যৌন নির্যাতনের মামলায় ধৃত হানিফকে ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও বামপন্থী নারী ব্রিগেডের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ ডিসেম্বর৷৷ ভাই কৃতক বোনের যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার পূর্ব

হানিফ মিয়াকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় গিয়ে পুলিশকে ধমকাল শাসক দলের নারী সমিতির নেত্রীরা৷ সোমবার পূর্ব আগরতলা থানায় তোলা নিজস্ব ছবি৷
হানিফ মিয়াকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় গিয়ে পুলিশকে ধমকাল শাসক দলের নারী সমিতির নেত্রীরা৷ সোমবার পূর্ব আগরতলা থানায় তোলা নিজস্ব ছবি৷

আগরতলা মহিলা থানা চত্বরে তীব্র উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷ একদিকে, অভিযুক্ত ভাইকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে, অন্যদিকে নির্যাতিতা বোনের হয়ে ভাইয়ের কঠোর শাস্তির দাবীতে মহিলাদের দুই ব্রিগেড মুখোমুখী হয় থানা চত্বরে৷ তাতেই উত্তেজনার পরিবেশ৷ পরিস্থিতি অবনতি হয়ে যেত অল্পেতে সামাল দিয়েছেন পূর্ব আগরতলা থানার ওসি প্রণব দেবনাথ সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মী ও অফিসাররা৷
সংবাদে প্রকাশ, শহরতলীর শ্রীলঙ্কা বস্তি এলাকার এক কলেজপড়ুয়া যুবতী রবিবার পূর্ব মহিলা থানায় একটি অভিযোগ করেন যে তার বৈমাত্রেয় ভাই তথা সবশিক্ষার শিক্ষক হানিফ মিয়া তাকে যৌন নির্যাতন করছে দীর্ঘদিন ধরে৷ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে৷ তাকে থানায় নিয়ে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী৷ সোমবার দুপুরে শ্লীলঙ্কা বস্তি এলাকার বেশ কিছু যুবক-যুবতী, পুরুষ-মহিলা পূর্ব আগরতলা মহিলা থানা ঘেরাও করেন৷ তাদের দাবি হানিফ মিয়া নির্দোষ৷ তাকে ফাঁসানো হয়েছে৷ অবিলম্বে তাকে থানা থেকে মুক্ত করতে হবে৷ এই দাবিতে শ্রীলঙ্কাবস্তির জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন৷ তারা এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন যে মহিলা থানার ভেতরে ঢুকে হৈচৈ শুরু করে দেন৷ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠায় পূর্ব আগরতলা থানার পুলিশ মহিলা থানায় ছুটে যায়৷ কোনও রকমে ক্ষুব্ধ জনতাকে থানা থেকে বেড় করে মূল গেইটে তালা দিয়ে দেয়৷ তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে গালিগালাজও করতে থাকে ক্ষুব্ধ জনতা৷ পুলিশের বক্তব্য যা হবার কোর্টে হবে৷ আগামীকাল অভিযুক্ত হানিফ মিয়াকে কোর্টে সোপর্দ করা হবে৷
এদিকে, হানিরে মা সহ এলাকার জনগণের বক্তব্য অভিযোগকারীনি কলেজ পড়ুয়া ঐ মেয়েটির এলাকার রাকেশ মিয়া নামে এক ব্যক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত৷ রাকেশ বিবাহিত৷ স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে৷ মেয়েটির যখন ১৫ বছর বয়স সেই থেকেই এই অবৈধ সম্পর্ক৷ রবিবার হানিফ থাপ্পর দিয়েছিল রাকেশকে৷ এই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেনি ঐ যুবতী৷ তাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করে৷
অন্যদিকে, এদিন যখন শ্রীলঙ্কাবস্তি এলাকার জনগণ পূর্ব মহিলা থানায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তখন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী পান্না দেব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান অভিযুক্ত হানিফ মিয়ার কঠোর শাস্তির দাবী নিয়ে৷ সেখানে যেতেই পান্না দেবের উপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে শ্রীলঙ্কাবস্তির নারী ব্রিগেড৷ জানা গিয়েছে, হানিফকে যারা থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় হাজির হয়েছিলেন তারা শাসক দলের নারী সমিতির সক্রিয় সদস্যা৷ তাদের তোপের মুখে রীতিমতো নাস্তানুবাদ হয়ে পড়েন পান্না ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মহিলা৷ অবস্থা বেগতিক দেখে পূর্ব আগরতলা থানার পুলিশ কোনওরকমে থানা থেকে নিরাপত্তা দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে দেয়৷ পরে পান্না সহ অন্যান্যরা পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সর্মিষ্ঠা চক্রবর্তীর সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ তারা হানিফ মিয়ার কঠোর শাস্তির দাবি জানান৷ পূর্ব মহিলা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামীকাল হানিফকে কোর্টে তোলা হবে৷ সেখানেই যা হবার হবে৷ এদিকে, শাসক দলের এই শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করবে পুলিশ, এটাই কাম্য৷ কিন্তু এখানে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শাসক দলের নারী সমিতির সদস্যাদের থানা ঘেরাওয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে৷