নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ জানুয়ারী৷৷ আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ দুপুরে আগরতলা থেকে উদয়পুর পর্যন্ত
রেল পরিষেবা শুরু হয়েছে৷ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু নয়াদিল্লী থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রেল যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন৷ এদিন তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, ২০২০ সালের মধ্যে পূর্বোত্তরের সব রাজ্যের রাজধানীকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হবে৷ নতুন রেল পথের সূচনা উপলক্ষে আগরতলা রেল স্টেশনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ স্বাস্থ্য ও পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী, পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে, সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী এবং শংকর প্রসাদ দত্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ রেল মন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু এবং আগরতলা রেল স্টেশনে অতিথিগণ পতাকা নেড়ে রেল যাত্রা শুরু করেন৷
এদিন, আগরতলা স্টেশনে উলুধবনি দিয়ে মহিলারাও রেল যাত্রার সূচনায় অংশীদার হন৷ আগরতলা থেকে উদয়পুর পর্যন্ত সবকটি স্টেশনে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল বিশালগড় স্টেশনে৷ স্বপ্ণের বাস্তবায়ন স্বচক্ষে [vsw id=”05Soeahj_og” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না জনগণ৷ উদয়পুর স্টেশনে লক্ষ্য করা গেছে উপচে পড়া ভিড়৷ প্রতিটি স্টেশনে সূচী অনুযায়ী ২ মিনিট করে ট্রেনটি দাঁড়ানোর কথা ছিল৷ কিন্তু প্রচুর উৎসাহী মানুষের সমাগমে খানিকটা বেশি সময় প্রতিটি স্টেশনেই দাঁড়াতে হয়েছে ট্রেনটিকে৷ দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে আগরতলা স্টেশন ছাড়ে ট্রেনটি৷ তবে, ১ঘন্টা ১০ মিনিটে উদয়পুর পৌঁছানোর কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের তিন মিনিট আগে এই ট্রেন বিকেল ৪টা ১৭ মিনিটে পৌঁছায় উদয়পুরে৷ এদিন এই ট্রেনে করে আসা সকল যাত্রীদের ভীষণ আনন্দিত দেখা গেছে৷ উদয়পুরের এসডিএম শুভাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এদিন স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন৷
নয়াদিল্লী থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু বলেন, আগরতলা থেকে উদয়পুর রেল পরিসেবা শুরু হলো৷ এটা খুশীর খবর৷ কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করছে৷ আগরতলা সাব্রুম রেলপথের কাজ এগিয়ে চলেছে৷ তাতে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলে রেল পরিসেবার উন্নয়নে প্রায় ৩৫৪০ কোটি টাকা চলতি অর্থ বছরেই ব্যয় করা হবে৷ কাজগ লাগানো হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি৷ তিনি বলেন, আগরতলা থেকে উদয়পুর ট্রেন পরিসেবা শুরু হওয়ায় পর্যটনের সম্ভাবনা আরও বাড়বে৷ রেলমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে নয়াদিল্লীতে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকাররের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে৷ ত্রিপুরায় উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন অদুর ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের সব থেকে অগ্রসর এলাকা হয়ে উঠবে৷
আগরতলা স্টেসনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভুকে ধন্যবাদ জানান৷ এর পাশাপাশি রেলের আধিকারিকদের প্রতি অনুরোধ জানান, আগরতলা সাব্রুম রেল পথের কাজ যেন দ্বসময় মতো শেষ হয়৷ রাজ্যবাসী বিশ্বাস করেন রেল কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করবে৷ তিনি বলেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে৷ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা গেলে পুরো দক্ষিন এশিয়ার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ গড়ে উঠবে৷ এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় সরকার এ বং রেল মন্ত্রকের অনুরোধ জানান তিনি৷ পূর্ত মন্ত্রী বলেন, রাজ্য রেলপথ সম্প্রসারণে রাজ্য সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে৷
পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে বলেন, বিশালগড়ে জমি নিয়ে সমস্যা না হলে আরও আগেই এই রেলপথ চালু হতো৷ উদয়পুর পর্যন্ত রেলপথ তৈরিতে অনেকে জমি দিয়েছেন৷ এ জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, এখন সবার প্রতীক্ষা করে সাব্রুম পর্যন্ত রেল পরিসেবা চালু হবে৷ তিনি বলেন, আগরতলা আখাউড়া রেল পথ নির্মাণর জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে৷
তিনি রাজ্যে একটি রেল ডিভিশন এবং নিয়োগ বোর্ড স্থাপনের জন্য রেল মন্ত্রকের প্রতি অনুরোধ জানান৷ রেল ডিভিশন স্থাপিত হলে রেল পরিকাঠামোর নির্মাণ কাগে গদিনত আসবে৷ নিয়োগ বোর্ড স্থাপিত হলে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের ইন্টারভিউ দিতে সুবিধা হবে৷ তিনি জানান, অনেক সময়ই আগরতলা দিল্লী ট্রেন দেরীতে চলছে, আগরতলা-গুয়াহাটি ট্রেন বাতিলও হয়েছে৷ তাতে রেল যাত্রীরা অসুবিধায় পড়েছেন৷ তিনি অনুরোধ করেন বর্তমানে চালু ট্রেনগুলি যেন সময় মতো চলে৷ তিনি রেল পথ নির্মাণের কাজে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার, কর্মী শ্রমিকদের ধন্যাদ জানান৷ বক্ত্য রাখতে দিয়ে সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ধর্মনগর থেকে সাব্রুম রেলথ সম্প্রসারণের কাজ আরও খারাপ এগিয়ে গেল৷ এটা রাজ্যে রেলফেতর জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এবং রেল মন্ত্রকের সম্মিলিত প্রয়াস৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন সাব্রুম হয়ে বাংলাদেশের চট্টাগ্রাম অব্দি রেলপথ সম্প্রারিত হবে৷ পাশাপাশি আগরতলা থেকে দিল্লী, কলকাতা, গুয়াহাটি, শিলচর রেল পরিসেবা আরও উন্নতি হবে৷ সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত, ১৯৫২ সাল থেকে রাজ্যে রেলপথ নির্মাণের দাবির কথা তুলে ধরেন৷ তিনি আগরতলা- কলকাতার মধ্যে সপ্তাহে আরও বেশী দ্রুতগামী ট্রেন চালানোর অনুরোধ করেন৷ স্বাগত বক্তব্য রাকেন এন এফ রেলওয়ের চিফ এড মিনিস্ট্রেটিভ অফিসার অশোক কুমার যাদব৷
আগরতলা- উদয়পুর রেল পথের দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার৷ এই পথে তিনটি স্টেশন রয়েছে৷ সেকেরকোর্ট, বিশালগড় এবং বিশ্রামগঞ্জ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিব শ্রীরাম তরণীকান্তি, রেলের পদস্থ আফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন৷
এদিন এই ট্রেনে লোকো পাইলট শান্তিকুমার দাস, এসিসটেন্ট লোকোপাইলট অভিজিৎ ভট্টাচার্য, লোকো ইন্সপেক্টর স্বপন কুমার দাস, চিফ টিটিআই অনুপ বরুয়া এবং টিটিই বিকে দাস ছিলেন৷