BRAKING NEWS

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর থেকে দু কোটি টাকা নিয়েছেন কেজরিওয়াল, সত্যিই বোমা ফাটালেন কপিল

নয়াদিল্লি, ৭ মে (হি.স.) : পদচ্যুত হয়ে সত্যি সত্যিই বোমা ফাটন কপিল মিশ্র। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন আপ সরকারের বরখাস্ত মন্ত্রী কপিল মিশ্র। কপিলের দাবি, গত পরশু স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন কেজরিওয়ালকে নগদ দু কোটি টাকা দিয়েছিলেন। শনিবার রাতে দিল্লির জল সম্পদ মন্ত্রীর পদ খোয়ানোর পরই বিস্ফোরণ ঘটাবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ রাজঘাটে লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সত্যি সত্যিই বোমা ফাটিয়েছেন তিনি।যদিও কপিলের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসোদিয়া ।
এদিন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে রাজঘাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানান, ‘মন্ত্রী হওয়ার পর দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রমাণপত্র হাতে পাই। সব নিয়ে কেজরিওয়ালকে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম। পরে সেটির কী হয়েছিল সকলেই জানেন। তবে শুক্রবার নিজের চোখে যা দেখেছি তা সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে। নিজের চোখে সত্যেন্দ্র জৈনর থেকে কেজরিওয়ালকে ২ কোটি টাকা নিতে দেখেছি। সেই দৃশ্য দেখার পর রাতভর ঘুমোতে পারিনি। তাই রাজঘাটে ছুটে এসেছি। আমার কাছে যা তথ্য ছিল লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে দিয়েছি। সিবিআই ও এসিবিকেও দেব। সত্যান্দ্র জৈনকে জেলে ঢোকাতে পারলেই সব সত্যি প্রকাশ পাবে। তাতে আর খুব বেশি দেরি নেই।’
রাজঘাটে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি আপ নেতৃত্বর কাছে জানতে চেয়েছেন ওই টাকা কোথা থেকে এল? ওই টাকায় কী করা হয়েছে? কপিল বলেছেন, এভাবে নগদ টাকা নিতে দেখে তিনি এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, প্রথমে কেজরিওয়াল প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি। পরে বলেন, রাজনীতিতে এসব হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে পরে কথা হবে। এবিষয়ে গতকালই কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করার সময় ওই লেনদেনের কথা এসিবিকে জানানোর কথা বলে ছিলেন বলেই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কপিল। কপিলের দাবি, নিজের চোখে এত নগদ টাকা দেখে চুপ থাকার কোনও উপায়ই ছিল না। এজন্য নিজের রাজনৈতিক পদ ও জীবনের পরোয়াও তিনি করেন না বলে দাবি করেছেন আপ সরকারের বরখাস্ত মন্ত্রী।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার আগে টুইটারেই এর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কপিল মিশ্র। কারও নাম না করে লিখেছিলেন, ‘নিজের চোখে টাকা নিতে দেখেছি ওঁকে। লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে সব জানিয়েছি। আর চুপ থাকা সম্ভর নয়। ক্ষমতার প্রতি একেবারেই লোভ নেই আমার। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিসর্জন দিতেও আপত্তি নেই।’ তবে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও, আপ ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন কপিল মিশ্র। নিজের হাতে দল তৈরি করেছেন, তাই ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এতদিন দিল্লি সরকারের জল সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন কপিল মিশ্র । শনিবার আম আদমি পার্টির বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেখানে পুরভোট প্রসঙ্গ ওঠে। ভোটের সময় দিল্লিবাসী চরম জল সংকটের মধ্যে পড়েন। পুরভোটে তাঁদের ব্যর্থতার সেই সমস্যাকে দায়ী করেন বিধায়করা। এরপরই কপিল মিশ্রকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন কেজরিওয়াল। তাঁকে সরিয়ে নজফগড়ের বিধায়ক কৈলাস গালোটকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া। সীমাপুরির বিধায়ক রাজেন্দ্র পাল গৌতমকেও মন্ত্রিসভার সদস্য করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে স্রেফ জল সংকটের জন্য কপিল মিশ্রকে পদচ্যুত করা হয়েছে, সমালোচকদের কাছে এমন যুক্তি ধোপে টেকেনি। পুরভোটের ফলাফলের জন্য দলের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছিলেন কুমার বিশ্বাস। ইভিএম নিয়ে হল্লা না করে কোথায় খামতি রয়ে গিয়েছে খুঁজে বের করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেজরিওয়ালকে। কপিল মিশ্রও তাঁর পক্ষ নিয়েছিলেন। তবে এই বিষয়ে ওখলার বিধায়ক আমানাতুল্লা কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়ান। উল্টে কুমারের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ঘাতকতার অভিযোগ তোলেন। যারপর আমানাতুল্লাকে হটানোর পক্ষে জোর সওয়াল করেন কপিল মিশ্র। দলের মধ্যে এমন বিভাজন পছন্দ হয়নি কেজরিওয়ালের। চাপে পড়ে আমানাতুল্লাকে বহিষ্কার করলেও, কুমার বিশ্বাকেও কড়া বার্তা দিতে চাইছিলেন। তাই শনিবার কপিলকে সরিয়ে আদতে কুমার বিশ্বাসকেই কড়া বার্তা দেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন, দলের রাশ এখনও তাঁর হাতে।
তবে কপিলের অভিযোগে প্রশ্ন উঠে গেল অরবিন্দ কেজরওয়ালের ভাবমূ্র্তি নিয়ে । যদিও দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসোদিয়া কপিলের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কপিলের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *