চেন্নাই-কলকাতা, ১১ মে (হি.স.) : গ্রেফতারের সাজা এড়াতে দেশ ছেড়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সি এস কারনান | বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করেছেন কারনানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা আইনি উপদেষ্টা পিটার রমেশ কুমার| এদিন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, কারনান সম্ভবত নেপাল অথবা বাংলাদেশ বর্ডার দিয়ে দেশ ছেলে পালিয়ে গিয়েছেন|
আদালত অবমাননার অভিযোেগ কারনানকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে শীর্ষ আদালত| ৬১ বছরের এই বিচারপতিই প্রথম ন্যায়াধীশ, যাঁকে সুপ্রিম কোর্ট কারাদণ্ডে দণ্ডিত করল| কিন্তু গ্রেফতারির নির্দেশ জারির পর থেকেই কারনানের আর খোঁজ নেই| কলকাতা পুলিশ গতকাল তাঁর সন্ধানে চেন্নাই গিয়েছে কিন্তু সেখানে তিনি ছিলেন না| মঙ্গলবার সকালে কলকাতার বাসভবন ছেড়ে চেন্নাইয়ে একটি গেস্ট হাউসে এসে ওঠেন তিনি| একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেন| তারপর ৱুধবার সকালে বেরিয়ে যান ওই গেস্ট হাউস থেকে| অভিযোগ, ওই গেস্ট হাউসের খরচও মেটাননি কারনান | শোনা যাচ্ছিল, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকালাহস্তিতে এক মন্দির দর্শনে তাঁর যাওয়ার কথা| কিন্তু তিনি আদৌ সেখানে যান কিনা তা পরিষ্কার নয়| মন্দিরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কারনান সেখানে আসেননি|
এই পরিস্থিতিতে আজ পিটার রমেশ কুমার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আধিকারিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, কারনান সম্ভবত নেপাল অথবা বাংলাদেশ বর্ডার দিয়ে দেশ ছেলে পালিয়ে গিয়েছেন| পুলিশ আধিকারিকদের তিনি আরও বলেছেন, একমাত্র রাষ্ট্রপতি যদি তাঁকে কাজে বহালের আশ্বাস দেন তবেই দেশে ফিরবেন কারনান| তবে ঠিক কোন পথ দিয়ে তিনি পালিয়েছেন তা খোলসা করতে চাননি কুমার| শুধু তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশের কালহস্তি মন্দিরে পুজো দেওয়ার কথা যখন কারনান বলছিলেন, তখন তাঁর মোবাইল ফোনের টাওয়ার উত্তর দিকের কোনও জায়গায় রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল| পুলিশকে তিনি জানান ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে চেন্নাইয়ের যেকোনও পথ দিয়ে দেশ থেকে পালানো অত্যন্ত সহজ| তবে ঠিক কোন পথে কারনান দেশ ছেড়েছেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাননি কুমার|
পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন কারনানের দাবি রাষ্ট্রপতি তাঁকে নিয়োগ করেছেন, তাই সাজা তিনিই দিতে পারেন| সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির দেওয়া রায় কখনোই তিনি মেনে নেননি| এই নিয়ে একটি রিভিউ পিটিশনও কারনান সুপ্রিম কোর্টে দিয়েছেন| সেটি এখনও খারিজ হয়নি| রায়ের পুরো বিবরণ জানতে চেয়ে আরও একটি রিভিউ পিটিশন কারনান সুপ্রিম কোর্টকে দেবেন বলে জানিয়েছেন|
উল্লেখ্য, কারনান মাদ্রাজহাইকোর্টের বিচারপতি থাকার সময়ে ঘটনার সূত্রপাত | মাদ্রাজ হাইকোর্টের তত্কালীনপ্রধান বিচারপতি সঞ্জয় কে কউলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করার হুমকি দিয়েছিলেন সি এস কারনান| কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে বিচারপতি কারনান অভিযোগ আনেন, মাদ্রাজ হাইকোর্টের সেই প্রধানবিচারপতি সঞ্জয় কে কউলের নামই এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে সুপারিশ করাহয়েছে|
তাঁর অভিযোগ ছিল, মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তাঁর কাজে অযথা হস্তক্ষেপকরতেন| এখানেই শেষ নয়, মাদ্রাজ হাইকোর্টের আরও এক বিচারপতির শিক্ষাগতযোগ্যতার নথি জাল বলে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন বিচারপতি কারনান|এমনকী তাঁর অভিযোগ ছিল, বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন তিনি|
এখানেই শেষ নয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তাঁকে মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলির নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশ প্রথমে মানতে চাননি বিচারপতি কারনান| উল্টে সুপ্রিম কোর্টের বদলির নির্দেশের উপর নিজেই স্থগিতাদেশ জারি করেন| পরে অবশ্য তিনি কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন| এরপর বিষয় আরও গড়ায় | শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ৬ মাসের কারাবাসের নির্দেশ নিয়ে কলকাতা পুলিশকে কারনানকে অবিলম্বে গ্রেফতারের আদেশ দেন | এরপরই ৱুধবার থেকে আর তাঁর কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না|