BRAKING NEWS

পাশের হার কমল দ্বাদশেও, গণিতে গণহারে ফেল, কারিগরি শিক্ষার সুযোগ প্রশ্ণের মুখে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জুন৷৷ রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রের দৈন্যদশার চিত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে আরও মারাত্মক

সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি মিহির কান্তি দেব৷
সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি মিহির কান্তি দেব৷

আকারে ফুটে উঠেছে৷ এবছর পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিকে পাশের হার কমার পর উচ্চ মাধ্যমিকেও পাশের হার কমেছে৷ ২১ হাজার ১৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার ৮৭৮ জন পাশ করেছে৷ পাশের হার ৭৫.১১ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৮১.০৭ শতাংশ৷ উদ্বেগের বিষয় এখানেই শেষ নয়, কারিগরি ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা নিতে যারা প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের অনেকেরই স্বপ্ণ চুরমার হয়ে যাবে৷ বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কার্য্যালয়ে দ্বাদশের ফলাফল ঘোষণার পর যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী অংকে পাশ করেছে৷ ফলে ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে ছাড়পত্র পাবেনা৷ যেহেতু কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদন্ডে অংকে পাশ হওয়া বাধ্যতামূলক৷ অবশ্য তাদের কাছে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ কিন্তু সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষাতেও অংকে পাশ করতে কতটা সক্ষম হবে তারা এনিয়ে প্রশ্ণ রয়েই যাচ্ছে৷ এদিন দ্বাদশের ফলাফল ঘোষণা করে পর্ষদ সভাপতি জানান, বিষয় ভিত্তিক ফলাফলের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিষয়ে ৮১.৪১ শতাংশ, কলা বিভাগে ৭৪.০৪ শতাংশ এবং বাণিজ্য বিভাগে ৭১.৮৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই এডিসি এলাকাতেও দ্বাদশে কমেছে পাশের হার৷ এডিসি এলাকাতে এবছর ৫৮.৪১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে৷ গত বছর এই সংখ্যাটি ৬৬.৪০ শতাংশ৷ পাশের হার ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ার পিছনে পর্ষদ সভাপতি ছাত্রছাত্রীরা এখন পড়াশুনা করে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত এবছরের উচচতর মাধ্যমিক পরীক্ষার কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ফলাফল আজ সকালে পর্ষদের কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়েছে৷ পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির কান্তি দেব এই দুটি বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন৷ এর আগে গত ২১ মে উচ্চতর মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল৷ এবছরের উচচতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় সব বিভাগ মিলিয়ে পার হার ৭৫.১১ শতাংশ৷ পরীক্ষার দিয়েছিল ২১,১৪১ জন৷ পাশ করেছে ১৫,৮৭৮ জন৷ এই পরীক্ষায় ছেলেমেয়েদের পাশের হার ৭৪.৯৮ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ১১,২৯২ জন, পাশ করেছে ৮৪৬৭ জন৷ মেয়েদের পাশের হার ৭৭.৬৬ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ৯৮৪৯ জন, পাশ করেছে ৭৬৪৯ জন৷ উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার তিনটি বিভাগের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের পাশের হার ৮১.৪১ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৩১৯ জন, পাশ করেছে ২৭০২ জন৷ এই বিভাগে কন্টিনিউইং পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৬৪.১৪ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ১৯৮ জন পাশ করেছে ১২৭ জন৷
কলা বিভাগে পাশের হার ৭৪.০৪ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ১৬,৯৭৭ জন, পাশ করেছে ১২,৫৬৯ জন৷ এই বিভাগে কন্টিনিউইং পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেছিল ২৫৫৮ জন, পাশ করেছে ৯৭৬ জন৷ পাশের হার ৩৮.১৫ শতাংশ৷ বাণিজ্য বিভাগে পাশের হার ৭১.৮৩ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ৮৪৫ জন,পাশ করেছে ৬০৭ জন৷ এই বিভাগে কন্টিনিউইং পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল ১৩৬ জন, প াশ করেছে ৬৮ জন৷ পাশের হার ৫০ শতাংশ৷ উল্লেখ্য, নিয়মিত কন্টিনিউইং এক্সটারন্যাল ইত্যাদি মিলিয়ে এবছর ২৫,২৪০ জন পরীক্ষা দিয়েছিল পাশ করেছে ১৭,৭৯৬ জন৷
অন্যদিকে, এডিসি এলাকায় এবছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনটি বিভাগে পাশের হার ৫৮.৪৭ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২৯০৯ জন, পাশ করেছে ১৭০১ জন৷ এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিল ৭১ জন, পাশ করেছে ৪১ জন৷ পাশের হার ৫৭.৭৫ শতাংশ৷ কলা বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিল ২৮৩০ জন, পাশ করেছে ১৬৫৬ জন৷ পাশের হার ৫৮.৫২ শতাংশ৷ বাণিজ্য বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিল ৮ জন, পাশ করেছে ৪ জন৷ পাশের হার ৫০ শতাংশ৷
উল্লেখ্য, এবছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনটি বিভাগে উপজাতি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের পাশের হার ৫৯.৯৭ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ২৬৭৮ জন, পাশ করেছে ১৬০৬ জন৷ মেয়েদের পাশের হার ৫৮.৬৭ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২১৯৭ জন, পাশ করেছে ১২৮৯ জন৷
তপশিলি জাতির পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনটি বিভাগে ছেলেদের পাশের হার ৭৫.৮৫ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২৩৮৫ জন, পাশ করেছে ১৮০৯ জন৷ মেয়েদের পাশের হার ৮১.০৬ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২০৩৮ জন, পাশ করেছে ১৬৫২ জন৷
এবছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের ৩৫৯টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা ৫৫টি সেন্টার ও ৬৮টি ভেনুতে পরীক্ষা দিয়েছিল৷ এর মধ্যে ২০টি বিদ্যালয় ১০০ শতাংশ পাশ করেছে৷ রাজ্যের ৮টি জেলার মধ্যে পাশের হারে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা৷ পাশের হার ৭৭.৫০ শতাংশ৷ এরপরেই ঊনকোটি জেলার স্থান৷ পাশের হার ৭৫.২৩ শতাংশ৷ তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ত্রিপুরা জেলা৷ পাশের হ ার ৭৩.৩৯ শতাংশ৷ অন্যান্য জেলাগুলির মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৭১.৯৪ শতাংশ, সিপাহিজলা জেলায় ৭০.৯০ শতাংশ, গোমতী জেলায় ৬৭.৭৯ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ৬৫.১৭ শতাংশ ও ধলাই জেলায় পাশের হার ৫৭.৫১ শতাংশ৷ মাদ্রাসা ফাজিল (এইচএসপ্লাস টু) আর্টস পরীক্ষায় ১২ জনের মধ্যে পাশ করেছে ১১ জন৷ মাদ্রাসা ফাজিল (এইচএসপ্লাস টু) থিওলজি পরীক্ষায় ১১ জনের মধ্য সবাই পাশ করেছে৷
আজকের সাংবাদিক সম্মেলন পর্ষদ সভাপতি সাংবাদিকদের জানান, এবছরের উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা সাপ্লিম্যান্টারি পেয়েছে ফলাফল প্রকাশের ৬০ দিনের মধ্যে তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে৷ এর জন্য পরীক্ষার্থীদের আগামী ১৬ জুনের মধ্যে নিজেদের সুকলে ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে৷ সুকলগুলি থেকে আগামী ২০ জুনের মধ্যে পর্ষদের অফিসে পূরণ করা ফরম জমা দিতে হবে৷ রাজ্যের ৮টি জেলার ৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *