।
ফেব্রুয়ারিতে শুরহোজেলি লেইজেৎসু্ যেমন টিআর জেলিয়াংকে গদিচ্যুত করতে কাজিরঙার রিজোর্টে বসে ছক কষেছিলেন, তেমনই এবার তাঁকেই কুপোকাত করতে সেই কাজিরঙায় ‘বরগস’ রিজোর্টে বসে শনিবার কয়েক দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন সেদিনের ‘বিশ্বস্ত’ বিসংবাদী নাগা বিধায়করা। এর দিন কয়েক আগে রিজোর্টের ৩০টি রুম বুক করে রাখা হয়েছিল, শুরহোজেলি-বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের জন্য।
খবরে প্রকাশ, নাগাল্যান্ডে বর্তমানে তিনটি শিবির মাথাচাড়া দিয়েছে। এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী টিআর জেলিয়াং, দুই আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা লোকসভা সদস্য নেইফিউ রিও এবং শেষেরটি মুখ্যমন্ত্রী শুরহোজেলি লেইজেৎসু্র। ৬০ সদস্যের বিধানসভায় এনপিএফ-এর ৪৭, বিজেপি-র তিন এবং বাকি আটজন নির্দল সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জেলিয়াঙের পক্ষে ৪৫ এবং শুরহোজেলি লেইজেৎসু্র শিবিরে মাত্র ১২ জন বিধায়ক রয়েছেন। তাছাড়া রিও-জেলিয়াঙের মাঝখানে পড়ে বিজেপির তিন বিধায়ক নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও গতকাল রাতে তাঁরা এবং নির্দলীয় সাতজন শুরহোজেলির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলে বলে জানা গেছে। এবারের বিসংবাদ খোলসা হয়েছে সেদিন, যেদিন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী এনডিএ সমর্থিত রামনাথ কোবিন্দ ভোট প্রচারে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে গিয়েছিলেন। সেদিন ছিল ৮ জুলাই। এই একই দিন ড্যান-এর বিক্ষুব্ধ বিধায়করা কাজিরঙার রিজোর্টে এসে বৈঠকে বসেন। তবে এতসবের মধ্যেও তাঁরা আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে এনডিএ প্রার্থী কোবিন্দের প্রতি।
প্রসঙ্গত, এনপিএফ নেতৃত্বাধীন ড্যান জোট কেন্দ্রের এনডিএ তথা নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স বা নেডা-র শরিক।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর অসম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল নাগাল্যান্ড। ৬০ সদস্যকে নিয়ে নাগাল্যান্ড বিধানসভা গঠিত হয় ১৯৬৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। তখন থেকেই ক্ষমতার লোভে বুঁধ নাগা নেতৃত্ব। ঝগড়া-বিবাদ তাঁদের পিছু ছাড়ছে না।
প্রসঙ্গত, নাগাল্যান্ডের বর্তমান ড্যান জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর অবিশ্বাস বা বিক্ষোভের এ নিয়ে চতুর্থ উদাহরণ। রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও এনডিএ-র আগ্রহে ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে দিল্লি চলে যান। ওই সালেরই ২৪ মে রাজপাটে বসানো হয় টিআর জেলিয়াংকে। এর পর ২০১৫ সালে এনপিএফ সভাপতি শুরহোজেলির সঙ্গে বিবাদ রচনা হলে নেইফিউর হস্তক্ষেপে সেবার রক্ষা পেয়েছিল জেলিয়াঙের মুখ্যমন্ত্রীর আসন। তৃতীয় ঘটনা চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী পদে জেলিয়াং ইস্তফা দিলে ২২ ফেব্রুয়ারি নাটকীয়ভাবে সপ্তদশ মুখ্যমন্ত্রী পদ দখল করেন ৮১ বছরের ড. শুরহোজেলি লেইজেৎসু্।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *