পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল রাজপথে, সংঘর্ষ ইস্যুতে কড়া ভাষায় আক্রমণ বিপ্লবের, সুদীপের রক্ষণাত্মক অবস্থান

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ মার্চ ৷৷ হোলির দিনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন৷ কিন্তু, এই আক্রমণের পাল্টা দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন৷ মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, গতকালের ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীন সিপিএম’র প্রত্যক্ষ মদত ছিল৷ রাজ্য প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সিপিএম’র মদতে তাদের বি টিম হিসেবে কাজ করেছে বর্মণ পরিবার৷ এই পরিবারের কারণেই সিপিএম দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে৷ এই অভিযোগের পাল্টা দিতে গিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ বর্মণ বলেন, বিজেপি আমাদের শত্রু নয়৷ আমাদের শত্রু সিপিএম৷ কিন্তু গতকালকে একটি অরাজনৈতিক ঘটনাকে ইচেছ করে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে৷ তাতে খুশি হবে সিপিএম৷ সুদীপ বাবুর বক্তব্য, যারা টাকা এবং পেশির আস্ফালনে পাগল হয়ে আছে তাদের মানুষ চিনে ফেলেছে৷
হোলির দিনে রাজধানী আগরতলায় বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে সারা রাজ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ দুদলই পৃথকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করেছে৷ এদিন বিজেপি এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করেছে৷ বিজেপি কর্মীদের মারধর এবং পরবর্তী সময় সহ সভাপতি সুবল ভৌমিকের উপর আক্রমণকারী তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণের ভাই সন্দীপ রায় বর্মণ ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় নেতৃবৃন্দ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন৷ দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছে বিজেপি৷ এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসও সন্ধ্যায় ঐ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করেছে৷
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি অভিযোগের সুরে বলেন, হোলির রাতে রাজধানী আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষকে প্রশাসনিক মদতপুষ্ট গতকালের ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীন সিপিএম’র প্রত্যক্ষ মদত ছিল৷ রাজ্য প্রশাসন সিপিএম’র অঙ্গুলি হেলনে কাজ করেছে৷ সিপিএম এবং রাজ্য প্রশাসন মিলে তৃণমূলকে মদত জুগিয়েছে৷ রাজ্য সভাপতির আরো অভিযোগ এর আগেও বর্মণ পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ঘটনায় রাজ্য প্রশাসন মদত দিয়েছে৷ তাঁর দাবি, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই পরিবারটিকে সিপিএম বরাবর ব্যবহার করে আসছে৷ এদিন বিজেপি রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে আঁতাত কিংবা সমঝোতার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, বিজেপি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সমঝোতা করবে না৷
বিজেপির অভিযোগের পাল্টা দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ সরাসরি যুদ্ধে নামেননি৷ বরং কিছুটা রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন৷ এদিন তিনি, স্পষ্ট করে দেন সিপিএম’র বিরুদ্ধেই তৃণমূলের মূল লড়াই৷ রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি তৃণমূলের শত্রু নয়৷ সিপিএম’ই আসল শত্রু৷ তবে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করে রাজ্য বিজেপি প্রধান বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি কোন মাপের নেতা৷ এদিন সুদীপবাবু বলেন, গতকালের ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছি এবং ঐ ঘটনায় বিজেপি কর্মী, তৃণমূল কর্মী এবং আরক্ষা প্রশাসনের যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি৷ তিনি জানান, বিজেপি আমাদের শত্রু নয়৷ আমাদের শত্রু সিপিএম৷ তাই এই রাজ্য থেকে সিপিএম সরাতে অবাম সব রাজনৈতিক দলকে একসাথে আসতে হবে৷ কিন্তু তারা মনে করছেন ৬০ টি আসনে একা লড়াই করে জিতে যাবেন৷ ২০১৮ নির্বাচনে একা লড়াই করে সিপিএমকে হটিয়ে সরকার গড়াতো দূরের কথা, একটা আসনও জিততে পারবে না, বিজেপিকে কটাক্ষ করেন সুদীপবাবু৷
শ্রীবর্মণের দাবি, বহুবছর ধরে বাম সরকারের বিরোধিতা করছি৷ কেউ শত চেষ্টা করেও এই পথ থেকে সরাতে পারবে না৷ এদিন তিনি তৃণমূল কর্মীদেরও সতর্ক করে দেন আগামীদিনে যেন এই ধরনের কোন ঘটনা না ঘটে৷ সব মিলিয়ে এদিন হোলির দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় বিজেপিকে যতটা আক্রমণাত্মক দেখা গেছে, তৃণমূল কংগ্রেস ততটাই রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছে৷