নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা / খোয়াই / তেলিয়ামুড়া / বিশালগড়/ কমলাসাগর, ১৯ জুন৷৷ টানা বর্ষণে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি

ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে৷ বহু এলাকা জলে প্লাবিত হয়ে গেছে৷ এক বৃদ্ধা নদীর জলে তলিয়ে গেছেন৷ দুই সহস্রাধিক পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে, খোয়াই এবং গোমতি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে৷ রবিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে সোমবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ৬৩৮ এমএম বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর সোমবার দিনের বাকি সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমান ২৯ এমএম৷ মঙ্গলবার দিনে ও রাতে মিলিয়ে ৪০ এমএম বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
সোমবার দিনভর ভারি বর্ষণে রাজধানী আগরতলায় বহু এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ শহরতলীর বলদাখাল, শ্রীলঙ্কাবস্তি, চন্দ্রপুর, টাটা কোম্পানী, আড়ালিয়া, ধলেশ্বরের কিছু অংশ, প্রতাপগড়, কবিরাজটিলা, বিদ্যাসগর, প্রফেসরপাড়া, মাস্টারপাড়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে৷ তাছাড়া, খোয়াই’র বিস্তির্ণ এলাকা, মোহনপুর, হেজামারা, কল্যাণপুর ও তেলিয়ামুড়ার বিস্তির্ণ এলাকাও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে৷ সদর, জিরানীয়া এবং মোহনপুর মহকুমায় ত্রাণ শিবিরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থতের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ খোয়াই, কল্যাণপুর এবং তেলিয়ামুড়াতেও ত্রাণ শিবিরে বহু মানুষকে রাখা হয়েছে৷
এদিকে, এই আপতকালীন পরিস্থিতিতে এদিন সন্ধ্যায় মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সভাপতিত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বৈঠকে রাজস্ব মন্ত্রী বাদল চৌধুরী, মুখ্য সচিব সঞ্জীব রঞ্জন এবং অন্যান্য দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন এবং আধিকারিকগণকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন৷ যে যে জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে সেখানে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ প্রশাসনকে শিবিরগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে৷ প্রতিটি জেলায় জেলাশাসকের কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুমগুলিকে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ দলকে সতর্ক ও তৎপর থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ দুর্গতরা যেন সর্বপ্রকার সাহায্য পেতে পারে সেদিক থেকে প্রশাসনকে তৈরী থাকতে এবং পরিস্থিতির প্রতি প্রতিদিন নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম জেলায় প্রায় ১৩০১ পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ সদর, জিরানীয়া ও মোহনপুরে ২৬টি ত্রাণ শিবিরে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে, খোয়াই, তেলিয়ামুড়া এবং কল্যাণপুরে মোট ২২টি ত্রাণ শিবিরে ৮৬২ পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷
সূত্রের খবর, খোয়াইতে মোট ৭টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ তাতে ৩৫০ পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ কল্যাণপুর এবং তেলিয়ামুড়ায় ১৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ এদিকে, জাতীয় সড়কেও ভারী বর্ষণে ধবস পড়েছে৷ আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের ৪৪ মাইলে এদিন ধবস নামে৷ তাছাড়া বিশালাকার একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়৷ সন্ধ্যা পর্যন্ত ছোট যানবাহন চলাচলের উপোযোগী করা হয়েছে৷ খোয়াই দিয়ে কমলপুর এবং কলাছড়া রাস্তায় এদিন গাছ ভেঙ্গে পড়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে৷ উদ্ধারকার্যে প্রশাসনিক কেউই এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ৷ স্থানীয় গাছ রাস্তা থেকে সরিয়েছেন৷
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, অমরপুরেও ভারী বর্ষণে চারটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এদিকে, সুবলসিং এলাকায় বন দপ্তরের একটি লেক ভারী বর্ষণে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে৷ কারণ, লেকের পার ভাঙতে শুরু করেছে৷ খবর পেয়ে বনমন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া সেখানে ছুটে গেছেন৷ যতদ্রুত সম্ভব সংস্কার কার্য সম্পন্ন করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন৷ কারণ, লেকটি পার সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেলে পাশ্ববর্তী বিস্তির্ণ এলাকা জলে প্লাবিত হয়ে যাবে৷ তাতে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
বিমানবন্দরস্থিত আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷ এমনিতেই, খোয়াই এবং গোমতি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে৷ ফলে, প্রশাসনের তরফে জলপ্লাবিত এলাকায় বসবাসকারীদের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে৷
সোমবার দুপুরে বন্যায় জলে প্রাণ হারালেন এক বৃদ্ধা৷ তাঁর নাম রেনুবালা সাহা (৬৫)৷ বৃদ্ধার ঘর নদীর পাশাপাশি এলাকায়৷ জল বাড়ছে দেখতেনদী ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ হঠাৎ পড়ে গেলেন নদীতে৷ জলের স্রোতে ভেসে গেলেন বৃদ্ধা৷ দৃশ্যটি একজন লোক দেখতে পেরেও কিছু করতে পারলেন না৷ খবর দেওয়া হয় অগ্ণিনির্বাপক দপ্তরকে৷ কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে পুরো বিষয় জানার পর উদ্ধারের জন্য দাঁড়ায় ঘটনাস্থলে থেকে দেড় কিমি পশ্চিমে অর্থাৎ আমবাগান এলাকায়৷ সেখানে ব্রীজের নিচ থেকে ভেসে ওঠে মহিলার মৃতদেহ৷ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে৷ এদিকে মহিলার নিজবাড়ি বিশালগড় থানায় অর্ন্তগত পুরপরিষদের ১২নং ওয়ার্ডের রাউৎখলায়৷ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে৷ স্থানীয়রা এই দুর্ঘটনায় জন্য বিশালগড় পুর পরিষদের দায়ী করছে৷ কারন বহু আবেদন নিবেদন করেও নদীর ঘাটের সংস্কার করা হয়নি৷
দুই দিনের বর্ষণের ফলে আগরতলা বিশালগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে যান চলাচলের আযোগ্য হয়ে পড়ে৷ তপোবন আশ্রম সংলগ্ণ এলাকা থেকে শুরু করে দারোগাবাড়ি পর্যন্ত জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা৷ ফলে, যানজটের সৃষ্টি হয়৷ যদিও জাতীয় সড়কে মেরামতের কাজ চলছে৷ সড়কে নতুন মাটি ভরাট করার ফলে দুইদিন ধরে বর্ষনের ফলে নতুন মাটি ভরাট করা সড়কে কাঁদায় পরিণত হয়৷ যার ফলে গাড়ি চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হয়৷ দুর্ভোগে পরতে হয়ে গাড়ীর যাত্রীদের৷ সুকল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আশা যাওয়া লোকজনদের সেই দুর্ভোগে পরতে হয়েছে৷ লেগে যায় গাড়ীর দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টার সেই লাইনে পরে অপেক্ষা করতে করতে৷ যাত্রীরা সময় মতো তারা তাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারছে না৷ অন্যদিকে সুকল কলেজের ছাত্র -ছাত্রীরা তাদের সুকল কলেজে সময় মত পৌঁছতে পারছে না৷ এই অসুস্থ রোগিদের হাসপাতালে পৌঁছাতে অসুবিধার মুখে পরতে হচ্ছে৷ যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু মুখে সম্মুখিন হতে পারে৷ এলাকার সুকল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সহ যাত্রীরা তারা দাবী করছে অতিদ্রুত যেন জাতীয় সড়কের মেরামতের কাজ সর্ম্পণ করা হয়৷ সেই এলাকার লোকজনেরা দাবী করছে৷

