স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও বিএসএফে স্নায়ুর লড়াইয়ে ঘোলাটে চিত্তাবাড়ির প্রকৃত ঘটনা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ মার্চ৷৷ স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং বিএসএফের মধ্যে স্নায়ুর লড়াইয়ে সাব্রুম মহকুমার চিত্তাবাড়িতে

সাব্রুমে চিত্তাবাড়িতে বিএসএফের গুলিতে নিহত তিনজনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান পর্যটন মন্ত্রী রতন ভৌমিক সহ অন্যান্যরা৷ শনিবার তোলা নিজস্ব ছবি৷

তিন গ্রামবাসী নিহত এবং দুইজন আহত হওয়ার প্রকৃত ঘটনাটি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে৷ রাজ্য সরকার এই ঘটনাটি অমানবিক উল্লেখ করে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিএসএফের পূর্ণ সহযোগিতা দাবী করেছে৷ অন্যদিকে বিএসএফ এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে৷ এদিকে, এই ঘটনাকে ঘিরে সাব্রুম মহকুমায় বারো ঘন্টার বন্ধ পালন করেছে সিপিএম৷ শনিবার নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে গিয়েছেন সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী, পর্যটন মন্ত্রী রতন ভৌমিক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া, বিধানসভার মুখ্য সচেতক বাসুদেব মজুমদার, মনু বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক প্রভাত চৌধুরী সহ স্থানীয় সিপিএম নেতৃবৃন্দ৷ এদিন, সাব্রুমে পর্যটন মন্ত্রী এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এই ঘটনাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকে আইজি (আইন শৃঙ্খলা) কে ভি শ্রীজেশ সহ মহকুমা শাসক, জেলা শাসক এবং জেলা পুলিশ আধিকারীকরা উপস্থিত ছিলেন৷ পরিস্থিতি এখনও থমথমে থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে৷
এদিন, স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকাল চারটা নাগাদ রাবার বাগানে কাজ করে বাড়ি ফেরার সময় চিত্তাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সমীর দেববর্মার স্ত্রী সুরলক্ষ্মী ত্রিপুরাকে বিএসএফের ৩১ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের ভাঙ্গামুড়া বিওপির জওয়ানরা শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন৷ তখন তিনি চিৎকার করলে সহকর্মীরা রাবার বাগান থেকে ছুটে আসেন এবং বিএসএফ জওয়ানদের হাত থেকে ঐ মহিলাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন৷ তখনই বিএসএফ জওয়ানরা গুলি চালান৷ তাতে তিনজন নিহত এবং দুইজন গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন৷ এই ঘটনার খবর পেয়ে সাব্রুম থানার ওসি সদলবলে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে সাব্রুম হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সাব্রুম হাসপাতালে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত হয়৷ আহতদের সাব্রুম হাসপাতাল থেকে উদয়পুর ত্রিপুরা সুন্দরী জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়৷ এখন আহতরা জি বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ এই ঘটনায় সাব্রুম থানায় ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪/৩০২/৩২৬/৩৪ ধারায় মামলা লিপিবদ্ধ করেছে৷ তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে৷
রাজ্য সরকার এই ঘটনার তদন্তে বিএসএফের পূর্ণ সহযোগিতা চেয়েছে৷ পাশাপাশি অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে৷ রাজ্য সরকারের বক্তব্য অভিযুক্ত জওয়ানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে আগামী দিনে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে৷
এদিকে, এক প্রেস বিবৃতিতে বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি হরদিপ সিং জানিয়েছেন, শুক্রবার ভাঙ্গামুড়া বিওপি এলাকায় ৩১ নং ব্যাটেলিয়ান বিএসএফের জওয়ানরা লক্ষ্য করেন ত্রিশ চল্লিশ জনের পাচারকারী দল বাংলাদেশে কাঁটাতারের বেড়া হয়নি এমন এলাকা দিয়ে গরু পাচার করছেন৷ ঐ দলে মহিলা ও পুরুষরা ছিলেন৷ বিএসএফ জওয়ানরা তাদের প্রতিরোধ করেন এবং পাচারকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য শূণ্যে দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েন৷ কিন্তু, পাচারাকারীরা তাতে ছত্রভঙ্গ হননি বরং তারা বিএসএফ জওয়ানদের ঘেরাও করে দা ও লাঠি নিয়ে হামলা করতে এগিয়ে আসেন৷ বিএসএফ জওয়ানরা তখন তাদের জীবন সংকটের মুখে দেখে আত্মরক্ষার্থে পাচারকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন৷ তাতে তিন পাচারকারীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে৷ পাচারকারীদের সাথে ধস্তাধস্তিতে বিএসএফ জওয়ানরা আহত হয়েছেন৷ বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে বিএসএফ জওয়ানরা দশটি গরু উদ্ধার করেছেন৷ তবে, এই ঘটনায় বিএসএফ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে৷
স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং বিএসএফ উভয়েই নিজেদের অবস্থানে অনঢ়৷ সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় বিএসএফের পক্ষ থেকে সাব্রুম থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ ফলে, পরিস্থিতি যে পর্য্যায়ে এসে পৌঁছেছে তাতে প্রকৃত ঘটনাটি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে৷