BRAKING NEWS

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে দেশী ও বিদেশী পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেবার চেষ্টা হচ্ছে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ মে৷৷ সারা দেশেই বর্তমানে শিক্ষা এবং সংসৃকতির উপর প্রচন্ড আক্রমণ নেমে এসেছে৷ কেন্দ্রের

মঙ্গলবার আগরতলায় নবনির্মিত শিক্ষা ভবনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ নিজস্ব ছবি৷

বর্তমান শাসকবর্গ মুখে বলছে সবার জন্য শিক্ষা, কিন্তু একে কার্যকর করার জন্যে যে অর্থের প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করার ধারে কাছেও তারা যাচ্ছেননা৷ বরং হচ্ছে উল্টোটাই৷ মানব সম্পদ বিকাশের যে মূল দুটি ধারা সেই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটি ক্ষেত্রকেই দেশী এবং বিদেশী পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেবার চেষ্টা হচ্ছে৷ আজ বিকালে অফিস লেন-এ শিক্ষা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত পাঁচটি দপ্তরের অধিকর্তার কার্যালয়কে শিক্ষা ভবন -এ একই ছাদের তলায় আনা হয়েছে৷ এই বাড়ীটির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আজ বিকালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল৷ এর সাক্ষী থাকতে শিক্ষা এবং সংসৃকতির সঙ্গে যুক্ত নবীন প্রবীন অনেকেই ভীড় জমিয়েছিলেন৷ ৮৬১০ স্কোয়ার মিটার এলাকা নিয়ে সমগ্র বাড়ীটি গড়ে উঠেছে৷ এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি টাকা৷ বাড়ীটি নির্মাণে দায়িত্বে ছিল রাজ্য সরকারের পূর্ত দপ্তর৷ এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষার অধিকর্তার কার্যালয় ছাড়া রয়েছে টিচার্স রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অফিস৷ দ্বিতলে রয়েছে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তার কার্যালয়৷ তৃতীয় তলে রয়েছে সেকেন্ডারী এডুকেশন অধিকর্তার কার্যালয়৷ চতুর্থ তলায় রয়েছে এলিমেন্টরী এডুকেশন অধিকর্তর কার্যালয়৷ সর্বশেষে অর্থাৎ পাঁচতলায় করা হয়েছে ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক দপ্তরের অধির্তার কার্যালয়৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অতীতের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সুকল, কলেজ স্থাপনের দাবী, ছাত্র-ছাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করার, বুক ব্যাঙ্ক থেকে বই নিয়ে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে পারে তার ব্যবস্থা করার দাবী নিয়ে এক সময় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তার কার্যালয়ে আসতে হত৷ কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার আসার পর থেকে শিক্ষার পরিবেশের একটা ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে৷ শিক্ষাকে সার্বজনীন করা শুধু ঘোষণা নয় রাজ্যে একে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে৷ আজ কলেজস্তর পর্যন্ত এ রাজ্যে সিক্ষা অবৈতনিক৷ আসন নেই বলে কোন ছেলে, মেয়ে সুকল, কলেজে ভর্তি হতে পারছেননা এমন একটা উদাহরণও আজ কেউ দেখাতে পারবেননা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রাবস্থায় আমাদের যে স্বপ্ণ অধরা ছিল তা যাতে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বামফ্রন্ট সরকার যাত্রা শুরু করে৷ তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই করতে চাই৷ কিন্তু আমাদের সরকারের একটা সীমাবদ্ধতা আছে৷ আসলে জাতীয়নীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন না হলে একটা রাজ্যের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয় ৷ কেন্দ্রের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া না গেলে অনেক কিছুই করা যায় না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বুনিয়াদী শিক্ষাকে সার্বজনীন করার জন্য দেশের সংবিধানে একটি ধারায় স্পষ্ট করেই বলে থাকলেও বিষয়টি আজও কার্যকর হয়নি৷ স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও দেশের ৩৫ কোটি মানুষ এখনও নিজের নাম লিখতে পারেননা৷ অথচ একের পর এক শিক্ষা কমিশন তৈরী হয়েছে৷ সব কমিশনের একই কথা সবাইকে শিক্ষিত কর৷ অথচ প্রকৃত ঘটনা সবাই দেখছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের বড় বড় রাজ্যগুলি শিক্ষার ক্ষেত্রে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত বেসরকারীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ অথচ ত্রিপুরায় উল্টো নীতি নেয়া হচ্ছে৷ স্বাস্থ্যেরে ক্ষেত্রেও একই অবস্থা৷ রাজ্যের ৯৭ শতাংশ মানুষই সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ নিচ্ছেন৷ এখন আমাদের দেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রামায়ণ, মহাভারত থেকে নেজাতী, মহাত্মাগান্ধী, ভগৎ সিং- র নাম কি জানা যাবে? এখন বিজ্ঞান নিয়েও তামাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে আমরা যা চাইছি তা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী সমৃদ্ধ ত্রিপুরা গড়ার কাজে রাজ্যের সব অংশের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *