নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ জুলাই৷৷ সপ্তম বেতন কমিশন নিয়ে রাজ্য সরকারের সুর নরম হলেও রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া ৩১ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার উচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্বেও সুপ্রিম কোর্টে এই নির্দেশের চ্যালেঞ্জ জানাবে রাজ্য সরকার৷ ফলে, একদিকে শিক্ষক কর্মচারী মহল সপ্তম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে শীঘ্রই সুযোগ সুবিধা পেতে চললেও ডিএ নিয়ে হতাশ হওয়ারই সম্ভাবনা প্রবল৷ মঙ্গলবার মহাকরণে অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া একত্রিশ শতাংশ প্রদানের বিষয়ে উচ্চ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে রাজ্য সরকার৷ এই বিষয়ে সোমবার এডভোকেট জেনারেলের ক্লিয়ারেন্স মিলেছে৷ গত ২৮ এপ্রিল উচ্চ আদালতের বিচারপতি সুভাশিষ তলাপাত্রের সিঙ্গেল বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে কর্মচারীদের বকেয়া ৩১ শতাংশ ডিএ প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ এই নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করার কোন সুযোগ নেই বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ কারণ, উচ্চ আদালতের মুখ্য বিচারপতি যাঁদের নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করবেন তাঁদের মধ্যে বিচারপতি এস সি দাস এবং বিচারপতি ইউ বি সাহা এই মামলায় পক্ষভুক্ত৷ কারণ, একসময় উঁনারা আইন সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ ফলে, উচ্চ আদালতের ডি এ নিয়ে নির্দেশ কার্যকর করলে তাঁরাও বকেয়া ডিএ পাবেন৷ ফলে, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন রাস্তা খোলা নেই বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন৷
এদিকে, সপ্তম বেতন কমিশন নিয়ে এদিন অনেকটাই সুর নরম শোনা গিয়েছে অর্থমন্ত্রীর৷ তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকরের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা সংশোধন করতে চলেছে৷ বিভিন্ন দিক দিয়ে চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার পুনরায় সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকরের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে৷ ফলে, দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকারকেও চিন্তা ভাবনা করতে হবে৷ এদিন তিনি স্পষ্ট জানান, সপ্তম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে এরাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য রাজ্য সরকারকেও কিছু একটা করতে হবে৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী তৎকালীন সময়ে রাজ্য সরকারের ক্ষমতায় যতটা সম্ভব হয়েছে ততটা রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য করেছে৷ ফলে, এ যাত্রাতেও সপ্তম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারকেও চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে৷
তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বকেয়া ডিএ প্রদান করা এখন রাজ্য সরকারের পক্ষে কোনও মতেই সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানান অর্থমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বকেয়া মিটাতে এবছরই প্রয়োজন অতিরিক্ত প্রয়োজন ৬৭২ কোটি টাকা৷ বাজেটে এই বিরাট অংকের অর্থ ধরা নেই৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে রাজ্য সরকারকে ঋণ নিতে হবে৷ তা বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও মতেই সম্ভব নয়৷ এছাড়াও সপ্তম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন রয়েছে৷ এদিন তিনি জানান, রাজ্য সরকার আন্তরিক ভাবে চাইছে রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিতে৷ কিন্তু, আর্থিক অনটনের কারণে এই মুহুর্তে কোনও মতেই তা সম্ভব নয়৷
এদিন তিনি উচ্চ আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন ১৯৯৮ সালে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বলা হয়েছে, শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া মিটানো নির্ভর করবে অর্থের যোগানের উপর৷ পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে আরও স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে, রাজ্য সরকার ক্ষমতা অনুযায়ী ডিএ প্রদান করবে৷ এই বিষয়ে রাজ্যপালের স্বাক্ষর করা নির্দেশনামাও রয়েছে৷ কিন্তু, উচ্চ আদালতে রাজ্য সরকারের সামর্থের বিষয়টি নজরে আসেনি৷ ফলে, খুব শীঘ্রই ডিএ নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে রাজ্য সরকার৷
2016-07-20