হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ (অসম), ০২ এপ্রিল, (হি.স.) : তুফান, সঙ্গে মুষলধারে শিলাঝড় ও বজ্রবৃষ্টির দরুন বরাক উপত্যকার কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করিমগঞ্জের পাথারকান্দি ও হাইলাকান্দির লালা রাজস্ব সার্কল এলাকায়। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাইলাকান্দি জেলার কাটলিছড়ার সীমান্তবর্তী মিজোরামের কলাশিব জেলায়ও। আজ রবিবার ভোর প্রায় পাঁচ-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সংঘটিত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রভাবিত হয়ে পড়েছে দুই জেলার জনজীবন। হাইলাকান্দি জেলায় আট থেকে দশজন ঝড়-তুফানের কবলে পড়ে ঘায়েল হয়েছেন। এদের মধ্যে রামচরণ নুনিয়া এবং ইকবাল হুসেনকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। ভূপতিত হয়েছে শ-দেড়শো বাড়িঘর। রাস্তাঘাটে গাছ-গাছালি পড়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা।
আজ ভোরের প্রচণ্ড বেগে ধাবিত ঝড়-ঝঞ্ঝার সাক্ষী তিন জেলার বিপর্যয় প্রভাবিত মানুষজন। উত্তর ও দক্ষিণ করিমগঞ্জ, পাথারকান্দি, রাতাবাড়ি, লালা, কাটলিছড়া ইত্যাদি নানা অঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ। শিলাবৃষ্টির এতই প্রভাব ছিল যে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে তিনটে) হাইলাকান্দির প্রভাবিত এলাকার মাঠে, বাড়িঘরের উঠোনে ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি স্তরের বরফ জমাট বেঁধে রয়েছে। ভোরে মুষলধারে যে শিলাবৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর এক একটির আকার কম করেও ৮-১০ ইঞ্চি ছিল বলে প্রভাবিত অনেকেই জানিয়েছেন।
কালবৈশাখীর আগাম ঝাপটায় বরাক উপত্যকার জীবনযাত্রা এমনিতেই গত চার-পাঁচদিন ধরে বিপর্যস্ত। কাছাড়-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি জেলার মোট প্রায় ১২ হাজার হেক্টর কৃষিজমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে বহু কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, বরাক উপত্যকার সদর শিলচর শহরে সৃষ্ট কৃত্রিম বন্যায়ও নাগরিককুল বিধ্বস্ত। শিলচর-করিমগঞ্জ-আগরতলার জীবনরেখা জাতীয় সড়কের বহু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ডিমাহাসাও জেলার হাফলং-হারাঙ্গাজাও সড়ক।
আরও দিন কয়েক উত্তর-পূর্বে বইবে শিলাঝড় ও বজ্রবৃষ্টি : আবহাওয়া দফতর
গুয়াহাটি, ০২ এপ্রিল, (হি.স.) : এপ্রিল মাসে গোড়ার দিকে অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি, শিলাঝড় ও বজ্রবৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের মতো কালবৈশাখীর ছোবল নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ফলেই এমন সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন আবহাওয়াবিদরা। গুয়াহাটির বরঝাড়ে অবস্থিত আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, গোটা এপ্রিল মাসে কখনও কখনও বার বার ভোগাতে পারে অকাল বর্ষা।
বসন্তের দিনগুলোতেও আর গ্রীষ্মঋতুর সূচনার কালগুলোতে অর্থাৎ চৈত্র-বৈশাখ মাসে কখনও কখনও এমন ঘটে থাকে বলে জানা গেছে। গত তিনদিন ধরে গুয়াহাটির পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল তেজপুর, উজান অসম, বরাক উপত্যকায় শিলাঝড় বৃষ্টির কবলে পড়েছে। আজ রবিবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ভোর থেকে আকাশ গুমরো মুখ করে রয়েছে। এভাবে আরও কয়েকদিন থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
রবিবার গুয়াহাটির তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।