তিন বছরের খতিয়ান দিলেন পুলিশ প্রধান, দূর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে, কমেছে অপরাধীদের সাজা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জানুয়ারি৷৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকলেও আরক্ষা প্রশাসনের সাফল্য দাবি করলেন রাজ্য

বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ডিজিপি৷ ছবি নিজস্ব৷
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ডিজিপি৷ ছবি নিজস্ব৷

পুলিশের মহানির্দেশক কে নাগরাজ৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে আরক্ষা প্রশাসনের গত তিন বছরের কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি৷ তাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য আসলেও ব্যর্থতারও নজির রয়েছে৷ বিশেষ করে সাজার হারের ক্ষেত্রে আরক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয় নয়৷ গত তিন বছরের তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে যেখানে সাজার হার ছিল ২০ শতাংশ, সেটা ২০১৫ সালে বেড়ে হয়েছিল ৩০ শতাংশ৷ কিন্তু ২০১৬ সালে ফের সাজার হার নিম্নমুখী৷ গত বছর সাজার হার ছিল ২৫৬ শতাংশ৷ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের দাবি, তিনবছরের হিসেব অনুসারে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সাজার হার বেড়ে রয়েছে৷ কিন্তু ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের সাজার হার নিম্নমুখী, সেই বিষয়টি খাটো করেই দেখতে চাইছেন তিনি৷ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের মতে, সাজার হার বাড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ যুক্ত থাকে৷ তাঁর দাবি, একা পুলিশের পক্ষে সাজার হার বাড়ানো সম্ভব নয়৷ এক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে সরকারি আইনজীবীদের ভূমিকা প্রশ্ণচিহ্ণের মুখে সেই বিষয়টি রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের দাবির ভিত্তিতে প্রমাণিত৷
এদিন, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক জানিয়েছেন, সাজার হার আরো কিভাবে বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা ক্রমাগত জারি রয়েছে৷ গত ১বছরের বিভিন্ন মামলায় আদালতের রায় পর্যালোচনা করে খামতি কোথায় কোথায় রয়েছে তা খঁুজে বের করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি তিনি মনে করেন, সাজার হার বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা বিরাট ভূমিকা পালন করে৷ তিনি জানান, মিজোরামে সাজার হার বিভিন্ন রাজ্যের তুলনায় সর্বাধিক৷ কারণ, সেখানে সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে৷
এদিকে, রাজ্যে দুর্ঘটনা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে বলে রাজ্য পুলিশ দাবি করেছে৷ সেই সাথে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এবং আহত হওয়ার ঘটনাও কমেছে বলে দাবি৷ কিন্তু রাজ্য পুলিশের দেওয়া তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক৷ ২০১৪ সালের ৭১৬টি যান দুর্ঘটনায় ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ গড় হিসাব ২৬৮১ শতাংশ৷ ২০১৫ সালে ৬৪৭টি যান দুর্ঘটনায় ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ গড় হিসাব ২৫১৯ শতাংশ৷ ২০১৬ সালে ৫৫৭টি যান দুর্ঘটনায় ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তাতে গড় হিসাব ৩১২৩ শতাংশ৷ স্বাভাবিকভাবেই ২০১৬ সালে যান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বেড়েছে৷ দুর্ঘটনা কমলেও মৃত্যু মিছিল কমেনি৷ তা সত্ত্বেও পুলিশের দাবি, বিগত বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে যান দুর্ঘটনা ততটা উদ্বেগজনক নয়৷ এদিকে, যান দুর্ঘটনায় দায়ী চালকদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই জানাতে পারেনি পুলিশ৷ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের বক্তব্য, বিভিন্ন ঘটনায় দায়ী যান চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ লাইসেন্স বাতিল থেকে শুরু করে জরিমানা সবকিছুরই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে৷ গত বছর ১১৭ জন চালকের লাইসেন্স বাতিল করার নোটিশ জারি করা হয়েছে৷ তবে, এখনো পর্যন্ত যান দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের কতজনের লাইসেন্স বাতিল কিংবা জরিমানা করা হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেননি পুলিশ৷
এদিকে, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সক্রিয়তা নিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ণ উঠেছে৷ প্রতিনিয়ত পাচার এবং গাঁজাচাষ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা সে প্রশ্ণের উত্তরে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক জানান, যখনই খবর পাওয়া যায় তখনই অভিযান চালিয়ে সাফল্য এসেছে৷ কিন্তু প্রশ্ণ উঠেছে পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাচার সংক্রান্ত খবর যতটা পৌঁছায় তার থেকে বেশি বিএসএফ’র কাছে গোপন খবর পৌঁছে যায়৷ ফেন্সিডিলের পাচার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না সে বিষয়েই রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ণ উঠেছে৷ অবশ্য রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে দাবি করেন, গোয়েন্দারা যথেষ্ট সক্রিয়৷
এদিন, রাজ্য পুলিশ দাবি করেন আরক্ষা প্রশাসনের আধুনিকীকরণে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ তার পাশাপাশি জনগণের সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং অপরাধের বিষয়ে জনসচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়াস কর্মসূচীর সাফল্যের সাথে রূপায়িত হচ্ছে৷ ২০১৬ সালে রাজ্যে ১০ হাজার ৬৯৯টি প্রয়াস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ আগামীদিনে এর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে৷ তিনি দাবি করেন, রাজ্যে অপরাধ নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে প্রয়াস কর্মসূচী অন্যতম ভূমিকা পালন করে চলেছে৷
চিটফান্ড মামলায় সিট এর তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন ডিজিপি৷ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কে ভি শ্রীজেশ৷ তিনি বলেন, চিটফান্ড কান্ডে ৭৮টি মামলা হাতে নিয়েছে সিট৷ এর মধ্যে ২৮টি মামলায় চার্জশীট জমা দেওয়া হয়েছে৷ বাকিগুলিরও তদন্ত জোর কদমে চলছে৷ অধিকাংশেরই তদন্ত অন্তিম পর্য্যায়ে রয়েছে৷ এদিন তিনি বলেন, আর্থিক অপরাধজনিত মামলার তদন্তে অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত বেশী সময় নেয়৷ কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্যের বাইরে গিয়ে তদন্ত করতে হচ্ছে৷ এদিন তিনি জানান, এখনও পর্য্যন্ত চিটফান্ড কান্ডে মামলাগুলির সাথে জড়িত ৪৮টি সংস্থার ১১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ সাথে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে৷ এদিন তিনি দাবি করেন, খুব শীঘ্রই সিট সবগুলি মামলায় আদালতে চার্জশীট জমা দেবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *