BRAKING NEWS

পে ও পেনশন রিভিশন কমিটি গঠন করে কর্মচারীকূলকে সংশয়ে ফেলল রাজ্য সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ এপ্রিল৷৷ প্রাপ্তি নিয়ে আরো কয়েক দিন রাজ্যের সরকারী কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের সংশয়ে দিন কাটাতে হবে৷ রাজ্য সরকার কর্মচারীদের বেতনক্রম সংশোধনের জন্য পে এবং পেনশন রিভিশন কমিটি গঠন করেছে৷ সরকারী কর্মচারীদের একাংশের মতে, গত পে রিভিউ কমিটি অনুসারে যে বঞ্চনা হয়েছে, তাতে এখন পে এবং পেনশন রিভিশন কমিটি গঠন করে রাজ্য সরকার তাদের জন্য কতটা উদার হবে তা সহজে অনুমান করা যাচ্ছে না৷
রাজ্য সরকার এদিন সরকারী কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের বর্তমান বেতনক্রম সংশোধনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার জন্য তিন সদস্যের বেতন এবং পেনশন রিভিশন কমিটি গঠন করেছে৷ কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব জি কে রাও৷ সদস্য হয়েছেন রাজ্য সরকারের প্রধান সচিব সুশীল কুমার৷ এই কমিটির সচিব হয়েছেন অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব দেবাশীষ মোদক৷ আগামী এসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হবে৷ বিজ্ঞপ্তি জারি হবার ৪৫ দিনের মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে৷ এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
এবিষয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় স্তরে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ ভারত সরকার গ্রহণ করার পর রাজ্যেও কর্মচারীদের ও পেনশনারদের বেতনক্রম সংশোধন করার কথা বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের বিবেচনায় ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করলেও অন্যান্য ভাতা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে রাজ্যের কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের দ্রুততার সাথে সংশোধিত বেতনক্রম দিতেই এই বেতন ও পেনশন রিভিশন কমিটির গঠন করেছে৷ বেতন ও পেনশন রিভিশন কমিটির বিজ্ঞপ্তি আগামীকালের মধ্যেই জারি হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য, রাজ্যের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এবারের বাজেট অধিবেশনেও অর্থমন্ত্রী এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন এবং একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকার সংস্থানও রাখা হয়েছে৷
তাঁর এই বক্তব্যে, কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের পাওনা মিটিয়ে দিতে রাজ্য সরকার আদৌ উদার হতে পারবে কি না, সংশয় রয়েই যাচ্ছে৷ কারণ, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে ৬০০ কোটি টাকা কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য সংস্থান রাখা হয়েছে৷ তাতে সর্বাধিক ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করছে কর্মচারী সংগঠন৷
অবশ্য, কমিটি তার সুপারিশগুলি রূপায়ন করলে কি পরিমান অর্থ ব্যয় হবে তারও একটা হিসাব দেবে এবং এই সুপারিশ রূপায়ন করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে তা কি করে আসবে সে ব্যাপারেও ধারণা দেবে৷ এব্যাপারে কমিটি রাজ্য সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা দপ্তরের সাথে পরামর্শ করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, বেতন ও পেনশন রিভিশন কমিটির আওতায় আসবেন ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৩ জন সরকারী কর্মচার এবং ৫৭ হাজার ৬৮৮ জন পেনশনভোগী৷ পিএসইউ’র কর্মচারীদের জন্য বেতন রিভিশনের বিষয়টি কমিটি পৃথকভাবে পরীক্ষা করবে৷
এদিকে, কর্মচারী সংগঠনের একাংশের মতে, সামনে নির্বাচন তাই আবারও কর্মচারীদের বঞ্চিত করার ঝঁুকি নেবে না রাজ্য সরকার৷ তাঁদের বক্তব্য, দেশের কয়েকটি রাজ্য সপ্তম বেতন কমিশন চালু করেনি৷ তার বদলে পে রিভিশন করেছে৷ তাতে দেখা গেছে, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে কেন্দ্রীয় হারে কর্মচারীরা যা পেয়েছে, পে রিভিশন করে ঐ রাজ্যগুলির সরকারী কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা তার থেকে বেশি লাভবান হয়েছেন৷ তবে, এরাজ্যে সরকারী কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা কি পাবেন তার জন্য আরো কয়েকটা দিন তাদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে৷
পে এবং পেনশন রিভিশন কমিটির নিয়মাবলী নিম্নলিখিত বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরী হবে-
পে রিভিশন বা বেতন সংশোধনী ২০০৯ সালের বেতন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হবে৷ এই বেতন কাঠামোর আওতায় থাকবেন রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা, ত্রিপুরা হাইকোর্ট এবং অধস্তন আদালতগুলির কর্মচারী, ত্রিপুরা বিধানসভা সচিবালয়, ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, গ্রান্ট ইন এইড বিদ্যালয়, ত্রিপুরা বোর্ড অব সেকেন্ডারী এডুকেশন এবং সাংবিধানিক কর্মচারীগণ৷ ২০০৯ সালের রিভিশনে যেসব বেতন সংক্রান্ত বৈষম্য রয়ে গেছে সেগুলির বিবেচনা৷ রাজ্য সরকার প্রদত্ত বর্তমান ডি এ-কে বিবেচনা করে ডি এ প্রদান এবং ভবিষ্যতে ডি এ প্রদানের ফর্মূলা বা নিয়মাবলী৷ বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য পে রিভিশন ফিক্সেশন ফর্মূলা৷ বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন ভাতার হারের রিভিশন৷ রিভিশনের ফলে উদ্ভুত চাকুরী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়৷ সরকারী কর্মচারীদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করার ক্ষেত্রে বেতন সংক্রান্ত নিয়মাবলীর রিভিশন৷ রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের পেনশন রিভিশন ও অবসর সংক্রান্ত প্রাপ্তি৷ অন্য যে কোন বিষয় যে সম্পর্কে রাজ্য সরকার কমিটির কাছে রেফার করতে পারে৷ রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা করে কমিটি তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করতে পারবে৷ কমিটি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে সম্ভাব্য ও কাঙ্খিত সুপারিশ প্রদান করবে৷ এসব বিবেচ্য বিষয়ের মধ্যে সমস্ত সংশোধনী সহ ‘দি টি এস সি এস (রিবাইজড পে) রুলস ২০০৯’ -এ বেতন কাঠামো৷ সর্বশেষ সংশোধনী সহ ‘দি টি এস সি এস (রিভাইজড পেনশন) রুলস ২০০৯’- এর পেনশন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রাপ্তি৷ ডি এ এর একত্রীকরণ৷ রাজ্য সরকারের সম্পদের অবস্থা এবং উননয়নমূলক কাজের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *