নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ৩০ অক্টোবর৷৷ খোয়াই জেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত মন্দির সুভাষপার্ক কালীবাড়ী দীপাবলী উৎসবকে সামনে রেখে বিশেষ প্রভাব ফেলে জনমনে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম এই মন্দিরে ভারতবর্ষের হরিদ্বার কিংবা কাশী থেকে ১০৮ মহারাজজীগন উপস্থিত থেকে যজ্ঞাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন৷ দীপাবলীর দিন সাত-সকালে অবাল বৃদ্ধি বণিতা সকলে খোয়াই নদী থেকে গঙ্গা আহ্বান করে জল এনে শিব ঠাকুরকে স্নান করান৷ এরপরই শুরু হয় মহাযজ্ঞ৷ এই মহাযজ্ঞ উপভোগ করতে ছুটে আসেন অনেকেই৷ সন্ধ্যায় হয় আরতি৷ এই প্রথা দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসছে৷ এদিকে জনগনের অভিমত, সুভাষপার্ক স্থিল কালী মন্দিরে মা জাগ্রত রয়েছেন৷ এর সাক্ষী মা নিজেই৷ এই সময়ে ছন-বাঁশের ঘর আজ বিশাল অট্টালিকায় রূপান্তরিত হয়েছে৷ সুভাষপার্ক কালীবাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচিন্দ্রলাল সিং মহাশয় বর্তমানে এই মন্দিরের বিশাল জায়গাটিতে পশু হাসপাতালে তৈরী করবেন বলে স্থির করেছিলেন৷ এর পাশে থাকবে একটি আবগরি দপ্তর৷ তৎকালীন সময়ে সুভাষপার্ক এলাকার কিছু যুবক স্থানীয় বিবেক সংঘ ক্লাবের নামে রাতারাতি ছন বাঁশের একটি মন্দির স্থাপন করেন এই জায়গায়৷ তেলিয়ামুড়া থেকে মুর্ত্তি শিল্পী এনে মায়ের প্রতিমা তৈরী করানো হয় ৷ শুরু হয় পূজা পার্বন ৷ এই বিবেক সংঘ ক্লাবের উদ্যোগেই সুভাষপার্ক বাজারে নেতাজীর দেবী তৈরী করে সেখানে প্রতি বছর ২৩ শে জানুযায়ী নেতাজী জন্মজয়ন্তী পালন করা শুরু হয়৷
বর্তমানে সুভাষপার্ক কালীবাড়ী অপর একটি ক্লাবের তত্ত্বাবধানে চলে যাওয়ায় মুছে যায় বিবেক সংঘের নাম৷ তৎকালীন সময়ে সরকারের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে বিবেক সংঘ ক্লাবই বিশাল জায়গা দখল করে৷ যদিও পরে ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচিন্দ্রলাল সিংহ জনস্বার্থে তা মেনে নেন৷ সেই পশু চিকিৎসালয় পরবর্তী সময় অফিসটিলায় তৈরী হয়৷ যদি নতুন প্রজন্মের কাছে অনেক পুরনো ইতিহাস আজও অজানাই রয়ে গেছে৷ পুরনো স্মৃতি ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর ইতিহাস বিকৃতকারীরা৷ আজও বিবেক সংঘ ক্লাবের অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন সুভাষপার্ক এলালাতেই৷ অথচ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে কিংবা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্য খোঁজ খবর করা হয়না৷ অথচ ক ত কষ্টে তৈরী করা সুভাষপার্ক কালীবাড়ী৷ গ্রামে গ্রামে গিয়ে টাকার বিনিময়ে ধান চাল জোগার করে মাথায় করে আনতেন ক্লাব কর্মকর্তারা৷ কারন গ্রামবাসী নগদ টাকা দিতে পারতেন না৷ নেতাজীর জন্মজয়ন্তী পালন করতে গিয়ে ১০-২০ পয়সা চাঁদা তুলতে হতে৷ এরপরও সারাদিন অনুষ্ঠান হতো৷ বর্তমানে নেতাজীর পুর্ণাবয়ব মূর্ত্তি সুভার্ষপার্ক প্রাণকেন্দ্রে বসলেও মূর্ত্তির উপর নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা৷
অপরদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম মন্দিরের পূর্বতন মায়ের মূর্ত্তি কিন্তু আজ আর নেই৷ তা বিসর্জন হয়ে গেছে খোয়াই নদীর জলে৷ অনেক বিতর্কের মধ্যে নতুন মূর্ত্তি বসানো হয়েছে মন্দিরে৷ যদিও সবটাই কর্মকর্তাদের ব্যাপার৷ মায়ের পুরো আশীর্বাদ রয়েছে উনাদের উপর৷ বহু মানুষের মনষ্কামনা পূর্ণ হয়েছে মায়ের আশীর্বাদধন্য হয়েই৷ বহুবার চুরি হয়েছে মায়ের মন্দিরে৷ কিন্তু চোর নিজ এসেই সবকিছু আবার ফিরিয়েও দিয়ে গেছে৷ এমনও হয়েছে চোর চুরি করে মায়ের মন্দির থেকেই বের হতে পারেনি৷ এমন বহু ঘটনার সাক্ষী সুভাষপার্ক কালীবাড়ী৷ এবছর আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মায়ের পুর্জাচনা হয়েছে৷ স্বল্প পরিসরে মেলার প্রতিছবিও মন্দির সংলগ্ণ রাস্তার ধারে দেখতে পাওয়া যায়৷ তবে এই মেলা আরও বড় আকারের করা যায় কিনা সেবিষয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন খোয়াইবাসী৷ অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছর খোয়াই থানা, চাম্পাহাওড় থানা, সুভাষপার্ক আউটপোষ্ট, বাইজালবাড়ী আউটপোষ্ট সহ দুর্গানগর স্থিত ৫০ বছর পুরনো কালীবাড়িতেও জাকজমকভাবে শ্যামা পূজার আয়োজন করা হয়৷
2016-10-31

