কলকাতা, ১১ নভেম্বর (হি.স.) : রাজ্য বিজেপি দলের এবং দেশের আইন-কানুন মেনেই ব্যাঙ্কে টাকা জমা করেছে| আর টাকা জমার নিয়মানুসারে দলের প্যান নম্বর দিয়েই ব্যাঙ্কে ওই টাকা জমা করা হয়েছে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার| শুক্রবার রাজ্য বিজেপির দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধান্যনিয়াকে পাশে নিয়ে বলেন, বিজেপি নিজের স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই দলের প্যান সহযোগে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে টাকা জমা করেছে|
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর দলের লেভিসহ বিভিন্ সংগ্রহিত টাকা ব্যাঙ্কে জমা করে| আর ওইদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের উদ্দেশ্যে ভাষণে ভারতীয় মুদ্রার পাঁচশো ও একহাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করেন| এরপরই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কী দলের রাজ্য নেতাদের কাছে এব্যাপারে আগাম কোন ইঙ্গিত ছিল| এর জবাবে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দলের কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধান্যনিয়া ও সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সাফ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এমন কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলের জানা কথা নয়| দলের রাজ্য শাখা তাদের নিয়মমাফিক ব্যাঙ্কে লেনদেন করেছে| আর এর হিসেবও নিয়মানুসারে আয়কর দফতর ও নির্বাচন কমিশনকে জমা দিয়েছে| এরসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত পাঁচশো ও একহাজার টাকার নোট বাতিল করার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই| বরং এটি একটি সমকালীন ঘটনা বলে তাঁরা উল্লেখ করেন| আর এজন্য দলের রাজ্য শাখা কোন বাড়তি সুযোগ বা সুবিধা পায়নি|
একপ্রশ্নের জবাবে সহসভাপতি জয়প্রকাশ বাৱু বলেন, দলের রাজ্য শাখা মাসে কত টাকা ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন করে তা নিয়মানুসারে আয়কর দফতর ও নির্বাচন কমিশনকে জমা দেওয়া হয়েছে| এব্যাপারে দল অন্য কোন সংস্থাকে জানাতে বাধ্য নয়| আবার দল অন্য কাউর অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে না| কেননা দল জানে, এটা যে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে এক্তিয়ার বর্হিভূত বিষয়|
এদিন তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম ও কংগ্রেসের পাশাপাশি শাসকদল তৃণমূলকে একহাত নিয়ে অভিয়োগ করেন, সিপিএমের মুখে এমন অভিযোগ সোভা পায় না| তিনি ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্তে হদিশ পাওয়া সিপিএমের দুই নেতা নিরুপম সেন ও বিমান বসুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে থাকা প্রায় ১৬ কোটি টাকার কোন হিসেব দিতে পারেনি| এমনকি ওই দুই নেতার কাছে প্যান কার্ডও ছিলনা| তাহলে তাদের কাছে এই পরিমান টাকা এল কীভাবে| এমনকি তিনি এদিন শাসকদল তৃণমূলকে নিশানা করে অভিযোগ করেন, দলের শীর্ষনেতা মুকুল রায় ২০১৩ সালে আয়কর দফতরে হিসেব জমাতে দেখা যায়, দু’বছরের ‘ত্রিনেত্র’ নামে একটি সংস্থা শাসকদল তৃণমূলকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দান করেছে| যেকোন সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে টাকা দিতেই পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে ওই ‘ত্রিনেত্র’ নামে সংস্থা কোন হদিশ বা সত্যতা শাসকদল তৃণমূল দেখাতে পারেনি| এমনকি জগত্জননী নামে যে সংস্থা মুখ্যমন্ত্রী ছবি চার কোটি টাকা দিয়ে কিনেছিল, সেই সংস্থার কোন হদিশ আজও শাসকদল তৃণমূল দিতে পারেনি| এই ভুতুরে সংস্থাগুলো আসলে কালোবাজারির টাকা বলে তিনি অভিযোগ করেন|
দেশের উন্তি ও কালো বাজারি রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, দেশের সমস্ত অর্থনৈতিক লেনদেন যদি ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে করা যেতে পারে, তাহলেই দেশ থেকে কালোবাজারি উঠে যাবে| প্রধানমন্ত্রীর পাঁচশো ও একহাজার টাকা বাতিল করে দেশের কালোবাজারিদের ধাক্কা দিযেছেন| এতে সাধারণ মানুষ কয়েকদিনের জন্য সমস্যায় পড়লেও আগামীদিনে দেশ ও আমজনতার সুবিধাই হবে| আর যারা কালো কালো টাকা লুকিয়ে রেখেছেন, তাদের কষ্ট বাড়বে বলেই রাস্তায় নেমে চিত্কার করছেন| তিনি মুখ্যমন্ত্রীর টাকা ধার করে পুজোর মিষ্টি কেনার বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, মা জগদ্ধাত্রীকে হাতজোড় করে নমষ্কার করলেই আশির্বাদ পাওযা যায়| এজন্য ধার করে মিষ্টি কেনা প্রযোজন হয়না|
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে কালোবাজারি, সন্ত্রাসবাদীদের, হাওলা কারবারীদের ও জাল নোট কারকারীদের অসুবিধা হয়েছে| তাই তারা চিত্কার করছে| সাধারণ মানুষের কাছে কোটি কোটি টাকা নেই| তাদের কাছে রয়েছে তাদের কষ্টার্জিত টাকা| তাই সাময়িক কষ্ট হলেও সাধারণ মানুষ ধৈর্য্য রেখে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা ও টাকা পরিবর্তন করছেন| এ থেকেই প্রমাণ দেশের সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওই সিদ্ধান্তে খুশি ও মত দিযেছেন|