আম্বেদকর মাত্র দশ বছরের জন্য সংরক্ষণ চালুর কথা বলেছিলেন, সংরক্ষণ চালু রাখা নিয়ে প্রশ্ণ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ জুন৷৷ আমাদের দেশে সংরক্ষণ ব্যাবস্থা চালু রাখার আদৌ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না সেই

শুক্রবার আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ‘অসহিষ্ণুতা ও দলীত নিপিড়নের বিরুদ্ধে আম্বেদকর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি নিজস্ব৷
শুক্রবার আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ‘অসহিষ্ণুতা ও দলীত নিপিড়নের বিরুদ্ধে আম্বেদকর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি নিজস্ব৷

বিষয়ে বড় প্রশ্ণ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ শুধু তাই নয়, সংরক্ষণের সুযোগ ক’জন পাচ্ছেন সেই বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি৷ শুক্রবার ‘অসহিষ্ণুতা ও দলিত নিপিড়নের বিরুদ্ধে আম্বেদকর’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে ডঃ বি আর আম্বেদকরের ভাবনা চিন্তার বিষয়গুলি তুলে ধরেন৷ তাতে তিনি বলেন, আম্বেদকর সংরক্ষণ দশ বছরের জন্য চালু করা হোক তা বলেছিলেন৷ কিন্তু, আমাদের দেশে স্বাধীনতার ৬৯ বছর পরও একই কায়দায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা বলবৎ আছে৷ যারা এর সুযোগ নিচ্ছে তারা ভাবছেন এটাই তাদের জীবনের শেষ প্রাপ্তি৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দাবি করেন, এই ভাবনা ভুল৷
এদিন তিনি আম্বেদকরের চিন্তা ধারার প্রতি সহমত পোষণ করে বলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকর দীর্ঘ মেয়াদি সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরোধীতা করেছিলেন৷ পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষদের আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে সাময়িক সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছিলেন৷ তাঁর যুক্তি ছিল মূল ব্যবস্থার পরিবর্তন হতে হবে৷ আর পরিবর্তন মানে তিনি সাম্যবাদের কথা বলেছিলেন৷ তিনি চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক সাম্য৷ কিন্তু, এদিন মুখ্যমন্ত্রী এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুযোগ কতজন নিতে পারছেন সেই প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তিনি স্পষ্ট বলেন, সংরক্ষণ রয়েছে তাতেই চলে যাবে, তাহলে অর্থনৈতিক সাম্যবাদের সমাধান কোথায় হচ্ছে৷ তার চেয়ে বড় কথা এই সংরক্ষণের সুযোগই বা কতজন নিতে পারছেন৷ তিনি বলেন, দলিত অংশের মধ্যে যাদের একটু বিত্ত রয়েছে তারাই সবচেয়ে বেশী সুবিধা নিতে পারছে সংরক্ষণের৷ অথচ দলিতদের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একেবারেই পেছনে পড়া তারা এই সুযোগ নিতে পারছেন না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই জায়গায় আম্বেদকর তাঁর জীবদ্দশায় বুঝতে পেরেছিলেন যদি মূল জায়গায় আঘাত না দেওয়া যায় তাহলে ভুল হবে৷ তিনি বারবার বলেছেন সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে মূল ধরে চুপ করে বসে থাকবেন না৷ অর্থনৈতিক অসাম্য দূর করার জন্য এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধ ভাবে লড়তে হবে৷
তাতে, এদিনের আলোচনা সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূল দর্শন তুলে ধরে দেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থার কড়া বিরোধীতা করেন৷ শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক স্বার্থেই কি সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ণও উঠতে শুরু করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেকটাই ইঙ্গিত মিলেছে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা দেশের একাংশের স্বার্থসিদ্ধি করেছে৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী অসহিষ্ণুতার প্রশ্ণে আরএসএস, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এর সাথে বিজেপির কড়া সমালোচনায় মুখর হন৷ দেশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে৷ এই দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অসহিষ্ণুতা চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে না৷ অসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের প্রধান বিরোধী৷ বাবাসাহেব আম্বেদকর স্বাধীনতা এবং তার সাথে গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন৷ স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র দুটিই প্রায় সমার্থক৷ মুখ্যমন্ত্রী বাবাসাহেব আম্বেদকরের যুক্তি উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র অর্থহীন৷ তবে, তিনি অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই যে গণতন্ত্র আজকে আমাদের দেশে অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে তা কিছু মানুষের হাতে পড়ে আক্রান্ত এবং বিধবস্ত৷ তিনি জোর গলায় বলেন, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক৷ সংবিধানে বলা হয়েছে গণতন্ত্র বজায় রাখতে হবে৷ রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকে না৷ ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন৷ এজন্য তিনি দাবি করেন, কোন রাজনৈতিক দল ধর্মের ভিত্তিতে হতে পারবে না৷ এমনকি ভোটের সময় ধর্মের নামে সুড়সুরি দিয়ে ভোট চাইতেও পারবে না৷ তা বেআইনী৷ মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি ধর্মান্তরিত করাও দেশে বেআইনী৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, ঘর ওয়াপসির নামে বলপূর্বক ধর্মান্তকরণ হচ্ছে৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা বেআইনী বলে তিনি মন্তব্য করেছেন৷ তবে, এই অসহিষ্ণুতা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *