BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় আঠার সালে পরিবর্তন নিশ্চিত করতে ময়দানে মুকুল, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদ, নেতারা একযোগে ঝাপিয়ে পড়বেন রাজ্যে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জুন ৷৷ রাজ্যে পরিবর্তনের আওয়াজ তুলে দলীয় কর্মীদের আবারও আজ উজ্জীবিত করলেন

বৃহস্পতিবার আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়৷ ছবি নিজস্ব৷
বৃহস্পতিবার আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়৷ ছবি নিজস্ব৷

মমতা ব্যানার্জির প্রেরিত সেনাপতি মুকুল রায়৷ বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্য কার্যালয়ের উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি জানান, আঠার সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের বিধায়ক, সাংসদ ও নেতারা ত্রিপুরায় ঝাপিয়ে পড়বেন৷
এদিকে, কংগ্রেসে থেকে যারা সিপিএমের সাথে নকল যুদ্ধ করেছেন তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক হিসেবে কতটা আসল লড়াই করবেন সেই প্রশ্ণই উঠেছে৷ বৃহস্পতিবার আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রকাশ্য সমাবেশে বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন জানালেন, এতদিন সিপিএমের বিরুদ্ধে নকল যুদ্ধ করেছি৷ দিল্লি আমাদের তাঁতিয়েছে৷ এজন্য সিপিএমের বিরুদ্ধে নকল লড়াই করেছি৷ তিনি জোর গলায় বলেন, এবার হবে আসল লড়াই৷ নকল যুদ্ধ নয়, এবার থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে আসল যুদ্ধে তৃণমূলের সৈনিক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরবেন বলে বিশ্ববন্ধুবাবু দাবি করেন৷ তাতে, নতুন প্রশ্ণ উঠেছে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তীর বক্তব্যে৷ তিনি স্পষ্ট বলেন, কংগ্রেসে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত গোষ্ঠীপতি হওয়া যায়, কিন্তু দলনেতা হওয়া কঠিন৷ তাতে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হবে সে বার্তা দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, অতীতে অনেক ভুল হয়েছে তা স্বীকার করে তিনি বলেন, যা ফেলে এসেছি তা অতীত৷ সেই অতীতকে ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে৷ পরিবর্তন এত সহজে মিলবে না, এই বিশ্বাসে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, এতদিনের একটি পার্টিকে উপরে নিতে ত্যাগের দরকার পড়বে৷ এই রাজ্যের মানুষকে ত্যাগ করতে শিখতে হবে৷ ইতি উতি তাকালে পরিবর্তন হবে না৷ ময়দানে ঝাপাতে হবে৷ এর জন্য তিনি প্রতিটি বুথ স্তরে পার্টিকে শক্তিশালী করে তোলার ডাক দিয়েছেন৷ পাশাপাশি এরাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি চলছে বলে দলীয় কর্মী সমর্থক এবং নেতৃবৃন্দদের সতর্ক করেছেন৷
তবে, কংগ্রেস ছেড়ে যে ছয় বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁদের হাত ধরে এরাজ্যে পরিবর্তন কতটা সম্ভব এনিয়ে বড় প্রশ্ণ তুলেছেন তৃণমূল কর্মী ইদ্রিস আলি৷ তাঁর মতে, যারা পরিবর্তনের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দেবেন তাদের পরিবর্তিত হতে হবে৷ দীর্ঘদিনের কংগ্রেসের সংসৃকতি মুছে ফেলতে হবে৷ তবেই এরাজ্যে পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন৷
অবশ্য প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ দৃঢ়তার সাথে জানান, ছয় মাসের মধ্যে এরাজ্যে এমন বাতাবরণ তৈরি করবেন যাতে সিপিএমে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যাবে৷ তিনি মনে করেন, সত্যিকারের কমিউনিস্ট যারা তারাই তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে এরাজ্যে পরিবর্তনে মদত দেবেন৷ তবে, পরিবর্তনের পথে বাধাও রয়েছে, সেকথাও উল্লেখ করেছেন তিনি৷ সুদীপবাবু নাম না করে সিপিএম এবং বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূলকে ভাঙতে চাইছে৷ কিন্তু কোন কিছুতেই পরিবর্তন আটকানো সম্ভব নয় বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷
এদিন এই সমাবেশে উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ এবং কর্মী সমর্থকদের আগামী ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের স্বপ্ণ দেখিয়ে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়৷ তিনি দলের সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এক ইঞ্চি জমিও ছাড়লে চলবে না৷ এর জন্য বুথ চলো অভিযানের ডাক দিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি আগামী ৯ আগস্ট দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রকাশ্য সমাবেশের মাধ্যমেই রাজ্যে পরিবর্তনের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানান মুকুলবাবু৷ কংগ্রেস-সিপিএমকে এক পাল্লায় রেখে তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে দিল্লির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে এরাজ্য৷ কংগ্রেসে থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলন সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরেই তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন৷ মুকুলবাবুর দাবি, শতাব্দী প্রাচীন জাতীয় দল কংগ্রেস দেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে৷ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সিপিআই-সিপিএম অবলুপ্তির পথে চলে যাবে৷ তবে, এরাজ্যে পরিবর্তনের পথ আটকাতে সিপিএম নানা কৌশল নেবে৷ এবিষয়ে মুকুলবাবু দলীয় কর্মী সমর্থক এবং নেতৃবৃন্দদের সতর্ক করে বলেন, বিভাজনের রাজনীতি হবে এরাজ্যে৷ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে৷ তবে, পৃথক রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস মেনে নেবে না৷ মুকুলবাবুর দাবি, পাহাড়ে যে উন্নয়ন হবে তাতে রাজ্যভাগ করার প্রয়োজন পড়বে না৷ এদিন মুকুলবাবু রাজ্যের তৃণমূলীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার সমস্ত তৃণমূল নেতৃবৃন্দ এরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপাবেন৷ শুধু তৃণমূল নেত্রী নন, দলের সমস্ত এমপি, এমএলএরা বিধানসভা নির্বাচনে সময় দেবেন৷ মুকুলবাবু স্পষ্ট জানান, ত্রিপুরার সব আসনে মমতাই প্রার্থী হবেন৷ যেমনটা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে৷ তাতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ত্রিপুরায় ৬০টি বিধানসভা আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী হলেও তাঁদের একটাই মুখ সেটা হবেন মমতা ব্যানার্জি৷ এদিন তিনি আরো জানিয়েছেন, রাজ্যে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে ৯ আগস্ট আগরতলায় বিবেকানন্দ ময়দানে সমাবেশের পর ধর্মনগর এবং উদয়পুরে মমতা ব্যানার্জির আরো দুটি সভা করা হবে৷ এবিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, রাজ্যে দলের কর্মী সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে দলনেত্রীকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরো দুটি সভার জন্য নিয়ে আসবেন৷
এদিকে, আগামী ৯ আগস্ট তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রকাশ্য সমাবেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুদীপ রায় বর্মণকে৷ এদিন, মুকুলবাবু ঐ প্রকাশ্য সমাবেশের আহ্বায়ক হিসেবে সুদীপ বর্মণের নাম প্রস্তাব করার পাশাপাশি একটি কমিটিও গঠন করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *