BRAKING NEWS

অসমকে বাঁচাতে হলে বাঙালি হিন্দুর বিকল্প নেই, মন্ত্রী হিমন্তবিশ্বের মন্তব্যে ঝড়

himanta-biswa-sharmaগুয়াহাটি, ০২ নভেম্বর, (হি.স.) : বিদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলেই ভারত সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে চায় বলে রাজ্যের মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা গতকাল তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। হিন্দুদের পক্ষে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু অকাট্য মন্তব্যও করেছিলেন তিনি। ওইসব মন্তব্যে অসমে বেজায় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বাগ্রে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ তাঁরই এককালের চোখের মণি হিমন্তবিশ্ব শৰ্মাকে দ্বিতীয় জিন্না বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হিমন্ত সংবিধানের শপথ খেয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। এখন তিনি সংবিধান-বিরোধী কথা বলছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের অবস্থানতো অবলা নববধূর মতো। হিমন্তবিশ্ব কখনও মুছলমানের রক্ত দেখেন, আবার কখনও হিন্দুর প্ৰতি অগাধ দরদ দেখান।’ বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র লিখে পাঠাবেন বলেও জানান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, হিমন্ত ও আজমল একই মুদ্ৰার এপিঠ ওপিঠ।
এদিকে, রাজ্যের প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী তথা কংগ্ৰেস নেতা নজরুল ইসলাম তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, আরএসএস-এর শেখানো পাঠই আওড়াচ্ছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। হিমন্তবিশ্বের এমন অত্যুৎসাহ দুৰ্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন নজরুল। তাঁর মতে, বিজেপি যে একটি সাম্প্ৰদায়িক দল তা মন্ত্রী শর্মার বক্তব্যেই স্পষ্ট। এর আর কোনও প্ৰমাণের দরকার নেই।
অসমে হিন্দু বাংলাদেশিদের পুনর্বাসন সম্পর্কে সরব হয়েছেন আলোচনাপন্থী আলফা-প্রধান অরবিন্দ রাজখোয়াও। তিনি বলেছেন, ধৰ্ম ও সম্প্ৰদায়ের ভিত্তিতে বিষয়টি দেখা উচিত নয়। আলফা সাম্প্ৰদায়িকতা বিরোধী। অসম ও অসমিয়ার পরিচয়ই মূল কথা। অসমিয়া জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতেই তাঁরা চান। বলেছেন আলফা সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া।
আরও একধাপ এগিয়ে সারা অসম মুসলিম ছাত্র সংস্থা মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে। এ-ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্টীকরণও চেয়েছে সংগঠন। হিমন্তবিশ্বকে মন্ত্রিসভা থেকে ছাটাই করে শীঘ্র তাঁকে গ্রেফতার করতে বলেছে মুসলিম ছাত্র সংগঠনটি।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মানব অধিকার সংগ্রাম সমিতি (মাস)। এক বিবৃতিতে মাস-এর সভাপতি কেশবচন্দ্র শহরিয়া অসমে হিন্দু শরণার্থীদের পুনর্বাসন দিলে অসমিয়া জাতি এবং অসমের ভবিষ্যত বিপদাপন্ন হবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কেবল বিদেশে নির্যাতিত কোনও নাগরিককে অন্য দেশে শরণার্থীর মর্যাদা দিয়ে পুনর্বাসন দেওয়া যুক্তিসংগত নয়।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল এক অনুষ্ঠানে এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে অসমিয়া জাতিকে বাঁচাতে হলে হিন্দু বাঙালির বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করার পাশাপাশি এ-ব্যাপারে বহু তথ্যাদি তোলে ধরেছিলেন রাজ্য সরকারের সেকেন্ড-ইন-চিফ, অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ভারতীয় আদমশুমারির তথ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন অসমে দুটি সেন্সাস রিপোর্টে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়েছে, অন্যদিকে হিন্দু জনসংখ্যা বহুগুণে কমেছে। আদমশুমারির প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি ইতিমধ্যে রাজ্যের ১১টি জেলায় অসমিয়ারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন এবং ২০২১ সালের মধ্যে আরও ছয়টি জেলায়ও তাঁরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবেন বলে তথ্য দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ২০৩১ সাল পর্যন্ত আরও ছয়টি জেলায় অসমিয়ারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবেন, আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মন্ত্রী হিমন্ত। তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কাদের হাতে অসমিয়ারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে এবং কাদের সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যত দিনগুলি তাঁরা কাটাবেন তা ভেবে দেখার সময় এসে গেছে। কাদের নিয়ে অসমকে রক্ষা করা যাবে তা আমাদের নির্ণয় করতেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *