দশ সহস্রাধিক শিক্ষকের চাকুরি বাতিল করল সুপ্রিম কোর্টও

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মার্চ৷৷ শিক্ষক চাকুরিচ্যুতি মামলায় উচ্চ আদালতের রায় বহাল রইল৷ ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরি বাতিল করল সর্বোচ্চ আদালতও৷ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের চাকুরিতে বহাল রাখার সুযোগ দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট৷ তবে, এই সময়ের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে বলে সুপ্রিমকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে৷ আগামী মে মাসের মধ্যেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যও নির্দেশ সর্বোচ্চ আদালতের৷ এবিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, এই রায় অপ্রত্যাশিত৷ তবে, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবে রাজ্য সরকার৷ পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তবেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

বুধবার সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি আদর্শ গোয়েল এবং বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন৷ সর্বোচ্চ আদালত রায়ে বলেছে, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে এনসিটিই’র নতুন নির্দেশিকা মেনেই শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷ ১০,৩২৩ জন চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে যাদের যোগ্যতা রয়েছে তারা নতুন করে চাকুরির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন৷ এরই পাশাপাশি চাকুরিবঞ্চিতরাও আবেদন জানাতে পারবেন৷ ৩১ মে’র মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচচ আদালত৷

সুপ্রিমকোর্টের এই রায়ে ১০,৩২৩ জন শিক্ষক আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকুরিতে বহাল থাকবেন৷ কিন্তু ২০১৮ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুনভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যারাই বাছাই হবেন তারাই শিক্ষক পদে চাকুরি করবেন৷ এক্ষেত্রে চাকুরিচ্যুতদের মধ্যে যারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাছাই হবেন তাদের চাকুরি বহাল থাকবে৷

সূত্রের খবর, রায়ে আরো বলা হয়েছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক পাওয়া না গেলে আইন শিথিল করার জন্য রাজ্য সরকার এনসিটিই এবং কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের কাছে আবেদন জানাতে পারবে৷ সেক্ষেত্রে তাদের অনুমতিক্রমে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারবে রাজ্য সরকার৷

মঙ্গলবার এই মামলাতে দীর্ঘ শুনানি হয়েছে৷ দিনভর রাজ্য সরকার ও শিক্ষকদের পক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল করেছিলেন৷ আজ সকাল সাড়ে এগারটা নাগাদ সুপ্রিমকোর্টে মামলাটির ফের শুনানি শুরু হয়৷ বরিষ্ঠ আইনজীবী পিপি রাও, রাজীব ধওয়ান, জেপি কামাথ, সলমান খুরশিদ এবং সুপ্রিমকোর্টে রাজ্য সরকারের এডভোকেট জেনারেল গোপাল সিং সওয়াল করেছেন৷ প্রায় চারটা পর্যন্ত শুনানি চলেছে সুপ্রিমকোর্টে৷ বিকেল চারটের পর সর্বোচ্চ আদালত এই মামলার রায় দিয়েছে৷

এবিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী এদিন সন্ধ্যায় মহাকরণে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সুপ্রিমকোর্টের রায় আমরা মেনে নিচ্ছি৷ তবে এই রায় অপ্রত্যাশিত৷ রাজ্য সরকার সমস্ত চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের পাশে রয়েছে৷ তবে, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে৷ তারপর মুখ্যমন্ত্রী এবং আইন দপ্তর ও শিক্ষা দপ্তরের উচ্চ আধিকারিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ এদিন তিনি বলেন, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরি টিকিয়ে রাখতে রাজ্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে৷ নিয়োগনীতিতে গলদ ছিল, সেই কারণ দেখিয়ে ত্রিপুরা হাইকোর্ট নিয়োগনীতি সংশোধন করতে বলেছিল৷ তাতে, শিক্ষকদের চাকুরি বাতিল হয়েছিল৷ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৬ মে ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরি বাতিল হয়েছিল৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানায় রাজ্য সরকার৷ মোট তিনটি মামলা হয় সর্বোচ্চ আদালতে৷ এরপর থেকে এই মামলা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিন কাটিয়েছেন চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা৷ এরই পাশাপাশি রাজ্যবাসীও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন৷ কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতও আজ ত্রিপুরা হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রেখেছে৷ এই রায় প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকার বেআইনীভাবে কাউকে চাকুরি দেয়নি৷

সুপ্রিমকোর্টের এই রায়ে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা চরম হতাশাগ্রস্ত৷ রাজ্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দিলেও কি পদ্ধতিতে তা সম্ভব সে বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ তাতে, প্রশ্ণ উঠেছে রাজ্য সরকার চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করা আদৌ সম্ভব কিনা৷ চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সময় থাকতে তাদের শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হলে আজ এই পরিণতি হত না৷ কারণ, ২০০০ সালে শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল রাজ্য সরকার৷ কিন্তু চাকুরি দেওয়া শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে৷ ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তাদের নিয়োগ করা হয়েছিল৷ তাতে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের ক্ষোভ, দশবছর চাকুরি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার সময় অপচয় না করলে এনসিটিই’র নতুন গাইড লাইনের গ্যাঁড়াকলে তাদের পড়তে হত না৷ প্রশ্ণ আরো উঠেছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে যারা বাছাই হবেন না তাদের বিকল্প পথে চাকুরি দিতে গেলে বাড়তি খরচ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ সমপরিমাণ অর্থ রাজ্যের ভাড়ারে রয়েছে কিনা, সে প্রশ্ণও উঠছে৷ একাংশের বক্তব্য, চাকুরিচ্যুতদের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করাও সম্ভব হবে না রাজ্য সরকারের৷ ফলে, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের ভবিষ্যত নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই যাচ্ছে৷