অশান্ত কাশ্মীর, যুদ্ধ বিমানে ত্রিপুরা থেকে তিনশ জওয়ান ও গোলাবারুদ নিয়ে গেল সেনা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ আগষ্ট৷৷ ভারতীয় বায়ু সেনার যুদ্ধ বিমানের আগরতলা বিমানবন্দরে অবতরণ ঘিরে বুধবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে৷ কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর তিনশ জওয়ান, বারোটি যুদ্ধযান (ট্রাক), বিস্তর আগ্ণেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আগরতলা বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় বায়ু সেনার সি বি ৮০০৯ যুদ্ধ বিমানটি উড়ান দেয় পড়ন্ত বিকালে৷ জানা গিয়েছে জম্মু কাশ্মীরে যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য আগরতলা থেকে তিন কোম্পানী সিআরপিএফ জওয়ান ও যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক৷
সংবাদে প্রকাশ বুধবার দুপুর একটা নাগাদ ভারতীয় বায়ু সেনার সি বি-৮০০৯ নম্বরের বিমানটি আগরতলা বিমানবন্দরে অবতরণ করে৷ বিমানটি এদিনই আগরতলা থেকে শিলচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়৷ রাতে শিলচর থেকে বিমানটি পৌঁছবে জম্মু কাশ্মীরের শ্রীনগরে৷ আচমকা আগরতলা বিমানবন্দরে যুদ্ধ বিমানের অবতরনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বিমানবন্দর সহ গোটা এলাকায়৷
জুলাইয়ের ৮ তারিখ কাশ্মীরে সেনা বাহিনীর গুলিতে হিজবুল জঙ্গী গোষ্ঠীর কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর অশান্ত হয়ে উঠে গোটা উপত্যকা৷ প্রতিদিনই জঙ্গী ও জঙ্গী মনোভাবপন্ন কাশ্মীরিদের সঙ্গে সেনা বাহিনীর জওয়ানদের সংঘর্ষ চলতে থাকে৷ পেছন থেকে কাশ্মীরিদের অনবরত মদত দিয়ে চলছে পাকিস্তান৷ বুরহানের মৃত্যুকে শহীদ দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷ এরপর থেকেই ভূস্বর্গ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ প্রতিদিনেই কাশ্মীরে চলছে যুদ্ধ পরিস্থিতি৷ এমনকী পাকিস্তানের সঙ্গেও যুদ্ধের আশঙ্কা করছে সেনা বাহিনী৷ এই পরিস্থিতিতে জরুরীকালীন অবস্থায় সেনা ও অস্ত্র কাশ্মীরে মজুতের কাজ শুরু করে দিয়েছে সেনা বাহিনী৷ সেনা সূত্রে জানা যায়, কাশ্মীরের জন্যই সিআরপিএফ ও অস্ত্র নেওয়ার জন্য বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান উড়ে আসে আগরতলা বিমানবন্দরে৷ সি বি ৮০০৯ বিমানটিতেই ছয়টি ইঞ্জিন রয়েছে৷ বিমানে করে তিন কোম্পানী সিআরপিএফ, অস্ত্র, যুদ্ধে ব্যবহৃত গাড়ি ও গোলাবারুদ বোঝাই করে বিমানটি শিলচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়৷ নিরাপত্তার স্বার্থে আকাশপথে বাংলাদেশকে এড়িয়ে গিয়ে শিলচরে চলে যায় এই যুদ্ধ বিমানটি৷ শিলচর থেকে তিন ঘন্টার মধ্যেই বিমানটি শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করবে৷ সাধারণত এই সমস্ত যুদ্ধ বিমান কোন আঞ্চলিক বিমানবন্দরে বিশেষ প্রয়োজন না হলে অবতরণ করে না৷ এদিন আগরতলা বিমানবন্দর চত্বরে থাকা লোকজনের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়৷ বিমান অবতরণের সময় গোটা বিমানবন্দর চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আঁটোসাঁটো৷
এদিকে, কাশ্মীরে আশান্তির মদত দিচ্ছে পাকিস্তান৷ এই অভিযোগ বরাবরই করে আসছে দিল্লী৷ কাশ্মীরে ধৃত লস্কর জঙ্গী বাহদুর আলি ওরফে আবু সইফুল্লার দেওয়া চাঞ্চল্যকর তথ্যে প্রমাণিত হল, ভারতের দাবি সত্যি৷ লস্কর ই তৈবার সদস্য সইফুল্লাকে জেরা করে এনআইএ জানতে পেরেথে, ওয়াঘার ওপারে ট্রেনিং শেষেই সে কাশ্মীরে ঢোকে৷ তাকে সাহায্য করেছিল পাকিস্তান সেনাও৷ অন্যদিকে, কাশ্মীর অশান্তিতে পাক মদতের আরও তথ্য মিলেছে ধৃত জঙ্গী বাদদুর আলিকে জেরা করে৷ গোয়েন্দাদের জেরায় আলি জানিয়েছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩০ থেকে ৫০ জন ট্রেনিকে আনা হয়েছিল লস্কর ই তৈবার ক্যাম্পে৷ ভারতে রওনা হওয়ার আগে তার সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তান সেনার অফিসাররা৷ এর পর তিন পর্যায়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেয় লস্কর৷ আলি এও জানিয়েছে, যারা তাকে ট্রেনিং দিয়েছে তারা উচ্চ শিক্ষিত৷ হিজবুল মাজাহিদিনের ‘পোস্টারবয়’ বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে গত এক মাস ধরে অশান্ত কাশ্মীর৷ দফায় দফায় সেনা-সাধারণ মানুষ সংঘর্ষ হচ্ছে৷ মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের৷ এর পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় সরকার উপত্যকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে সেনা ও আধা সেনা জওয়ানদের ভূস্বর্গে পাঠাচ্ছে বলে সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *