BRAKING NEWS

গবাদি পশু বিক্রি নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা তৈরী করবে বিভাজন ঃ সিপিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মে৷৷ গবাদি পশু বিক্রি নিয়ে কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকায় প্রতিবাদি হয়ে উঠেছে সিপিআইএম৷ সাম্প্রদায়িক বিভাজন রেখা তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার, এই অভিযোগ এনেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, গবাদি পশু বিক্রি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে নির্দেশিকা জারি করেছে তাতে বহু মানুুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ এই নির্দেশিকা কৃষকদের স্বার্থবিরোধী এবং মানুষের খাদ্যাভাসে আঘাত করা হয়েছে বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি বলেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত করেছে৷ কারণ, গবাদি পশু নিয়ে আইন প্রণয়নের এক্তিয়ার রাজ্যগুলির উপর বর্তায়৷ কিন্তু দীর্ঘদিনের সে পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ এনেছেন বিজনবাবু৷ তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ এবং বিরোধিতা করছে সিপিএম৷
এদিন তিনি বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই গরুকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ঘটছে৷ গরুকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উন্মাদনার চেষ্টাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ মূলত, হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কের মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপগুলি নেয়া হচ্ছে বলে মনে করেন বিজনবাবু৷
তিনি জানান, কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকায় বলদ, ষাঁড়, মেষ, গাভী, বাখনা বাছুর, মহিষ এবং উট বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের ভেতরে কোন গবাদি পশুর বাজার বসানো যাবে না৷ বিজনবাবু বলেন, গবাদি পশুর চামড়া বাইরে রপ্তানি করে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে৷ এই সিদ্ধান্ত চর্মশিল্পের ওপর মারাত্মক আঘাত আনবে৷ বহু মানুষ কাজ হারাবেন৷ পাশাপাশি এই সিদ্ধান্ত কৃষকদের ওপরও প্রভাব ফেলবে৷ অনেক কৃষকই দুধ বিক্রির জন্য গরু প্রতিপালন করেন৷ কিন্তু গরু যখন দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেবে তখন কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী সেই গরু বিক্রি করা যাবে না৷ ফলে, গরু প্রতিপালনে বোঝা চাপবে কৃষকের ঘাড়ে৷ বিজনবাবুর কটাক্ষ, গরুর প্রতি এত দরদ থাকলে কৃষকদের বিষয়েও চিন্তা করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের৷
এদিন তিনি বলেন, পশু পালন সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত৷ কিন্তু কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে মারাত্মক আঘাত এনেছে বলে মন্তব্য করেন বিজনবাবু৷ তাঁর বক্তব্য, পশু পালন এবং পরিবহনে রাজ্যের নির্দিষ্ট আইন রয়েছে৷ এতকাল রাজ্যই এই আইন প্রণয়ন করেছে৷ কোথাও কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হলে তাও রাজ্য সরকারই করেছে৷ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের খেয়াল খুশিমত নির্দেশিকা রাজ্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে৷ এই ধরনের ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করার সমান বলে তিনি দাবি করেন৷ পাশাপাশি জানিয়েছেন, এই নির্দেশিকা অনুসারে এই রাজ্যেও বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ একটি তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ চর্ম শিল্পের সাথে যুক্ত৷ এদের মধ্যে ৩৬ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে চামড়া সংগ্রহ করেন৷ চামড়া ব্যবহার করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়৷ সংগৃহীত চামড়ার ৪০ শতাংশ জুতো তৈরি এবং মেরামতের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ তিনি উদ্বেগের সুরে বলেন, কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকা তাদের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আয় কমবে৷ তাই এই ধরনের নির্দেশিকা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন বিজনবাবু৷ সাথে জানান, কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকার প্রতিবাদ এবং বিরোধিতা করছে সিপিএম৷ পরিবেশের ভারসাম্যের কথা বলে কেন্দ্র গবাদি পশু বিক্রি নিষিদ্ধের যে নির্দেশিকা জারি করেছে তা কোন মতেই মানবে না সিপিএম৷ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের৷ তবে, এবিষয়ে দলগত অবস্থান চাইলে এর বিরোধিতা করবে সিপিএম৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *